শিরোনাম :
Logo ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার Logo বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সন্দেহে ভারতে আটক ৪৪৮ জন Logo ফ্রান্সে ভয়াবহ দাবানল, আহত শতাধিক মানুষ Logo জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা Logo বীরগঞ্জে দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়ম, ৬০ হাজার টাকা জরিমানা Logo দিনমজুরি করেও স্বপ্ন দেখেছে আইনজীবী হওয়ার, পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলেও পড়ালেখার ভবিষ্যৎ টাকার অভাবে অনিশ্চিৎ Logo কুবিতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনের দায়িত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাকর্মীরা! Logo মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা Logo সুপারস্টার ডি এ তায়েব অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী” শিশু শিল্পী টুনটুনির জন্মদিন উদযাপন Logo রাবিতে ডাইনিং সংকটসহ ৫ দফা দাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

দিনমজুরি করেও স্বপ্ন দেখেছে আইনজীবী হওয়ার, পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলেও পড়ালেখার ভবিষ্যৎ টাকার অভাবে অনিশ্চিৎ

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৯:১১ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
  • ৭১১ বার পড়া হয়েছে

দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের ধুলোট গ্রামের অদম্য মেধাবী তুষার চন্দ্র রায় হাঁড় কাঁপানো দারিদ্র্য, পিতার অকাল মৃত্যু আর জীবনযুদ্ধে প্রতিদিনের লড়াই সবকিছু পেছনে ফেলে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে আজও লড়ে যাচ্ছে। অভাব তার প্রতিদিনের সঙ্গী, কিন্তু স্বপ্নে ছেদ পড়েনি একটুও। চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশের পাঁচটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছে এই তরুণ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ৪৩তম, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২৫ তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪০ তম এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ১১৫৪ তম স্থান অর্জন করেছে সে।

তুষারের মা সুমিত্রা বালা রায় বলেন, বাবা উপেন্দ্র নাথ রায় যখন মারা যায় তখন তুষার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তারপর থেকে পরিবারের হাল ধরেছেন তিনি নিজেই। দুই সন্তানকে নিয়ে দিনমজুরের কাজ করেই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে লড়ছেন। ছোট ছেলে এবার ৮ম শ্রেনীতে পড়ে। অভাবের সংসারে হাল ধরার জন্য একসময় সেই মাকে সাহায্য করতে কিশোর তুষারকেও নেমে পড়তে হয়েছে মাঠে দিন মজুরির কাজে। কিন্তু তার চোখে ছিল একটি স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা।

তুষার চন্দ্র রায় ০১৭৫০২৭৫১৯১ মুঠো ফোনে জানায়, সে সনকা দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাশ করার পর বীরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনাই প্রায় ছেড়ে দিতে বসেছিলাম। যেখানে খাবার জুটত না, সে খানে পড়ালেখার খরচ কোথা থেকে আসবে। ঠিক তখনই আমার জীবনে আশীর্বাদের মতো আসেন বীরগঞ্জের ভিক্টোরি প্লাস বিশ্ববিদ্যালয় ও নার্সিং ভর্তি কোচিং এর পরিচালক সোহেল রানা। তিনি শুধু প্রেরণাই দেননি, আমার পড়ালেখার দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বাড়িতে থাকার জায়গা বলতে শুধু আছে বাঁশের বেড়ার একটি ছোট্ট ঘর। সেই কুঁড়েঘর থেকেই তুষার স্বপ্ন দেখেছে আইনজীবী হওয়ার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তার উচ্চশিক্ষার পথ শুরুটা যতটা গর্বের, বাকি পথটা ঠিক ততটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ভর্তির খরচ কোনমতে জোগাড় হলেও সামনের দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের খরচ বহন করা তার পরিবারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

ভিক্টোরি প্লাস কোচিং এর পরিচালক সোহেল রানা বলেন, তুষার একজন অদম্য মেধাবী, সে আমাদের বীরগঞ্জের গর্ব, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমি বীরগঞ্জ উপজেলার মেধাবীদের নিয়ে কাজ করছি। এমন প্রতিভাবানরা একটু সুযোগ পেলেই বিশ্ব জয় করতে পারে। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ, আসুন তুষারের পাশে দাঁড়াই। তুষার থেমে গেলে সেটি হবে আমাদের সবার ব্যর্থতা। একজন অদম্য মেধাবী তরুণের স্বপ্ন যেন শুধুমাত্র অভাবের কারণে থেমে না যায়-এটাই আজকের দাবি। দেশপ্রেমিক, শিক্ষানুরাগী, মানবিক এবং সামর্থ্যবান সকলের প্রতি আহ্বান তুষারের পাশে দাঁড়ানোর।

পাল্টাপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান তহিদুল ইসলাম বলেন, তুষারের মতো ছেলেরা শুধু আমাদের নয় পুরো উপজেলার গর্ব। তার মেধা ও নিষ্ঠা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা, আমি ব্যক্তিগত ভাবে তার পাশে থাকার চেষ্টা করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন, তুষারের মতো মেধাবী শিক্ষার্থীরা আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ। প্রতিকূল পরিবেশেও সে যেভাবে সংগ্রাম করে দেশের শীর্ষ বিশ্ব বিদ্যালয় গুলোতে চান্স পেয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তুষারের বিষয়ে ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি এবং খোঁজ নিচ্ছি কীভাবে তাকে সহযোগিতা করা যায়। আমি ব্যক্তি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করতে চাই, তার পড়ালেখা যেন টাকার জন্য থেমে না যায়, সেই চেষ্টা করবো।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

