মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫
মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫

শনির চাঁদ যেভাবে নিজের বায়ুমণ্ডল ধরে রেখেছে

টাইটান হলো শনির বৃহত্তম উপগ্রহ এবং সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ যার মেঘ এবং ঘন বায়ুমণ্ডল রয়েছে বলে জানা যায়। পৃথিবী ছাড়া এটিই একমাত্র বস্তু যার পৃষ্ঠে বর্তমানে তরল পদার্থ রয়েছে বলে জানা যায়। ১৬৫৫ সালে ডাচ বিজ্ঞানী টেলিস্কোপিকভাবে এটি আবিষ্কার করেন। গ্রীক পুরাণের টাইটানদের নামানুসারে চাঁদের নামকরণ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ক্রোনাস (রোমান দেবতা শনির সমতুল্য) এবং তার ১১ ভাইবোন অন্তর্ভুক্ত।

টাইটানের বায়ুমণ্ডলে ৯৫ শতাংশই নাইট্রোজেন আর বাকি পাঁচ শতাংশ মিথেন দিয়ে গঠিত। পৃথিবীর চেয়ে এর বায়ুমণ্ডল প্রায় দেড় গুণ ঘন।

টাইটানের বায়ুমণ্ডলে থাকা মিথেন বিজ্ঞানীদের ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে। আর এ নিয়েই বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ প্রতিবেদনে লিখেছে, “দীর্ঘদিন ধরেই টাইটানের বায়ুমণ্ডলে থাকা মিথেন বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করে চলেছে”।

৩ কোটি বছরের মধ্যে টাইটানের বায়ুমণ্ডলে থাকা মিথেন ভেঙে যাওয়ার কথা ছিল, যার ফলে এর বায়ুমণ্ডল হয়ে যাবে বরফ। তবে এমনটি ঘটেনি! আর এ বিষয়টিই সবচেয়ে বিস্মিত করে চলেছে বিজ্ঞানীদের।

কিন্তু এর পেছনের কারণ কী?

টাইটানের পৃষ্ঠটি বালিয়াড়ি, বরফের পাহাড় ও তরল হাইড্রোকার্বনের হ্রদের মাধ্যমে আবৃত। এটি মূলত মিথেন ও ইথেন দিয়ে গঠিত।

বিজ্ঞানীদের অনুমান, এর বরফের ভূত্বকের নীচে রয়েছে বিশাল জলাধারে, যা প্রাণ থাকার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলেছে। টাইটানের জলবায়ু, ঋতু পরিবর্তন ও প্রাচীন পৃথিবীর সঙ্গে এর মিল রয়েছে কি না সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘ক্যাসিনি-হাইজেনস’ মিশনে। ফলে টাইটান নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেড়েছে।

‘সাউথ ওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর ড. কেলি মিলার বলেছেন, “পৃথিবীর ব্যাসের কেবল ৪০ শতাংশ হলেও টাইটানের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর চেয়ে দেড় গুণ ঘন। এমনকি মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কম থাকলেও টাইটানের পৃষ্ঠে হাঁটলে কিছুটা স্কুবা ডাইভিংয়ের মতো মনে হবে!”

২০১৯ সালে একটি মডেল প্রস্তাব করেছিল ‘সাউথ ওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট’, যা বছরের পর বছর ধরে মিথেন কীভাবে টাইটানে এতো ঘন হয়ে উঠেছে তার ইঙ্গিত দিয়েছে।এ তত্ত্ব অনুসারে, টাইটানের বায়ুমণ্ডলের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে জৈব পদার্থ উত্তপ্ত হচ্ছে, যা থেকে বেরোচ্ছে নাইট্রোজেন ও মিথেনের মতো কার্বন গ্যাস। গ্যাসটি টাইটানের এমন পৃষ্ঠে চুঁইয়ে পড়ে, যেখানে বায়ুমণ্ডল পুনরায় ঘন হয়ে ওঠে।

এ তত্ত্বটি বিকশিত হয়েছে ২০০৪ সালে টাইটানে পৌঁছানো নাসার ‘ক্যাসিনি-হাইগেনস’ মহাকাশযান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। ২০০৫ সালে টাইটানের পৃষ্ঠে হাইজেনস প্রোব নামার সময় থেকে পরবর্তী ১৩ বছর ধরে এর বায়ুমণ্ডল পরীক্ষা করেছে এটি।

মিলারের নেতৃত্বাধীন গবেষণা দলটি ১০ কিলোবার পর্যন্ত চাপে পাঁচশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জৈব পদার্থ উত্তপ্ত করার জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিল, যেখানে এটি অনুকরণ করেছিল টাইটানের পৃষ্ঠের নীচে পাওয়া অবস্থার। পর্যাপ্ত পরিমাণে মিথেন তৈরি করেছে এ প্রক্রিয়াটি, যা টাইটানের বায়ুমণ্ডলকে আজ যেমন দেখা যাচ্ছে তার মতোই।

সূত্র: এনসাইক্লোপিডিয়া

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular