শিরোনাম :
Logo মাহে রমজান এবং স্বাস্থ্যসচেতনতা Logo ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান সাইফুলের বাসা থেকে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জব্দ Logo ম্যাটস শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি Logo শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে ৫ শতাংশ কোটা পাবেন অভ্যুত্থানে হতাহতদের সন্তানরা Logo জাতীয় পতাকা উত্তোলন দিবস রোববার Logo চাঁদপুর জজ কোর্টের নতুন ভিপি কৌশলী হলেন অ্যাড. আলম খান মঞ্জু Logo উপদেষ্টা মাহফুজ সম্পর্কে অজানা তথ্য দিলেন তার শিক্ষক Logo নির্বাচন দেরিতে হলে ষড়যন্ত্র বাড়বে: সালাহ উদ্দিন আহমেদ Logo পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় স্থানীয়দের সহায়তায় ৫ ডাকাত সদস্য আটক; Logo জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনবরণ ও বিতর্ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগবিতণ্ডার পর ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কী?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বাগবিতণ্ডার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বমহলে। বিশেষ করে, এই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে ঐতিহাসিক চুক্তি বাতিল হওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে একটি বড় সঙ্কটের ইঙ্গিত দেয়। এর মধ্যে ট্রাম্পের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা, যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, তাও একটি গভীর রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দিতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে, এই দ্বন্দ্ব ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্য কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে নানা আলোচনা চলছে। যদিও ওই ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার এক্স একাউন্টে লিখেছেন, “যখন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন তখন তিনি ফিরে আসতে পারেন।” এই বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য, কারণ এটি একটি কৌশলগত সংকেত দেয় যে, ইউক্রেনের শর্ত ও পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ সমাধান থেকে অনেক দূরে।

ইউক্রেনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভ্লাদিমির ফেসেঙ্ক বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, “এখন ইউক্রেনকে নিয়ে মার্কিন মনোভাব কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে ভালো কিছু হবে এটাও ধারণা করাও ঠিক হবে না”।

ফেসেঙ্ক বলেন, “গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বাকবিতণ্ডার পর মার্কিন প্রশাসন হয়তো ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা কমিয়ে দিতে পারে”।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্কের প্রকাশ্য ভাঙন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সমস্যা তৈরি হওয়ারও ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ন্যাটো কেন সংকটে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের শাসনামলে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে গত তিন বছর ধরে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে সমর্থন জানিয়ে আসার নীতি গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একটি বৈঠকেই এই নীতি একেবারে উল্টে গেছে। এদিন ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তা হয়নি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির সম্পর্ক আগে থেকেই খুব ভালো ছিল না। শুক্রবার ওভাল অফিসে উভয় নেতার মধ্যে তীব্র তর্ক-বিতর্ক হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে একজন স্বৈরশাসক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, একটি মিথ্যার ওপর রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেছে ইউক্রেন।

শুক্রবারের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সঙ্কটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইউক্রেনের বাইরে ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার নিয়ে আরও সন্দেহ ও প্রশ্ন উঠবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন? সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ন্যাটোর কোনও সদস্য রাষ্ট্রের ওপর হামলা হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য হবে।

ন্যাটো (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন) একটি সামরিক জোট। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই জোটের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৩২টি। ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাতাকালীন চুক্তি অনুযায়ী, যদি কোনো সদস্য রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ করা হয়, তবে তা গোটা জোটের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে এবং অন্য সদস্য দেশগুলো সেই রাষ্ট্রের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।

বিবিসির সাংবাদিক জেরেমি বোয়েন মনে করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে ইউক্রেনের ওপর বড় ধরনের চাপ দিচ্ছেন। অথচ পুতিনকে বড় ছাড় দিচ্ছেন। যার মূল্য হয়তো ইউক্রেনকেই দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা এখন অনেকটা নিচে নেমে গেছে। যেটি আগে অগ্রাধিকার ছিল। এই ঘটনার পর ইউরোপীয় দেশগুলোও তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

বোয়েন বলেন, “এটি শুধু খনিজসম্পদ বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরের অস্বীকৃতির কারণে ঘটেনি। ইউক্রেনিয়ানরা বিশ্বাস করে, তারা জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধ করছে – এবং পুতিনকে প্রতিহত না করা হলে তিনি যুদ্ধ শেষ করার যে কোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন। এই কারণেই জেলেনস্কি বারবার মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছেন।”

