শিরোনাম :
Logo ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার Logo বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সন্দেহে ভারতে আটক ৪৪৮ জন Logo ফ্রান্সে ভয়াবহ দাবানল, আহত শতাধিক মানুষ Logo জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা Logo বীরগঞ্জে দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়ম, ৬০ হাজার টাকা জরিমানা Logo দিনমজুরি করেও স্বপ্ন দেখেছে আইনজীবী হওয়ার, পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলেও পড়ালেখার ভবিষ্যৎ টাকার অভাবে অনিশ্চিৎ Logo কুবিতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনের দায়িত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাকর্মীরা! Logo মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা Logo সুপারস্টার ডি এ তায়েব অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী” শিশু শিল্পী টুনটুনির জন্মদিন উদযাপন Logo রাবিতে ডাইনিং সংকটসহ ৫ দফা দাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

কুবিতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনের দায়িত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাকর্মীরা!

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:৩২:৪২ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
  • ৭০৯ বার পড়া হয়েছে

কুবি প্রতিনিধি:কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ‘ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি’ উদযাপনের লক্ষ্যে ১৪ সদস্যের গঠিত কমিটির ৮ জনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু পরিষদ সদস্য অথবা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী পরিষদ থেকে নির্বাচন করার অভিযোগ উঠেছে।

আগামী ১১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

জানা যায়, আগামী ১১ আয়োজনকে কেন্দ্র করে গত ০১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে জুলাই উদযাপন কমিটি করা হয়েছে। ১৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহবায়ক হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ তাজুল ইসলাম। এছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন, রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোঃ শাহাদাৎ হোসেন, নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের প্রাধ্যক্ষ ড. সুমাইয়া আফরীন সানি, বিজয়-২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল্লাহ আল মাহবুব, সহকারী প্রক্টর ড. নাহিদা বেগম ও মুনতাসিম বিল্লাহ, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিন বিনতে এনাম, পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক মোঃ সাফায়েত হোসেন, আইসিটি বিভাগের প্রভাষক খন্দকার ওয়ালীউল্লাহ, এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ময়নাল হোসেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, কমিটির ৩ নম্বর সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের ২০২২ কমিটির সদস্য ছিলেন, ৪ নম্বর সদস্য ড. সুমাইয়া আফরীন সানি বঙ্গবন্ধু পরিষদের ২০১৯ সালের কার্যনির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন, ৫ নম্বর সদস্য ড. মাহমুদুল হাছান খান বঙ্গবন্ধু পরিষদের ২০২০ সালের কার্যনির্বাহী কমিটির শিক্ষা গবেষণা সম্পাদক ছিলেন।

এছাড়া ড. মাহমুদুল আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতা ও দমন-পীড়নের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের কমিটিতেও আছেন। এছাড়া ৭ নম্বর সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব ২০১৩ সালে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থনে ফাঁসির দাবিতে সামনের সারিতে আন্দোলন করেছেন। যার ছবি প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

কমিটির ৮ নম্বর সদস্য ড. নাহিদা বেগম বঙ্গবন্ধু পরিষদের ২০১৭ কার্যনির্বাহী কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন, ১০ নম্বর সদস্য তারিন বিনতে এনাম বঙ্গবন্ধু পরিষদের বর্তমান কমিটির সদস্য ও নীল দল থেকে নির্বাচন করেছেন।

এছাড়া কমিটির ১৩ নম্বর সদস্য মোহাম্মদ ময়নাল হোসেন বঙ্গবন্ধু কর্মচারী পরিষদের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং সদস্য সচিব মোঃ তাজুল ইসলাম অফিসার্স এসোসিয়েশনের ২০১৯ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী নীলদল থেকে কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচন করেছিলেন।

উদযাপন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে আগামীকাল থেকে ছুটিতে থাকবো। ১১ তারিখের প্রোগ্রামটি আহ্বায়ক ম্যাডামের (উপ-উপাচার্য) নেতৃত্বেই অনুষ্ঠিত হবে।’

