দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নিপীড়নের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের (একাংশ) আয়োজনে শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধনে কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামালউদ্দিন রুনু অংশগ্রহণ করেন।মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (অডিটোরিয়াম) কর্মী ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মিথিলা বাউল।
শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন,”আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর বৈষম্যের ব্যাপারটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অংশ। জুলাই বিপ্লবের পরেও আমরা এ ধরনের মন মানসিকতা থেকে বের হতে পারিনি। পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ এটা সত্য সেটা পুরুষের জন্যও সমান, নারীর জন্যও সমান। সে ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ছেলেরা খাচ্ছে, কিন্তু মেয়েরা খেলেই সমস্যা। কালচারালি বিভিন্নভাবে আমরা বিষয়টিকে বিভিন্নভাবে দেখছি। তবে মব জাস্টিসের মধ্য দিয়ে যে নিপীড়ন করা হয়েছে সেটির নিন্দা জানাচ্ছি। কিছু কিছু জায়গায়, পাবলিক প্লেসে আইনি বাধ্যবাধকতা আছে এটা সত্য। কিন্তু সেটার কি ইমপ্লিমেন্টেশন হচ্ছে, হচ্ছে না। যদি হয় সেটা ভালো কথা। সেট সবার জন্যই প্রযোজ্য হবে। তবে আমাদের উপদেষ্টা যে কথাগুলো বলেছেন সেটা আমাকে আরও ভাবিয়েছে। তারা বিষয়টাকে আইনীভাবে খতিয়ে দেখতে পারত এবং এর আওতায় নিতে পারত।”
জাহাঙ্গীরনগর সাঙ্গস্কৃতিক জোট (একাংশ) এর সভাপতি ফাইজা মাহজাবিন প্রিয়ন্তি বলেন,”হে রাষ্ট্র মেয়েদের বন্দিত্তের দায় না নিয়ে,নিরাপত্তার দায় নাও। খুব হতাশার সাথে আমরা দেখি যে এই রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা মেয়েদের বন্দিত্ত্বের দিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অধীর আগ্রহী, মেয়েদের নিরাপত্তা দানের ব্যাপারে তাদের ন্যুনতম কোনো আগ্রহ বা স্বদিচ্ছা আমরা দেখতে পাই না। ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজে আজকেও দেখছিলাম যে গত এক মাসে প্রায় ২৩৮ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যেটি বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত নিন্দাজনক। আমরা বারবার দেখছি ধর্ষণ ও নিপীড়নমূলক ঘটনা ঘটছে। কিন্তু তার বিপরীতে উপযুক্ত ব্যবস্থা বা যারা দায়ী যারা দোষী তাদেরকে জবাবদিহীতার আওয়াতার আনার ব্যাপারে এই রাষ্ট্র বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
এই মেয়েদেরকেই আমরা দেখেছি জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে। এই মেয়েরাই আমরা দেখেছি বিভিন্ন ভিডিওতে সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় ঢাকা,চট্টগ্রাম,রাজশাহী,বরিশালসহ সমগ্র দেশে সম্মুখ সাড়িতে থেকে তাদের নিজেদের যে অধীকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করে সব জায়গায় সংগ্রামে আবদ্ধ ছিলো এবং তাদেরকে দেখে অনেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছে। নারীর প্রতি সমান মর্যাদা নিশ্চিতের জায়গায় সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। গত দু-তিনদিনে আমরা দেখেছি যে মবের নামে নারীর সাথে সহিংস আচরণ করা হয়েছে। আমরা প্রকাশ্যে ধুমপানের পক্ষে নই কিন্তু এধরণের ঘটনা ঘটলে রাষ্ট্র প্রচলিত আইন দ্বারা ব্যবস্থা নিবে। আমরা এই পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের বিপক্ষে যেই সমাজ পুরুষ ধুমপান করলে চুপ থাকে কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে সহিংস আচরন করে। ইনক্লুসিভ সমাজ গঠণের জন্য নারী পুরুষ ট্রান্সজেন্ডার এক কাতারে দাঁড়িয়ে সমান মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।”
জাহাঙ্গীরনগর সাঙ্গস্কৃতিক জোটের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক সাদমান অলিভ বলেন,”নারীর প্রতি সহিংসতা বা নিপীড়ন শুধু আজকের ঘটনা না বরং যুগ যুগ ধরে চলে আসা এক প্রবঞ্চ। প্রতিটি স্থানে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি পাবলিক প্লেসে নারীরা নিপীড়নের স্বীকার হচ্ছে। আমার নিজের বোন পাবলিক বাসে উঠতে পারেনা কারণ তার দিকে অশ্লীল দৃষ্টিতে তাকানো হয় কিংবা কেউ না কেউ তার উপরে অসদুপায়ে হাত দিয়ে যায়। আমার ঘরের মানুষ যখন এই ধরণের নিপীড়ন ও নির্যাতনের স্বীকার সেখানে ভাই হিসেবে আমি ব্যর্থ। প্রতিটি ঘরে ঘরে যারা নিপীড়িত হচ্ছেন, তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা না দিতে পারি তাহলে আমাদের আজকের মানববন্ধনের উদ্দেশ্য কখনোই সফল হবেনা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, পূর্ববর্তী সরকার বা যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যখন কোন নির্যাতন বা নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে যাওয়া হয় তখন শুধুমাত্র দায় এড়ানো বা ভিক্টিম ব্লেমিং ছাড়া প্রশাসনকে অন্য কোন কাজ করতে দেখা যায়না। এমনকি ক্যান্টনমেন্ট এরিয়াতেও দেখা যায় নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে, লাশ পড়ে আছে কিন্তু বিচারকার্য ঠিকমতো হচ্ছেনা। দেশে যেভাবে অরাজকতা চলছে, মবের নামে নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে আমরা চাই নারীদের প্রতি এই অবমাননা ও বিদ্বেষ বন্ধ হোক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, প্রশাসন ও জনগণের প্রতি আমাদের আহবান করছি সকল ধরণের নারী বিদ্বেষ দূর করে নারীদের মানুষ হিসেবে দেখা ও নিপীড়ন বিরোধী সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা।”