গাজার অবরুদ্ধ জনপদে একদিকে ইসরায়েলি হামলা, অন্যদিকে তীব্র খাদ্য সংকট—এই দুই বিপর্যয়ের চাপে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭১ জন ফিলিস্তিনি। শনিবার (২৬ জুলাই) ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো একাধিক হামলায় নিহতদের মধ্যে ৪২ জনই ছিলেন ত্রাণ সহায়তার খোঁজে থাকা সাধারণ মানুষ।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, অপুষ্টিজনিত কারণেও মৃত্যু ঘটেছে একাধিক ফিলিস্তিনির। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা গেছে, অবরোধের ফলে শনিবার আরও পাঁচজন অনাহারে মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৭ জনে, যার মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।এই মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী নিন্দা এবং উদ্বেগের মুখে ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, রোববার থেকে তারা বেসামরিক এলাকায় এবং ত্রাণ করিডোরে ‘সাময়িক হামলা বিরতি’ দেবে। তবে এই বিরতি কোন কোন অঞ্চলে কার্যকর হবে, তা স্পষ্ট করেনি ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েল বরাবরের মতো জাতিসংঘকে ত্রাণ বিতরণে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেছে। কিন্তু জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইসরায়েলই ত্রাণ সরবরাহে প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না।
ইসরায়েল দাবি করেছে তারা আকাশপথে ত্রাণ ফেলছে, এবং তাদের মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতও একই পদ্ধতির কথা বলেছে। কিন্তু মানবিক সহায়তা বিশেষজ্ঞ ও জাতিসংঘ কর্মকর্তারা এই উপায়ে কার্যকর ত্রাণ সরবরাহ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন।ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ একটি ব্যয়বহুল, বিভ্রান্তিকর ও অকার্যকর ব্যবস্থা, যা আসল সমস্যাকে আড়াল করছে।”
গাজা শহর থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা হানি মাহমুদ জানান, ইসরায়েলের ঘোষিত ‘হিউম্যানিটেরিয়ান পজ’-এর বাস্তব কার্যকারিতা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। মাত্র কয়েকটি ত্রাণ প্যালেট ফেলা হয়েছে, যেগুলো রাতের অন্ধকারে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে সংগ্রহ করাও অসম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অবরোধ না উঠলে এবং সড়কপথে নিরাপদ ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত না হলে গাজার মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে।