নিউজ ডেস্ক:
কুরবা দাগলি। প্রায় ২০ বছর বয়সী তুরস্কের এই নারী তায়কোয়ান্ডো চ্যাম্পিয়ন। এ খেলায় তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন হিজাব পরে। অর্থাৎ খেলার সময়ও তার মাথায় হিজাব ছিল। সম্প্রতি তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে তুরস্কে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত দশম বিশ্ব তায়কোয়ান্ডো শিরোপা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় পেরুর রাজধানী লিমায়। দাগলি বলেন, ‘খেলায় জেতা বড় কথা নয় আমার কাছে। বেশি গুরুত্ব দিয়েছি খেলাধুলায় মেয়েদের হিজাব পরাকে। আর অন্যান্য সময় তো পরতেই হবে।’
এ দিকে তুর্কি সমাজে প্রাধান্য পেয়েছে সেকুলারিজমের পাশাপাশি ধর্মীয় দিকও। দেশটিতে মেয়েদের নৈতিকতার মতো বিষয় বা আচারগুলো বারবার জোর আলোচনায় আসছে ইসলামপন্থী দলের পুনরুত্থানের মাধ্যমে। খোদ তুর্কি উপপ্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রোজার মাসে মেয়েদের পরপুরুষের সামনে আসা অনুচিত। গণমাধ্যমও বলছে, হিজাব পরা কোনো কিছুর ক্ষেত্রে বাধা নয়। অনেকে বলেছেন, সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাগলির অবস্থান দৃঢ়। দাগলি বলেন, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন করেছি দেশ ও দলকে। ব্যাপক আলোচনায় আসা জরুরি আমাদের সফলতা।’
দাগলির এই অর্জন নিয়ে উৎসবে মেতেছে তুর্কির গণমাধ্যম। তবে সবার শিরোপাকে অতিক্রম করে কুরবা দাগলি এসেছেন সংবাদ শিরোনামে। দাগলি ও এমিরহাম মুরান একটি করে স্বর্ণপদক জিতেছেন পোমসা দল ক্যাটাগরিতে। হিজাব পরা অবস্থায় তায়কোয়ান্ডো শিরোপা অর্জনকারী কুরবা দাগলি পুরনো ও সেকেলে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি, নব্য ইসলামি আদর্শ ও জাতীয়পর্যায়ে একশ্রেণীর মানুষের অহমিকাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।
দাগলি ব্যাপক মিডিয়া সমর্থন পেয়ে আসছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। অসংখ্য সাক্ষাৎকার তার বিজয়ের আনন্দকে আলোকিত করে। তিনি বলেন, ‘চেষ্টায় কোনো ত্রুটি করিনি বলেই মনে হচ্ছে। তুর্কির আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্র আবির্ভূত হওয়াতে হিজাবি নারীরা ধর্মনিরপেক্ষতার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছুটা কোণঠাসা।’ নৃতত্ত্ববিদ সেরটাক সেহলিকোগলু বলেছেন, ‘নিজেদের স্বাস্থ্যবান, সুশৃঙ্খল ও স্বাধীন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন তুর্কি নারীরা।’
এক সাক্ষাৎকারে দাগলি বলেছেন, ‘এক শ্রেণীর মানুষ আমার হিজাব পরাকে নানা সমালোচনা করছেন। আমি এসবে গুরুত্ব দিই না। আমি আমার স্বপ্নপূরণ করেছি। প্রতি সকালে উঠে আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি।’ অনেকে বলেছেন, এক শ্রেণীর লোক দাগলিকে সমর্থন দেন বলে আমরা তার জন্য গর্বিত। অনেকে নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য কত কিছুই না বলেন ও করেন। অনেকে হিজাব পরার গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য রীতিমতো অনুষ্ঠান পালন করেন।
হিজাব পরেও বিশ্বসেরা খেতাব পাওয়ার পর দাগলি তার রুচিকে তুলে ধরার জন্য দৃঢ়তার সাথে লড়াই করেছেন। প্রকৃতপক্ষে দাগলি রক্ষণশীল ও সরকারসমর্থিত গণমাধ্যম থেকে পুরস্কৃত হন। তুরস্কের কলাম লেখক মেভলুট টেজেল গণমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমরা বড় মাপের ধন্যবাদ জানাই কুরবাকে। কারণ তিনি প্রমাণ করেন, বিশ্বসেরা অর্জনে মাথায় স্কার্প পরা কোনো বাধা নয়। আমি বিশ্বাস করি, তার কীর্তি অপরাপর হিজাবি বোনেরা যারা নাকি ক্রীড়াজগতে হিজাব পরতে চান না, তাদেরও দৃঢ়ভাবে উৎসাহিত করবে।’
তাকভিম নামে ট্যাবলয়েড পত্রিকায় এই নারী খেলোয়াড়কে স্বর্ণের কুরবা অভিহিত করা হয়। একইভাবে রক্ষণশীল অ্যানি আকিতও দাগলির প্রশংসা করেন। এ সংক্রান্ত এক ভিডিওচিত্রের নিচে মন্তব্য করেন, স্কার্ফ পরা সত্ত্বেও দাগলি চ্যাম্পিয়ন হন। একজন এই বলে দাগলির গুরুত্বকে আরো বাড়িয়ে দেন যে, নিষ্পাপ যারাÑ তুরস্কের মুসলিম তারা। এই কৃতকার্যে গর্ববোধ না করা মানে ইসলামি বিশ্বাসের অবমাননা করা। দাগলির প্রশংসায় অনেকে এভাবে বলেছেন, বিশ্বাস ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞা থাকলে বিজয় নিশ্চিত। অনেকে মনে করেন, দাগলির বিজয় দেখে দেশটির রাষ্ট্রপতি সব খেলোয়াড়ের প্রতি যতœবান হবেন। দাগলি যখন ভবিষ্যতে আরো বৃহত্তর সফলতার কথা ঘোষণা করেন, তখন তার দোষ অšে¦ষণকারীরা চুপ হয়ে যান। তুরস্ক বা অন্য কোনো মুসলিম দেশে নারী ক্রীড়াবিদদের ওপর এ ধরনের আক্রমণ নতুন কোনো ঘটনা নয়।