শিরোনাম :
Logo পলাশবাড়ীতে ভূয়া সমিতির নামে পৌনে এক কোটির টাকার গাছ বিক্রি করে অর্থ লুটপাট Logo কুবিতে এক সাংবাদিক সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ Logo পঞ্চগড়ে ভিডাব্লিউবি কার্ড বিতরণ নিয়ে লিখিত অভিযোগ মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন Logo সিরাজগঞ্জে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক পথচারী নিহত, চারজন আহত Logo ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলন কচুয়ায় ফসলি জমি নষ্ট করে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন, বাধা দিলে প্রাণনাশের হুমকি  Logo চাঁদপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশাল সমাবেশ Logo ইবিতে “ক্যারিয়ার গাইডলাইন ফর ফ্রেশার্স ২০২৫” অনুষ্ঠিত  Logo বেলকুচি আনন্দমেলায় টিকিট বাণিজ্য সময় বাড়ানোর আবেদন Logo বিনামূল্যে বাইসাইকেল পেয়ে উচ্ছ্বসিত চাঁদপুর সদরের ৫২ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা  Logo বীরগঞ্জে ৪টি ইউনিয়ন বাল্যবিবাহ ও ১টি ইউনিয়ন শিশু শ্রম মুক্ত ঘোষণা

ফিরে দেখা ২৯ জুলাই; কারফিউ ভেঙে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা

কারফিউ, ট্যাংক মোতায়েন, সশস্ত্র বাহিনী এবং গুম আতঙ্ক সব মিলিয়ে দেশের পরিস্থিতি ছিল থমথমে। ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই সেই ভয়াবহ আবহেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শুরু হয় এক সাহসী প্রতিবাদ। নিখোঁজ আন্দোলনকারী, দমনমূলক হুমকি সবকিছুকে উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা গর্জে ওঠে মূল ফটকের সামনে। দিনটি এখন শুধুই একটি তারিখ নয়, বরং সাহসিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

আগের দিন রাতে চলমান ছাত্রআন্দোলনের ছয়জন শীর্ষ সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় গোয়েন্দা কার্যালয়ে। সেখানে তাদের ওপর কর্মসূচি প্রত্যাহারের চাপ প্রয়োগ করা হয়। একই রাতে নিখোঁজ হন আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও নুসরাত তাবাসসুম। এ ঘটনার পর পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, গুজব, আর আন্দোলন থেমে যাওয়ার আশঙ্কা।

সেই দিনের প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার জানান, ‘আমরা কয়েকজন সিদ্ধান্ত নিই, এই ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না। ঠিক করি, আগে থেকেই মূল ফটকের সামনে অবস্থান করবো। তাই রেডিও বেতার মাঠের পাশে গাছের আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে থাকি। উদ্দেশ্য ছিল, শিক্ষকরা এলে আমরা তাদের সঙ্গে সামনে যাব।’

পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির আগেই সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে মূল ফটকে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব, অধ্যাপক ইফতেখার মাসুদ এবং অধ্যাপক জামিরুল ইসলাম। শিক্ষকদের উপস্থিতির অপেক্ষায় থাকা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তখন সাহস সঞ্চয় করে মাজার এলাকা পেরিয়ে গিয়ে ফটকের সামনে এসে দাঁড়ান।

সেখানে এসে পুলিশ জানায় ‘স্লোগান দেওয়া যাবে না, প্রোগ্রাম করতে দিচ্ছি, এটাই অনেক।’ তবে শিক্ষকরা পুলিশের অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে স্পষ্ট জানান কর্মসূচি চলবেই। এরপর শুরু হয় স্লোগান। প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী সম্মিলিত কণ্ঠে স্লোগান দিতে থাকেন ‘নির্লজ্জ ভিসি পদত্যাগ করতে হবে’, ‘তুমি কে, আমি কে সমন্বয়ক, সমন্বয়ক’।

হঠাৎই তৈরি হয় একটি ইংরেজি স্লোগান, যা পরবর্তীতে আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে। সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এমন কিছু বলতে চেয়েছিলাম যেটা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যাবে। হঠাৎ মাথায় আসে আমি বলি ‘শেইম শেইম’, সবাই জবাব দেয় ‘ডিক্টেটর’। এটা একেবারেই তাৎক্ষণিক ছিল, কিন্তু পরে সেটিই হয়ে দাঁড়ায় প্রতিরোধের প্রতীক।’

সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ঘিরে ছিল পুলিশের কড়া অবস্থান, সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি এবং ট্যাংক মোতায়েন। সবকিছুর মাঝেই শিক্ষার্থীদের মিছিল এগিয়ে যায় বিনোদপুর মোড় পর্যন্ত, যেখানে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় সেই দিনের কর্মসূচি।

আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদি সজিব বলেন, কেন্দ্রীয় ৬ জন সমন্বয়কে ডিবি ভবনে ধরে নিয়ে আন্দোলন স্থগিত করা হয়। আমরা পরে এটা প্রত্যাখান করি। সর্ব প্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ২৯ জুলাই কারফিইউ ভঙ্গ করে আন্দোলন করি।

যারা সেদিন মেইগেটের সামনে ছিল তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল। স্যাররা সহ আমরা সবাই বারবার অনুরোধ করি যাতে গুলি না করে। তখন আমরা সেম সেম ডিকটেটর স্লেগান দিতে শুরু করি পরে এটি দেশব্যাপি ছড়িয়ে পরে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পলাশবাড়ীতে ভূয়া সমিতির নামে পৌনে এক কোটির টাকার গাছ বিক্রি করে অর্থ লুটপাট

ফিরে দেখা ২৯ জুলাই; কারফিউ ভেঙে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় : ০৭:১৯:০২ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

কারফিউ, ট্যাংক মোতায়েন, সশস্ত্র বাহিনী এবং গুম আতঙ্ক সব মিলিয়ে দেশের পরিস্থিতি ছিল থমথমে। ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই সেই ভয়াবহ আবহেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শুরু হয় এক সাহসী প্রতিবাদ। নিখোঁজ আন্দোলনকারী, দমনমূলক হুমকি সবকিছুকে উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা গর্জে ওঠে মূল ফটকের সামনে। দিনটি এখন শুধুই একটি তারিখ নয়, বরং সাহসিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

আগের দিন রাতে চলমান ছাত্রআন্দোলনের ছয়জন শীর্ষ সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় গোয়েন্দা কার্যালয়ে। সেখানে তাদের ওপর কর্মসূচি প্রত্যাহারের চাপ প্রয়োগ করা হয়। একই রাতে নিখোঁজ হন আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও নুসরাত তাবাসসুম। এ ঘটনার পর পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, গুজব, আর আন্দোলন থেমে যাওয়ার আশঙ্কা।

সেই দিনের প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার জানান, ‘আমরা কয়েকজন সিদ্ধান্ত নিই, এই ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না। ঠিক করি, আগে থেকেই মূল ফটকের সামনে অবস্থান করবো। তাই রেডিও বেতার মাঠের পাশে গাছের আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে থাকি। উদ্দেশ্য ছিল, শিক্ষকরা এলে আমরা তাদের সঙ্গে সামনে যাব।’

পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির আগেই সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে মূল ফটকে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব, অধ্যাপক ইফতেখার মাসুদ এবং অধ্যাপক জামিরুল ইসলাম। শিক্ষকদের উপস্থিতির অপেক্ষায় থাকা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তখন সাহস সঞ্চয় করে মাজার এলাকা পেরিয়ে গিয়ে ফটকের সামনে এসে দাঁড়ান।

সেখানে এসে পুলিশ জানায় ‘স্লোগান দেওয়া যাবে না, প্রোগ্রাম করতে দিচ্ছি, এটাই অনেক।’ তবে শিক্ষকরা পুলিশের অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে স্পষ্ট জানান কর্মসূচি চলবেই। এরপর শুরু হয় স্লোগান। প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী সম্মিলিত কণ্ঠে স্লোগান দিতে থাকেন ‘নির্লজ্জ ভিসি পদত্যাগ করতে হবে’, ‘তুমি কে, আমি কে সমন্বয়ক, সমন্বয়ক’।

হঠাৎই তৈরি হয় একটি ইংরেজি স্লোগান, যা পরবর্তীতে আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে। সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এমন কিছু বলতে চেয়েছিলাম যেটা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যাবে। হঠাৎ মাথায় আসে আমি বলি ‘শেইম শেইম’, সবাই জবাব দেয় ‘ডিক্টেটর’। এটা একেবারেই তাৎক্ষণিক ছিল, কিন্তু পরে সেটিই হয়ে দাঁড়ায় প্রতিরোধের প্রতীক।’

সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ঘিরে ছিল পুলিশের কড়া অবস্থান, সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি এবং ট্যাংক মোতায়েন। সবকিছুর মাঝেই শিক্ষার্থীদের মিছিল এগিয়ে যায় বিনোদপুর মোড় পর্যন্ত, যেখানে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় সেই দিনের কর্মসূচি।

আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদি সজিব বলেন, কেন্দ্রীয় ৬ জন সমন্বয়কে ডিবি ভবনে ধরে নিয়ে আন্দোলন স্থগিত করা হয়। আমরা পরে এটা প্রত্যাখান করি। সর্ব প্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ২৯ জুলাই কারফিইউ ভঙ্গ করে আন্দোলন করি।

যারা সেদিন মেইগেটের সামনে ছিল তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল। স্যাররা সহ আমরা সবাই বারবার অনুরোধ করি যাতে গুলি না করে। তখন আমরা সেম সেম ডিকটেটর স্লেগান দিতে শুরু করি পরে এটি দেশব্যাপি ছড়িয়ে পরে।