যুক্তরাষ্ট্র কী অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করবে?
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলার পর যুদ্ধ সহায়তা হিসেবে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের লাখো কোটি ডলারের সহায়তা পাঠানোর ঘোর বিরোধী ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প এ নিয়ে শুরু থেকেই সরব ছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে দ্রুত এই যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন।

যদিও কীভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন তা নিয়ে তখন ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু বলেননি। গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন।

জেলেনস্কির পাশে দাঁড়াতে একজোট হচ্ছে ইউরোপ

তখন থেকেই ধারণা করা যাচ্ছিল ইউক্রেনকে বাদ দিয়েই তিনি শান্তি আলোচনা শুরু করতে চলেছেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে কিয়েভ ক্ষুব্ধ হয়। ইউরোপিয়ান দেশগুলোও হতবাক হয়। এরপর থেকেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের প্রতি যেকোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চিত করার অনুরোধ করতে থাকেন।

আবার এমনও বলা হচ্ছিল, উভয় পক্ষের কেউ যদি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে তাহলে পরিণতি কি হতে পারে তাও যেন চুক্তিতে নিশ্চিত করা থাকে। তখন ট্রাম্প তাদের এই অনুরোধ উপেক্ষা করে গেছেন এবং বলেছেন, তিনি এ ধরনের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না।

তখনই ট্রাম্প বরং জোর দিয়ে বলেছেন, “পুতিন তাকে যথেষ্ট ‘সম্মান’ করেন। তাই চুক্তি লঙ্ঘন করবেন না”। শুক্রবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের একপর্যায়ে ট্রাম্প এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স অভিযোগ করেন, (রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে) যুক্তরাষ্ট্র যে সমর্থন দিয়েছে তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট “কৃতজ্ঞতা প্রকাশ” করেননি।

এ নিয়ে উভয় পক্ষের বাগবিতণ্ডার পর জেলেনস্কি ও তার প্রতিনিধি দলকে হোয়াইট হাউস থেকে চলে যেতে বলা হয় বলে জানিয়েছেন ট্রাম্পের প্রেস সচিব।

কূটনীতিক সম্পর্কে প্রভাব কী?
শুক্রবারের বৈঠকে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ওয়াশিংটনের সমর্থন ধরে রাখার চেষ্টা করছিলেন জেলেনস্কি। কিন্তু বৈঠকের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। বৈঠকের পর এক্স (সাবেক টুইটার) এ এক পোস্টে লিখেন- “যুক্তরাষ্ট্র রুশ নেতার সাথে সংলাপ চালাতে চায় তা বোঝাই যায়”।

এর আগের আরেকটি বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জেলেনস্কি লিখেছেন, “আমাদের পক্ষে আরও দৃঢ় অবস্থান নিন”। যদিও গত দুই সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পুতিন তাদের প্রতিনিধিদের সৌদি আরব ও ইস্তাম্বুলে আলোচনা চালানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন। যার উদ্দেশ্য ছিল কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠন। তবে সেই আলোচনায় বাদ রাখা হয়েছিল ইউক্রেনকে।

ব্রিটেনের রাজনৈতিক নেতা নাইজেল ফারাজ হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে গণমাধ্যমের সামনে তর্কাতর্কির ঘটনাটিকে দুঃখজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ফারাজের মতে, এই ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই প্রকাশ্য বিরোধ আসলে একটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশল। এতে হয় জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মানতে বাধ্য করা, নতুবা সংকট তৈরি করে পরবর্তী যে কোনো ঘটনার জন্য তাকে দায়ী করার প্রেক্ষাপট তৈরি করা হলো।

যদি ট্রাম্প আলোচনার ব্যর্থতার পর ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা স্থগিত করেন, তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। প্রশ্ন হলো, তারা কতটা কার্যকরভাবে এবং কতদিন লড়তে পারবে?

‘সবচেয়ে অন্ধকার দিন’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে জেলেনস্কির এই বাকবিতণ্ডার ঘটনার পর এ নিয়ে হতাশা দেখা গেছে ইউক্রেনিয়ানদের মাঝে। ইউক্রেনের বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্রের সাথে সম্পর্ক হঠাৎ করেই তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে।

ইউক্রেনের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি ভাষার গণমাধ্যম ‘দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ তাদের সম্পাদকীয়তে লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন রাশিয়ার সঙ্গে একত্র হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এতে বলা হয়, এখন সময় এসেছে স্পষ্ট করে বলার। আমেরিকার নেতৃত্বে যুদ্ধের পক্ষ বদল হয়েছে।

সাংবাদিক মুস্তাফা নাইয়েম বলেছেন, “ট্রাম্প প্রশাসন গোপন চুক্তি ও কূটনৈতিক হাত মেলানোর পথে সবচেয়ে বিরক্তিকর বাধা মনে করে ইউক্রেনকে। জেলেনস্কি তার অবস্থানে অটল ছিলেন এবং তিনি এমন ‘গৌরবের সঙ্গে’ দাঁড়িয়ে ছিলেন, যা তার প্রতিপক্ষরা বুঝতে পারছে না”।

সাংবাদিক ডেনিস কাজানস্কি বলেছেন, “জেলেনস্কিকে এমন এক পরিস্থিতিতে ফেলা হয়েছিল, যেখানে ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাকে অকৃতজ্ঞ হিসেবে অভিযুক্ত করেছিলেন। যদি তিনি চুপ থেকে মাথা নাড়তেন, তবে সেটি অপমানজনক মনে হতো। কিন্তু তিনি প্রতিবাদ করায় তাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অসম্মান দেখানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।”

উত্তেজনা-তর্কে পণ্ড ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠক, ফিরে গেলেন জেলেনস্কি

সামরিক বিশ্লেষক মাইকোলা বিয়েলিয়েস্কোভ বলেন, এমন অবস্থার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক পুনর্গঠন হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য মার্কিন সমর্থন এবং পারস্পরিক সুবিধাজনক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতি ইউক্রেনের জন্য একটি কঠিন সময় এবং এটি একটি অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যারা এখন ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্বে আছেন, তাদের জন্য আমার সহানুভূতি আছে। গতকাল (শুক্রবার) আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সবচেয়ে অন্ধকার দিন ছিল।

তার বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এই সমস্যার সমাধান সহজ হবে না এবং ভবিষ্যতে আরও কূটনৈতিক দক্ষতার প্রয়োজন হতে পারে। এই “অন্ধকার দিন” থেকে ইউক্রেন কীভাবে বেরিয়ে আসবে এবং কীভাবে তারা তাদের বিদেশী সম্পর্ক, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এটাই দেখার বিষয়।

ট্যাগস :

মাহে রমজান এবং স্বাস্থ্যসচেতনতা

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগবিতণ্ডার পর ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কী?

আপডেট সময় : ০১:৫৮:২৫ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বাগবিতণ্ডার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বমহলে। বিশেষ করে, এই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে ঐতিহাসিক চুক্তি বাতিল হওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে একটি বড় সঙ্কটের ইঙ্গিত দেয়। এর মধ্যে ট্রাম্পের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা, যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, তাও একটি গভীর রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দিতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে, এই দ্বন্দ্ব ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্য কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে নানা আলোচনা চলছে। যদিও ওই ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার এক্স একাউন্টে লিখেছেন, “যখন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন তখন তিনি ফিরে আসতে পারেন।” এই বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য, কারণ এটি একটি কৌশলগত সংকেত দেয় যে, ইউক্রেনের শর্ত ও পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ সমাধান থেকে অনেক দূরে।

ইউক্রেনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভ্লাদিমির ফেসেঙ্ক বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, “এখন ইউক্রেনকে নিয়ে মার্কিন মনোভাব কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে ভালো কিছু হবে এটাও ধারণা করাও ঠিক হবে না”।

ফেসেঙ্ক বলেন, “গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বাকবিতণ্ডার পর মার্কিন প্রশাসন হয়তো ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা কমিয়ে দিতে পারে”।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্কের প্রকাশ্য ভাঙন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সমস্যা তৈরি হওয়ারও ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ন্যাটো কেন সংকটে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের শাসনামলে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে গত তিন বছর ধরে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে সমর্থন জানিয়ে আসার নীতি গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একটি বৈঠকেই এই নীতি একেবারে উল্টে গেছে। এদিন ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তা হয়নি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির সম্পর্ক আগে থেকেই খুব ভালো ছিল না। শুক্রবার ওভাল অফিসে উভয় নেতার মধ্যে তীব্র তর্ক-বিতর্ক হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে একজন স্বৈরশাসক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, একটি মিথ্যার ওপর রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেছে ইউক্রেন।

শুক্রবারের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সঙ্কটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইউক্রেনের বাইরে ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার নিয়ে আরও সন্দেহ ও প্রশ্ন উঠবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন? সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ন্যাটোর কোনও সদস্য রাষ্ট্রের ওপর হামলা হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য হবে।

ন্যাটো (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন) একটি সামরিক জোট। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই জোটের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৩২টি। ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাতাকালীন চুক্তি অনুযায়ী, যদি কোনো সদস্য রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ করা হয়, তবে তা গোটা জোটের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে এবং অন্য সদস্য দেশগুলো সেই রাষ্ট্রের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।

বিবিসির সাংবাদিক জেরেমি বোয়েন মনে করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে ইউক্রেনের ওপর বড় ধরনের চাপ দিচ্ছেন। অথচ পুতিনকে বড় ছাড় দিচ্ছেন। যার মূল্য হয়তো ইউক্রেনকেই দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা এখন অনেকটা নিচে নেমে গেছে। যেটি আগে অগ্রাধিকার ছিল। এই ঘটনার পর ইউরোপীয় দেশগুলোও তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

বোয়েন বলেন, “এটি শুধু খনিজসম্পদ বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরের অস্বীকৃতির কারণে ঘটেনি। ইউক্রেনিয়ানরা বিশ্বাস করে, তারা জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধ করছে – এবং পুতিনকে প্রতিহত না করা হলে তিনি যুদ্ধ শেষ করার যে কোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন। এই কারণেই জেলেনস্কি বারবার মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছেন।”

যুক্তরাষ্ট্র কী অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করবে?
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলার পর যুদ্ধ সহায়তা হিসেবে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের লাখো কোটি ডলারের সহায়তা পাঠানোর ঘোর বিরোধী ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প এ নিয়ে শুরু থেকেই সরব ছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে দ্রুত এই যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন।

যদিও কীভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন তা নিয়ে তখন ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু বলেননি। গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন।

জেলেনস্কির পাশে দাঁড়াতে একজোট হচ্ছে ইউরোপ

তখন থেকেই ধারণা করা যাচ্ছিল ইউক্রেনকে বাদ দিয়েই তিনি শান্তি আলোচনা শুরু করতে চলেছেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে কিয়েভ ক্ষুব্ধ হয়। ইউরোপিয়ান দেশগুলোও হতবাক হয়। এরপর থেকেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের প্রতি যেকোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চিত করার অনুরোধ করতে থাকেন।

আবার এমনও বলা হচ্ছিল, উভয় পক্ষের কেউ যদি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে তাহলে পরিণতি কি হতে পারে তাও যেন চুক্তিতে নিশ্চিত করা থাকে। তখন ট্রাম্প তাদের এই অনুরোধ উপেক্ষা করে গেছেন এবং বলেছেন, তিনি এ ধরনের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না।

তখনই ট্রাম্প বরং জোর দিয়ে বলেছেন, “পুতিন তাকে যথেষ্ট ‘সম্মান’ করেন। তাই চুক্তি লঙ্ঘন করবেন না”। শুক্রবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের একপর্যায়ে ট্রাম্প এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স অভিযোগ করেন, (রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে) যুক্তরাষ্ট্র যে সমর্থন দিয়েছে তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট “কৃতজ্ঞতা প্রকাশ” করেননি।

এ নিয়ে উভয় পক্ষের বাগবিতণ্ডার পর জেলেনস্কি ও তার প্রতিনিধি দলকে হোয়াইট হাউস থেকে চলে যেতে বলা হয় বলে জানিয়েছেন ট্রাম্পের প্রেস সচিব।

কূটনীতিক সম্পর্কে প্রভাব কী?
শুক্রবারের বৈঠকে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ওয়াশিংটনের সমর্থন ধরে রাখার চেষ্টা করছিলেন জেলেনস্কি। কিন্তু বৈঠকের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। বৈঠকের পর এক্স (সাবেক টুইটার) এ এক পোস্টে লিখেন- “যুক্তরাষ্ট্র রুশ নেতার সাথে সংলাপ চালাতে চায় তা বোঝাই যায়”।