ড. সুমাইয়া আফরীন সানি বলেন, ‘প্রশাসন আমাকে না জানিয়েই এই কমিটিতে রাখছেন। তবে এতে আমার কোনো আপত্তি নাই। প্রশাসন আমাকে কোনো কিছুর দায়িত্ব দিলে আমি তা পালন করি। আর একটা বিষয় জানিয়ে রাখি, আমি ছাত্রজীবনে কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। চাকরিতে প্রবেশের পর আমি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু পরিষদে যুক্ত হয়েছিলাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনকে সমর্থন করে পোস্ট করার কারণে হুমকির সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমার চাকরি চলে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। তারপরও আমি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষেই ছিলাম।’

সহকারী প্রক্টর ড. নাহিদা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদে আমি একা ছিলাম না, সবাই ছিল। এখন জুলাই স্মৃতি উৎযাপন কমিটিতে আমাকে রাখলেও সমস্যা নাই আর না রাখলেও সমস্যা নাই।’

ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিন বিনতে এনাম বলেন, ‘একটা সময় প্রেক্ষাপটটা এমন ছিলো যে সবাই কোন না কোন রাজনৈতিক প্লাটফর্মে ছিলো। জুলাই আন্দোলনে আমার কোন নেতিবাচক ভূমিকা ছিলো না, আমি ছাত্রদের বিপক্ষে ছিলাম না আমার রেকর্ড যদি খারাপ হয় তাহলে সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু আমি ছাত্রদের পক্ষেই ছিলাম। ‘

তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই স্মরণসভার কমিটিতে আমাকে প্রশাসন রেখেছে। আমি নিজে তো থাকতে চাইনি। কিন্তু আমি তো প্রশাসনের দেওয়া দায়িত্ব উপেক্ষা করতে পারি না। ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করার জন্যই আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আর আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করব।’

রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘প্রশাসন এই আহ্বায়ক কমিটিতে আমাকে অন্তর্ভুক্ত করার আগে মতামত নেয়নি। শিক্ষার্থীরা যদি না চায় তাহলে প্রশাসন আমাকে দায়িত্ব না দিলেই পারতো।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি জুলাই আন্দোলনের অনেক আগেই শিক্ষক সমিতি থেকে বঙ্গবন্ধু পরিষদ থেকে বের হয়ে আসি। যে ৫২ জন শিক্ষক জুলাই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে স্বাক্ষর করেছিল, আমিও তারমধ্যে একজন। আমি ঐসময় শিক্ষক সমিতির সদস্যদের আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়ানো জন্য চাপ দিয়েছিলাম, তারা দাঁড়ায়নি।’

কমিটির সদস্য সচিব মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়েও আমরা বঞ্চিত হয়েছি। তখন আমাদের বলা হতো বিএনপি, জামায়াত। আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি সত্য। কিন্তু আমি কোনো রাজনৈতিক দলের পদে ছিলাম না।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য ড. মাহমুদুল হাসান খান ও এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ময়নাল হোসেনকে কল করা হলে তারা রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছর না যেতেই চারিদিকে শুধু আওয়ামী পুনর্বাসন দেখতে পাচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও পিছিয়ে নেই। যেই আন্দোলন হয়েছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে, সেই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ দিবসসমূহ উদযাপনে আওয়ামী সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষকদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে!’

