নিউজ ডেস্ক:
গত ২৭ জুন ঈদের ছুটি শেষ হলেও বরিশালসহ দক্ষিনাঞ্চলের কর্মস্থলমুখি মানুষের চাপ বেড়েছে শুক্রবার থেকে। বেসরকারি অফিস-প্রতিষ্ঠান আজ শনিবার থেকে খোলা। অপরদিকে রবিবার খুলছে সরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা। এ কারণে আজ দুপুরের পর থেকে কর্মস্থল মুখি মানুষের ঢল নেমেছে বরিশাল নদী বন্দরে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের ছুটি ২৭ জুন শেষ হলেও চাকরিজীবিরা ২৮ ও ২৯ জুন অতিরিক্ত ছুটি নিয়ে পরিবারের সাথে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে এখন কর্মস্থলে ফিরছেন। এ কারণে শুক্রবার এবং শনিবারই নৌপথে সবচেয়ে বেশি ভিড় হওয়ার কথা।
শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নদী বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার উদ্দেশ্যে বরিশাল নদী বন্দরে নোঙ্গর করা রয়েছে বিভিন্ন নেভিগেশন কোম্পানীর ১৭টি বিশালাকৃতির লঞ্চ। এছাড়া সরকারি দুটি জাহাজও যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। নদী বন্দরে নোঙ্গর করা ঢাকাগামী এমভি কীর্তনখোলা-১ ও ২, এমভি পারাবত-৮, ১০, ১১ ও ১২, এমভি সুন্দরবন-৮ ও ১০, এমভি সুরভী-৭ ও ৯, এমভি টিপু-৭ ও এমভি ফারহান-৮, এমভি দ্বিপরাজ, এমভি তাসরিফ-৩ ও ৪, এমভি রাজহংস-৮ এবং এমভি কালাম খান-১ লঞ্চগুলোর ডেক (ফ্লোর) বিকেলের মধ্যে যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপরও গাদাগাদি করে যাত্রী উঠোনো হয় প্রতিটি লঞ্চে। বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলোতে বিলাসবহুল কেবিন সংযোজন করায় এতে আয়েশ করে গন্তব্যে যেতে আগ্রহী বিত্তবান যাত্রীরা। কিন্তু সেই কেবিন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। কোন লঞ্চের কেবিন খালী না থাকলেও নদী বন্দরের কিছু দালাল আগেভাগে ছদ্মনামে টিকেট কেটে সেগুলো চড়া মূল্যে কালোবাজারে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি পারাবত-১০ লঞ্চের সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম খান জানান, ঈদের পরদিন থেকে ঢাকামুখি যাত্রীরা যেতে শুরু করলেও মূল চাপ শুরু হয়েছে আজ। আগামীকাল শনিবারও কর্মস্থলমুখি মানুষের এই চাপ অব্যাহত থাকবে বলে ধারনা করছেন তিনি। তাদের কোম্পানীসহ সব লঞ্চের কেবিন টিকেট আগেভাগেই বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এমভি সুন্দরবন-১০ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. হারুন-অর রশিদ জানান, তাদের কোম্পানীর সব টিকেট বিক্রি হয়েছে অফিস থেকে। মালিক কর্তৃপক্ষ দেখে-শুনে প্রকৃত যাত্রীদের কাছে কেবিন টিকেট বিক্রি করেছেন। এখানে তাদের কোম্পানীর কেবিন কালোবাজারী করার কোন সুযোগ নেই।
বরিশাল নদী বন্দরের ট্রাফিক পরিদর্শক মো. রিয়াদ হোসেন জানান, ঈদের পর আজই সবচেয়ে বেশি ঢাকাগামী মানুষের ঢল দেখা গেছে। বিপুল সংখ্যক যাত্রীর সুবিধার্থে নিয়মিত এবং বিশেষ সার্ভিস মিলিয়ে ১৭টি ঢাকাগামী লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদী বন্দরের শৃঙ্খলা রক্ষায় স্কাউট, রোভার স্কাউট, মেরিন একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী এবং আনসার নিয়োজিত রয়েছে। তারা বয়স্ক এবং অসুস্থ যাত্রীদের লঞ্চে উঠতে সহায়তা করছে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ঠেকাতে নদী বন্দরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্ধারিত সময়ে আগে লঞ্চগুলোকে নদী বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য করছেন। এছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন বলে জানান নদী বন্দরের ট্রাফিক পরিদর্শক রিয়াদ।
বরিশাল নদী বন্দর ছাড়াও দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলা, বাগেরহাট ও মাদারীপুরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে শতাধিক লঞ্চ টইটুম্বুর যাত্রী নিয়ে আজ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রিয় কমিটির সহসভাপতি মো. সাইদুর রহমান রিন্টু। এছাড়া বিআইডব্লিউটিসি’র এমভি মধুমতি এবং পিএস টার্ন নামে দুটি নৌযান যাত্রী বোঝাই করে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিসি’র সহকারী মহা ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, আজ তাদের ঢাকাগামী দুটো জাহাজের সকল কেবিন টিকেট আগেই বুকিং হয়ে গেছে। ডেকেও যাত্রী পরিপূর্ণ। কিন্তু সরকারি জাহাজে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কোন সুযোগ নেই।