এর আগের আরেকটি বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জেলেনস্কি লিখেছেন, “আমাদের পক্ষে আরও দৃঢ় অবস্থান নিন”। যদিও গত দুই সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পুতিন তাদের প্রতিনিধিদের সৌদি আরব ও ইস্তাম্বুলে আলোচনা চালানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন। যার উদ্দেশ্য ছিল কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠন। তবে সেই আলোচনায় বাদ রাখা হয়েছিল ইউক্রেনকে।

ব্রিটেনের রাজনৈতিক নেতা নাইজেল ফারাজ হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে গণমাধ্যমের সামনে তর্কাতর্কির ঘটনাটিকে দুঃখজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ফারাজের মতে, এই ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই প্রকাশ্য বিরোধ আসলে একটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশল। এতে হয় জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মানতে বাধ্য করা, নতুবা সংকট তৈরি করে পরবর্তী যে কোনো ঘটনার জন্য তাকে দায়ী করার প্রেক্ষাপট তৈরি করা হলো।

যদি ট্রাম্প আলোচনার ব্যর্থতার পর ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা স্থগিত করেন, তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। প্রশ্ন হলো, তারা কতটা কার্যকরভাবে এবং কতদিন লড়তে পারবে?

‘সবচেয়ে অন্ধকার দিন’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে জেলেনস্কির এই বাকবিতণ্ডার ঘটনার পর এ নিয়ে হতাশা দেখা গেছে ইউক্রেনিয়ানদের মাঝে। ইউক্রেনের বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্রের সাথে সম্পর্ক হঠাৎ করেই তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে।

ইউক্রেনের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি ভাষার গণমাধ্যম ‘দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ তাদের সম্পাদকীয়তে লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন রাশিয়ার সঙ্গে একত্র হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এতে বলা হয়, এখন সময় এসেছে স্পষ্ট করে বলার। আমেরিকার নেতৃত্বে যুদ্ধের পক্ষ বদল হয়েছে।

সাংবাদিক মুস্তাফা নাইয়েম বলেছেন, “ট্রাম্প প্রশাসন গোপন চুক্তি ও কূটনৈতিক হাত মেলানোর পথে সবচেয়ে বিরক্তিকর বাধা মনে করে ইউক্রেনকে। জেলেনস্কি তার অবস্থানে অটল ছিলেন এবং তিনি এমন ‘গৌরবের সঙ্গে’ দাঁড়িয়ে ছিলেন, যা তার প্রতিপক্ষরা বুঝতে পারছে না”।

সাংবাদিক ডেনিস কাজানস্কি বলেছেন, “জেলেনস্কিকে এমন এক পরিস্থিতিতে ফেলা হয়েছিল, যেখানে ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাকে অকৃতজ্ঞ হিসেবে অভিযুক্ত করেছিলেন। যদি তিনি চুপ থেকে মাথা নাড়তেন, তবে সেটি অপমানজনক মনে হতো। কিন্তু তিনি প্রতিবাদ করায় তাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অসম্মান দেখানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।”

উত্তেজনা-তর্কে পণ্ড ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠক, ফিরে গেলেন জেলেনস্কি

সামরিক বিশ্লেষক মাইকোলা বিয়েলিয়েস্কোভ বলেন, এমন অবস্থার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক পুনর্গঠন হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য মার্কিন সমর্থন এবং পারস্পরিক সুবিধাজনক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতি ইউক্রেনের জন্য একটি কঠিন সময় এবং এটি একটি অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যারা এখন ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্বে আছেন, তাদের জন্য আমার সহানুভূতি আছে। গতকাল (শুক্রবার) আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সবচেয়ে অন্ধকার দিন ছিল।

তার বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এই সমস্যার সমাধান সহজ হবে না এবং ভবিষ্যতে আরও কূটনৈতিক দক্ষতার প্রয়োজন হতে পারে। এই “অন্ধকার দিন” থেকে ইউক্রেন কীভাবে বেরিয়ে আসবে এবং কীভাবে তারা তাদের বিদেশী সম্পর্ক, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এটাই দেখার বিষয়।