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যেহেতু তারা এখানের চাকরিজীবী তাই তাদের নিয়েই করা হয়েছে। উপ-উপাচার্য ম্যামকে নিয়ে আমরা কমিটি করে এই কমিটি করেছি। যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে প্রয়োজনে আমরা কমিটি পুনরায় গঠন করবো।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড জ্ঞান নেই, আমি তাদের বলেছি একটি কমিটি গঠন করতে। সবাই মিলে কমিটি করেছে, আমি শুধু অনুমোদন দিয়েছি। তবে বলে দিয়েছি, কারো ব্যাকগ্রাউন্ডে সমস্যা থাকলে তাকে যেন বাদ দেওয়া হয়।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদেশে প্রথম পুলিশি হামলার শিকার হয়েছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আসনার ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। সেই দিনটিকে কেন্দ্র করেই এক বছর পর একই দিনে ‘ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি’ উদযাপনের ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

কুবিতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনের দায়িত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাকর্মীরা!

আপডেট সময় : ০৮:৩২:৪২ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

কুবি প্রতিনিধি:কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ‘ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি’ উদযাপনের লক্ষ্যে ১৪ সদস্যের গঠিত কমিটির ৮ জনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু পরিষদ সদস্য অথবা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী পরিষদ থেকে নির্বাচন করার অভিযোগ উঠেছে।

আগামী ১১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

জানা যায়, আগামী ১১ আয়োজনকে কেন্দ্র করে গত ০১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে জুলাই উদযাপন কমিটি করা হয়েছে। ১৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহবায়ক হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ তাজুল ইসলাম। এছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন, রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোঃ শাহাদাৎ হোসেন, নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের প্রাধ্যক্ষ ড. সুমাইয়া আফরীন সানি, বিজয়-২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল্লাহ আল মাহবুব, সহকারী প্রক্টর ড. নাহিদা বেগম ও মুনতাসিম বিল্লাহ, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিন বিনতে এনাম, পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক মোঃ সাফায়েত হোসেন, আইসিটি বিভাগের প্রভাষক খন্দকার ওয়ালীউল্লাহ, এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ময়নাল হোসেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, কমিটির ৩ নম্বর সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের ২০২২ কমিটির সদস্য ছিলেন, ৪ নম্বর সদস্য ড. সুমাইয়া আফরীন সানি বঙ্গবন্ধু পরিষদের ২০১৯ সালের কার্যনির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন, ৫ নম্বর সদস্য ড. মাহমুদুল হাছান খান বঙ্গবন্ধু পরিষদের ২০২০ সালের কার্যনির্বাহী কমিটির শিক্ষা গবেষণা সম্পাদক ছিলেন।

এছাড়া ড. মাহমুদুল আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতা ও দমন-পীড়নের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের কমিটিতেও আছেন। এছাড়া ৭ নম্বর সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব ২০১৩ সালে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থনে ফাঁসির দাবিতে সামনের সারিতে আন্দোলন করেছেন। যার ছবি প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

কমিটির ৮ নম্বর সদস্য ড. নাহিদা বেগম বঙ্গবন্ধু পরিষদের ২০১৭ কার্যনির্বাহী কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন, ১০ নম্বর সদস্য তারিন বিনতে এনাম বঙ্গবন্ধু পরিষদের বর্তমান কমিটির সদস্য ও নীল দল থেকে নির্বাচন করেছেন।

এছাড়া কমিটির ১৩ নম্বর সদস্য মোহাম্মদ ময়নাল হোসেন বঙ্গবন্ধু কর্মচারী পরিষদের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং সদস্য সচিব মোঃ তাজুল ইসলাম অফিসার্স এসোসিয়েশনের ২০১৯ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী নীলদল থেকে কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচন করেছিলেন।

উদযাপন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে আগামীকাল থেকে ছুটিতে থাকবো। ১১ তারিখের প্রোগ্রামটি আহ্বায়ক ম্যাডামের (উপ-উপাচার্য) নেতৃত্বেই অনুষ্ঠিত হবে।’

