দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। কিন্তু সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদা-পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এসব রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে বেহাল দশা। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক হল এবং একাডেমিক ভবনের মধ্যবর্তী সড়কগুলোতে খানাখন্দের পাশাপাশি দেখা যায় বড় বড় জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা ভরে যায় পানি ও কাদায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিদিন ক্লাস, লাইব্রেরি বা হল থেকে ডিপার্টমেন্টে যেতে গিয়ে তাদের আর কষ্টের সীমা থাকে না।
বিশেষ করে সাদ্দাম হোসেন হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হল, শহীদ আনাস হল, টিএসসিসি এবং বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের আশপাশের সড়কগুলোতে বেশি সমস্যা দেখা যায়। পথচারীদের হাঁটতে হয় পানির ভেতর দিয়ে। অনেক সময় কাদা ও পানিতে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। ফলে চরম অসুবিধার মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
লালন শাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহমুদুল ইসলাম বলেন, “জিয়া হল এবং পাশের মসজিদের মাঝের রাস্তাটি লালন শাহ ও জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের একমাত্র চলাচলের পথ। এছাড়া অসংখ্য অনাবাসিক শিক্ষার্থীও শেখপাড়ায় যাতায়াতের জন্য এই রাস্তা ব্যবহার করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে বর্ষার সময়ে হেঁটে বা ভ্যানগাড়িতে চলাফেরাও কঠিন হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে কাদা-পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করছেন, যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।”
সাদ্দাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. প্রিন্স জানান, “সাদ্দাম হল থেকে টিএসসিসি যাওয়ার পথে রাস্তার বাঁকে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, যা বৃষ্টির পানি জমে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এতে বাইক, ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাবল ডেকার বাসও মোড় নেয়ার সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বড় কোনো দুর্ঘটনার আগে দ্রুত মেরামত কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন।”
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শোয়াইব বিন আছাদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জিয়া মোড় প্রতিদিন শতশত শিক্ষার্থীর যাতায়াতের কেন্দ্রবিন্দু। সামান্য বৃষ্টিতেই এখানে পানি জমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশা বা ভ্যানেও কাদা ও পানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। পরিচ্ছন্ন পোশাকে ক্লাসে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিকভাবে ভোগান্তির মুখে ফেলে।”
ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “বর্ষার সময় কাদা-পানিতে শাহ আজিজুর রহমান হলের পকেট গেটের রাস্তা একেবারে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়। পাশাপাশি রাস্তার আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পর চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।”
তবে শিক্ষার্থীরা একবাক্যে দাবি করছেন, অবিলম্বে রাস্তাগুলো সংস্কার করে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ, সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী এ. কে. এম. শরীফ উদ্দীন বলেন, “এই বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সবকিছুই বাজেটের ওপর নির্ভরশীল। গত অর্থবছরে যে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল, সেই অর্থে বর্তমানে চলমান কাজগুলো পরিচালিত হচ্ছে। নতুন বাজেট অনুমোদন পেলেই এই কাজগুলো শুরু করা হবে। বর্তমানে হলের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় তা শেষ হওয়ার পর জিয়া হলের সামনের রাস্তা ঢালাই করা হবে। পাশাপাশি অন্যান্য রাস্তাগুলোর সংস্কার কার্যক্রমও সম্পন্ন করা হবে।