জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ হয় তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। এই দল কি পারবে দেশের মানুষের আশা ও প্রত্যাশা পূরণ করতে? আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, রাজনৈতিক জোটসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খন্দকার আসিফুজ্জামান
প্রশ্ন : বিগত তেপ্পান্ন-চুয়ান্ন বছরে অসংখ্য দলের আবির্ভাব ঘটেছে। তাঁরা প্রত্যেকেই দেশবাসীকে আশার আলো দেখিয়েছেন। এনসিপির ওপরে বাংলাদেশের মানুষ কেন ভরসা রাখবে?
উত্তর : বিগত তিপ্পান্ন-চুয়ান্ন বছরে বাংলাদেশের গতানুগতিক যে রাজনীতি দেখেছি, এই রাজনীতি কিন্তু মানুষকে অনেক কথা শুনিয়েছে, অনেক কথার ফুলঝুরি আমরা শুনেছি, অনেক আশাও দেখিয়েছে। কিন্তু দিনশেষে এগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে পাইনি। আমরা জনগণের পালস বুঝেই অভ্যুত্থানের প্রতিটি কর্মসূচি দেওয়ার কাজটা করেছি।
এই তরুণ প্রজন্মের যাঁরা নেতৃত্বে রয়েছেন, আমি মনে করি তারা বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটা অ্যাসেট।
সেন্ট্রাল কমিটিতে আমি যাদের দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যখন সৃষ্টি হয়েছে, এক, দুই বা তিনটি ফেসকে সামনে রেখে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে অন্তত এ রকম কোয়ালিটি সম্পন্ন শতাধিক মানুষ আছেন, যাঁরা ধীরে ধীরে এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের সামনে আসবেন এবং আমরা মনে করি, এই মানুষগুলো বাংলাদেশের নেতৃত্বের হাল ধরবেন। এই মানুষগুলোর মৃত্যুর ভয়টা ওই জুলাই অভ্যুত্থানে হারিয়ে গেছে। এই মানুষগুলোর ওপর নেগোসিয়েশনের চাপ ওই জুলাই অভ্যুত্থানে ছিল, কিন্তু তাঁরা করেননি।
এই মানুষগুলোর দেশপ্রেম ছিল বলেই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অনেকেই রাজপথে নেমে এসেছেন। সবারই জীবন হারানোর ভয় ছিল; জীবন হারানোর আশঙ্কা ছিল। আমরা মনে করি, যাঁদের নেতৃত্বে আজকের এই নতুন রাজনৈতিক দল; তাঁরা প্রাথমিক পরীক্ষায় উতরে এসেছেন। আশা করি, আগামী দিনে এই মানুষগুলো জনগণের পরীক্ষায়ও উতরে যাবেন। যদি কোনো কারণে তাঁরা কোনো জায়গায় বাধাগ্রস্ত হন কিংবা উতরাতে না পারেন, আমরাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ওই মানুষটিকে বলব, আপনার এই জায়গায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এই জায়গাগুলোতে কাজ করুন, না হলে আপনাকে পিছিয়ে যেতে হবে।
যোগ্য মানুষটিকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। আমরা মনে করি, আমাদের এই মানসিকতা, চিন্তাধারা, সাহসিকতা, ন্যায়নীতির ওপর চলার যে একটা দৃঢ়তা এবং দিন শেষে দেশপ্রেম—এটাই আমাদের আগামীর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমাদের জনগণের জন্য কাজ করার জন্য যে প্রয়াস, সেই প্রয়াসই সামনে এগিয়ে যেতে পারবে এবং সেটাই হবে আমাদের আগামী বাংলাদেশের রাজনীতি।
প্রশ্ন : সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, প্রস্তুতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কী ভাবছেন?
