নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলার আধ্যাত্মিক ইতিহাসে যেসব নাম মহিমাময় হয়ে চিরকাল আলো ছড়াবে, হযরত শাহ সুফি সৈয়দ আবুল ওলা (রহ.) তাঁদের অন্যতম। তিনি শুধু একজন পীর বা সূফি ছিলেন না, ছিলেন আত্মিক জ্ঞানের এক উজ্জ্বল দীপশিখা—যাঁর আলো আজও বহু হৃদয়ে নীরবে দীপ্তি ছড়ায়।
তিনি বিশ্বাস করতেন, জীবনের প্রকৃত সাফল্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সঃ)-এর প্রতি আত্মসমর্পণে এবং আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার মধ্যেই নিহিত।এই আধ্যাত্মিক সাধক, যিনি ইসলামি দর্শন, মানবিক মূল্যবোধ ও আত্মিক উন্নতির পথে মানুষের জন্য আদর্শ ছিলেন। ।
তিনি মানুষের আত্মিক উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন। তাঁর উপদেশ ছিল সহজ, কিন্তু গভীর।তাঁর মুখনিঃসৃত বিভিন্ন উক্তি মানুষের অন্তরে অনুপ্রেরণা জাগাতো, যেমন— “মনি মুক্তার কদর বাদশা জানে, আর জানে তার জাওহারী; জানে বুলবুল ফুলের কদর, আর জানে তা শাহপরী”—যা দ্বারা তিনি মানুষের আত্মমূল্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন।
তিনি সর্বদা মানুষের কল্যাণে কাজ করতে বলেছেন এবং আত্মিক উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করতে উপদেশ দিয়েছেন।বাংলাদেশের সুফি সাধকদের ঐতিহ্যবাহী ধারা বহন করে চলা এই প্রজ্ঞাবান আধ্যাত্মিক ব্যক্তি স্থানীয়দের কাছে সৈয়দ সাহেব (পীর সাহেব) নামে পরিচিত ছিলেন।
বংশ পরিচয়-তিনি ছিলেন আহলে বাইতের বংশধর—বড়পীর গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) এর বংশের।তাঁর পারিবারিক বংশক্রমে একের পর এক পীরে কামেল, আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক ও গাউছুল আজম-দের আবির্ভাব ঘটে, যাঁদের মধ্যে আছেন ।
বাগদাদ শরীফের কুতুবে আকতাব আবদাল গাউছুল আজম হযরত মাওলানা সৈয়দ নুর উদ্দীন (রহ.) এর পুত্র পীরে কামেল সৈয়দ রিয়াজ উদ্দীন (রহ.) উনার উত্তরসূরী মাওলানা সৈয়দ ইমাম উদ্দীন (রহ.) এর পুত্র সৈয়দ সিদ্দিক আহমদ (রহ.)এই পরম্পরা থেকে আগত সৈয়দ আবুল ওলা (রহ.) ছিলেন এই ধারার এক উজ্জ্বল প্রতিনিধিত্বকারী। তাঁর পুত্র সৈয়দ ফখর উদ্দীন।
বাংলায় আগমন ও স্থায়ী আবাস-উল্লেখযোগ্য যে, তাঁর পিতৃপুরুষ কুতুবে অকতাব আবদাল হযরত মাওলানা সৈয়দ নুর উদ্দীন (রহ.) অন্যান্য আউলিয়া কেরামগণের সঙ্গে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাগদাদ শরীফ হতে বাংলায় আগমন করেন। তাঁরা চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাহেবদীনগর গ্রামে অবস্থান গ্রহণ করেন।
ওফাত- ২২শে শাবান ১৪২০ হিজরি (১লা ডিসেম্বর ১৯৯৯ খ্রি.)চিরতরের জন্য পরপারে পাড়ি জমান এই আলোর মানুষটি।তাঁর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয় সাহেবদীনগর গ্রামে।তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ ও শিক্ষা আজও অনুসারী, পরিবার ও ভক্তদের মাধ্যমে চর্চিত হচ্ছে।