নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার দুই মাস পার হলেও এখনো প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৬ কোটি ৩৮ লাখের বেশি বই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছায়নি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, কাগজ সংকটসহ নানা কারণে বই সরবরাহে এই বিলম্ব হচ্ছে। এর মধ্যে মাধ্যমিকের বই ৬ কোটি ২২ লাখের মতো।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, ৪ কোটির বেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৩৯ কোটিরও বেশি বই ছাপানোর পরিকল্পনা থাকলেও দরপত্র, অনুমোদন, মুদ্রণ এবং কাগজ সংকটের কারণে বই সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবি শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থী সব বই পাবে। ১০ মার্চের মধ্যে বই বিতরণের লক্ষ্যে কাজ করা হলেও মুদ্রণকারীরা আশঙ্কা করছেন, কাগজের অপ্রতুলতার কারণে এই সময়সীমাও নিশ্চিত নয়।
এনসিটিবির তথ্যানুসারে, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মোট ৩৯ কোটির বেশি বই মুদ্রণ করা হচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি ৪০ লাখ, যার মধ্যে ২ মার্চ পর্যন্ত ২৭ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার বই ছাপানো হয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহের অনুমোদন (পিডিআই) পাওয়া গেছে ২৪ কোটি ১৭ লাখ ৭২ হাজার বইয়ের, অর্থাৎ এখনো ৬ কোটি ২২ লাখ ২৮ হাজার বই বিতরণ করা হয়নি।
প্রাথমিক পর্যায়ে মোট ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার বই ছাপানো হলেও, ৯ কোটি ৩ লাখ ৪৪ হাজার বই সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে এখনো ১৬ লাখ বই বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, পাঠ্যবই মুদ্রণের পর মান যাচাই-বাছাই করে সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এদিকে, দীর্ঘ ছুটির কারণে বই বিতরণ আরও বিলম্বিত হতে পারে বলে অভিভাবক ও শিক্ষকদের আশঙ্কা। এরইমধ্যে পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিদ্যালয়গুলোতে লম্বা ছুটি শুরু হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের সব পাঠ্যবই হাতে পেতে অপেক্ষাও দীর্ঘ হচ্ছে। কারণ, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সব বিদ্যালয়ে অবশিষ্ট বই সময়মতো দেওয়া যাবে কি না, সে প্রশ্নও আছে।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে এবার শিক্ষাক্রম সংশোধন করে পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। পাঠ্যবই পরিমার্জনের কারণে ছাপার কাজ বিলম্বিত হবে, তা অনুমেয় ছিল। তবে দরপত্র, অনুমোদন ও চুক্তির প্রক্রিয়া সময়মতো সম্পন্ন না হওয়া এবং কাগজ সংকটের কারণে বিলম্ব আরও বেড়েছে।
এনসিটিবি জানিয়েছে, উপজেলা পর্যায়ে বই পাঠানো হচ্ছে, যাতে বিদ্যালয় খোলার পর দ্রুত বিতরণ সম্ভব হয়। তবে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে যে প্রভাব পড়ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।