উত্তর : আমরা মাত্র দুই দিন আগে বাংলাদেশে নতুন একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছি। আমরা মনে করি, একটি রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে এই রাজনৈতিক দলটি যাদের নিয়ে রাজনীতি করে, তাদের কাছে যাওয়া। তারা এই রাজনৈতিক দলটির কাছে কী চায়, সেটি জানা। তারা এই নতুন বাংলাদেশে কী প্রত্যাশা করে, সেটি জানা। তাদের জায়গা থেকে এত দিন ধরে তারা কী অসুবিধাগুলো ফেস করছে, কী দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে গেছে, এই জিনিসগুলো জানা। দিনশেষে আমরা যদি জনগণের রাজনীতি করতে চাই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জনগণের কাছে গিয়ে জনগণের পরামর্শটা নেওয়া, আমরা কীভাবে জনগণের জন্য কাজ করতে পারি, দেশের জন্য কাজ করতে পারি। সেই জায়গা থেকে আমাদের টিম খুব দ্রুত এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু করবে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় আমাদের টিম চলে যাবে। আমরা জনগণের মনের কথাগুলো শুনতে চাই এবং সেই অনুযায়ী আমাদের কর্মপরিকল্পনা সাজাতে চাই।
আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি, এত দিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা কালচার ছিল যে, নেতারা আসলে ইলেকশনের আগে বড় বড় কয়েকটা বক্তব্য দিতে এলাকায় যেতেন, ইলেকশন শেষ হয়ে গেলে নেতাদের আর খুঁজে পাওয়া যেত না। আমরা মনে করি, ঢাকাকেন্দ্রিক নেতাদের বসবাস, খালি নির্বাচনের সময় এলাকায় যাওয়া—এই ধারা থেকে বেরিয়ে হয়ে আসতে হবে। যে যে এলাকার নেতা হতে চান, তাঁকে ওই এলাকায় বেশি সময় দিতে হবে। এটাই হওয়া উচিত। দিনশেষে গণমানুষের ব্যথা যদি আমরা না বুঝি; তাহলে গণমানুষের জন্য কাজ করা সম্ভব নয় এবং আমরা মনে করি, সে অনুযায়ী আমাদের আগামী রাজনীতির কর্মপরিকল্পনা নির্ধারিত হবে এবং খুব দ্রুত দু-এক দিনের মধ্যে সেটির বাস্তবায়ন শুরু হবে।
প্রশ্ন : শোনা যাচ্ছে এনসিপি আর বিএনপির মধ্যে দর-কষাকষি চলছে, বিএনপির সঙ্গে কি আপনারা জোট করার চিন্তা করছেন?
উত্তর : কোনো একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিলিত হয়ে রাজনীতি করা বা নির্বাচন করব—এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো পরিকল্পনা আমরা করিনি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমরা যেহেতু পুরো বাংলাদেশে গেড়ে বসা হাসিনার রেজিমের পতন ঘটাতে পেরেছি, ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা আমাদের জায়গা থেকে বিশ্বাস করি, আমরা ৩০০ আসনে কাজ করতে পারব। তো সেই জায়গা থেকে এখন আমাদের কাজ হচ্ছে মানুষের কাছে যাওয়া, ৩০০ আসনে যাওয়া। আমাদের জায়গা থেকে ইলেকশনের আগে এটা নির্ধারণ করতে হবে, আমরা কোন পদ্ধতিতে ইলেকশনটি করব। কিন্তু আমরা মনে করি, এই তরুণ প্রজন্ম ৩০০ আসনের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ৩০০ জন মানুষ পাবে। ধরেন কয়েক জায়গায় পেলাম না, কিন্তু এতেই তো সব কিছু শেষ না। এই পথচলা তো মাত্র শুরু। আমরা এই পথচলায় চলতে প্রস্তুত এবং আমরা যদি সত্ থাকি, আমাদের যদি দেশপ্রেম থাকে, আমরা যদি ন্যায়নীতির পথে অটল থাকি, তাহলে আমরা সামগ্রিকভাবে শুধু এই ইলেকশন নয়; যেকোনো ইলেকশনে ফাইট দেওয়ার জন্য সচেষ্ট থাকব।
প্রশ্ন : এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
উত্তর : আপনাকেও ধন্যবাদ