ড. সুমাইয়া আফরীন সানি বলেন, ‘প্রশাসন আমাকে না জানিয়েই এই কমিটিতে রাখছেন। তবে এতে আমার কোনো আপত্তি নাই। প্রশাসন আমাকে কোনো কিছুর দায়িত্ব দিলে আমি তা পালন করি। আর একটা বিষয় জানিয়ে রাখি, আমি ছাত্রজীবনে কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। চাকরিতে প্রবেশের পর আমি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু পরিষদে যুক্ত হয়েছিলাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনকে সমর্থন করে পোস্ট করার কারণে হুমকির সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমার চাকরি চলে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। তারপরও আমি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষেই ছিলাম।’

সহকারী প্রক্টর ড. নাহিদা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদে আমি একা ছিলাম না, সবাই ছিল। এখন জুলাই স্মৃতি উৎযাপন কমিটিতে আমাকে রাখলেও সমস্যা নাই আর না রাখলেও সমস্যা নাই।’

ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিন বিনতে এনাম বলেন, ‘একটা সময় প্রেক্ষাপটটা এমন ছিলো যে সবাই কোন না কোন রাজনৈতিক প্লাটফর্মে ছিলো। জুলাই আন্দোলনে আমার কোন নেতিবাচক ভূমিকা ছিলো না, আমি ছাত্রদের বিপক্ষে ছিলাম না আমার রেকর্ড যদি খারাপ হয় তাহলে সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু আমি ছাত্রদের পক্ষেই ছিলাম। ‘

তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই স্মরণসভার কমিটিতে আমাকে প্রশাসন রেখেছে। আমি নিজে তো থাকতে চাইনি। কিন্তু আমি তো প্রশাসনের দেওয়া দায়িত্ব উপেক্ষা করতে পারি না। ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করার জন্যই আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আর আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করব।’

রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘প্রশাসন এই আহ্বায়ক কমিটিতে আমাকে অন্তর্ভুক্ত করার আগে মতামত নেয়নি। শিক্ষার্থীরা যদি না চায় তাহলে প্রশাসন আমাকে দায়িত্ব না দিলেই পারতো।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি জুলাই আন্দোলনের অনেক আগেই শিক্ষক সমিতি থেকে বঙ্গবন্ধু পরিষদ থেকে বের হয়ে আসি। যে ৫২ জন শিক্ষক জুলাই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে স্বাক্ষর করেছিল, আমিও তারমধ্যে একজন। আমি ঐসময় শিক্ষক সমিতির সদস্যদের আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়ানো জন্য চাপ দিয়েছিলাম, তারা দাঁড়ায়নি।’

কমিটির সদস্য সচিব মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়েও আমরা বঞ্চিত হয়েছি। তখন আমাদের বলা হতো বিএনপি, জামায়াত। আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি সত্য। কিন্তু আমি কোনো রাজনৈতিক দলের পদে ছিলাম না।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য ড. মাহমুদুল হাসান খান ও এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ময়নাল হোসেনকে কল করা হলে তারা রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছর না যেতেই চারিদিকে শুধু আওয়ামী পুনর্বাসন দেখতে পাচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও পিছিয়ে নেই। যেই আন্দোলন হয়েছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে, সেই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ দিবসসমূহ উদযাপনে আওয়ামী সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষকদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে!’

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যেহেতু তারা এখানের চাকরিজীবী তাই তাদের নিয়েই করা হয়েছে। উপ-উপাচার্য ম্যামকে নিয়ে আমরা কমিটি করে এই কমিটি করেছি। যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে প্রয়োজনে আমরা কমিটি পুনরায় গঠন করবো।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড জ্ঞান নেই, আমি তাদের বলেছি একটি কমিটি গঠন করতে। সবাই মিলে কমিটি করেছে, আমি শুধু অনুমোদন দিয়েছি। তবে বলে দিয়েছি, কারো ব্যাকগ্রাউন্ডে সমস্যা থাকলে তাকে যেন বাদ দেওয়া হয়।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদেশে প্রথম পুলিশি হামলার শিকার হয়েছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আসনার ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। সেই দিনটিকে কেন্দ্র করেই এক বছর পর একই দিনে ‘ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি’ উদযাপনের ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।