দিনমজুরি করেও স্বপ্ন দেখেছে আইনজীবী হওয়ার, পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলেও পড়ালেখার ভবিষ্যৎ টাকার অভাবে অনিশ্চিৎ

আপডেট সময় : ০৮:৪৯:১১ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের ধুলোট গ্রামের অদম্য মেধাবী তুষার চন্দ্র রায় হাঁড় কাঁপানো দারিদ্র্য, পিতার অকাল মৃত্যু আর জীবনযুদ্ধে প্রতিদিনের লড়াই সবকিছু পেছনে ফেলে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে আজও লড়ে যাচ্ছে। অভাব তার প্রতিদিনের সঙ্গী, কিন্তু স্বপ্নে ছেদ পড়েনি একটুও। চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশের পাঁচটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছে এই তরুণ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ৪৩তম, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২৫ তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪০ তম এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ১১৫৪ তম স্থান অর্জন করেছে সে।

তুষারের মা সুমিত্রা বালা রায় বলেন, বাবা উপেন্দ্র নাথ রায় যখন মারা যায় তখন তুষার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তারপর থেকে পরিবারের হাল ধরেছেন তিনি নিজেই। দুই সন্তানকে নিয়ে দিনমজুরের কাজ করেই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে লড়ছেন। ছোট ছেলে এবার ৮ম শ্রেনীতে পড়ে। অভাবের সংসারে হাল ধরার জন্য একসময় সেই মাকে সাহায্য করতে কিশোর তুষারকেও নেমে পড়তে হয়েছে মাঠে দিন মজুরির কাজে। কিন্তু তার চোখে ছিল একটি স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা।

তুষার চন্দ্র রায় ০১৭৫০২৭৫১৯১ মুঠো ফোনে জানায়, সে সনকা দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাশ করার পর বীরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনাই প্রায় ছেড়ে দিতে বসেছিলাম। যেখানে খাবার জুটত না, সে খানে পড়ালেখার খরচ কোথা থেকে আসবে। ঠিক তখনই আমার জীবনে আশীর্বাদের মতো আসেন বীরগঞ্জের ভিক্টোরি প্লাস বিশ্ববিদ্যালয় ও নার্সিং ভর্তি কোচিং এর পরিচালক সোহেল রানা। তিনি শুধু প্রেরণাই দেননি, আমার পড়ালেখার দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বাড়িতে থাকার জায়গা বলতে শুধু আছে বাঁশের বেড়ার একটি ছোট্ট ঘর। সেই কুঁড়েঘর থেকেই তুষার স্বপ্ন দেখেছে আইনজীবী হওয়ার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তার উচ্চশিক্ষার পথ শুরুটা যতটা গর্বের, বাকি পথটা ঠিক ততটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ভর্তির খরচ কোনমতে জোগাড় হলেও সামনের দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের খরচ বহন করা তার পরিবারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

ভিক্টোরি প্লাস কোচিং এর পরিচালক সোহেল রানা বলেন, তুষার একজন অদম্য মেধাবী, সে আমাদের বীরগঞ্জের গর্ব, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমি বীরগঞ্জ উপজেলার মেধাবীদের নিয়ে কাজ করছি। এমন প্রতিভাবানরা একটু সুযোগ পেলেই বিশ্ব জয় করতে পারে। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ, আসুন তুষারের পাশে দাঁড়াই। তুষার থেমে গেলে সেটি হবে আমাদের সবার ব্যর্থতা। একজন অদম্য মেধাবী তরুণের স্বপ্ন যেন শুধুমাত্র অভাবের কারণে থেমে না যায়-এটাই আজকের দাবি। দেশপ্রেমিক, শিক্ষানুরাগী, মানবিক এবং সামর্থ্যবান সকলের প্রতি আহ্বান তুষারের পাশে দাঁড়ানোর।

পাল্টাপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান তহিদুল ইসলাম বলেন, তুষারের মতো ছেলেরা শুধু আমাদের নয় পুরো উপজেলার গর্ব। তার মেধা ও নিষ্ঠা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা, আমি ব্যক্তিগত ভাবে তার পাশে থাকার চেষ্টা করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন, তুষারের মতো মেধাবী শিক্ষার্থীরা আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ। প্রতিকূল পরিবেশেও সে যেভাবে সংগ্রাম করে দেশের শীর্ষ বিশ্ব বিদ্যালয় গুলোতে চান্স পেয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তুষারের বিষয়ে ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি এবং খোঁজ নিচ্ছি কীভাবে তাকে সহযোগিতা করা যায়। আমি ব্যক্তি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করতে চাই, তার পড়ালেখা যেন টাকার জন্য থেমে না যায়, সেই চেষ্টা করবো।