শিরোনাম :
Logo ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার Logo বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সন্দেহে ভারতে আটক ৪৪৮ জন Logo ফ্রান্সে ভয়াবহ দাবানল, আহত শতাধিক মানুষ Logo জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা Logo বীরগঞ্জে দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়ম, ৬০ হাজার টাকা জরিমানা Logo দিনমজুরি করেও স্বপ্ন দেখেছে আইনজীবী হওয়ার, পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলেও পড়ালেখার ভবিষ্যৎ টাকার অভাবে অনিশ্চিৎ Logo কুবিতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনের দায়িত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাকর্মীরা! Logo মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা Logo সুপারস্টার ডি এ তায়েব অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী” শিশু শিল্পী টুনটুনির জন্মদিন উদযাপন Logo রাবিতে ডাইনিং সংকটসহ ৫ দফা দাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

ফেনীতে বাঁধ ভেঙে ঢুকছে পানি, ৩০ গ্রাম প্লাবিত

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৫:০৩:৪৬ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
  • ৭১৪ বার পড়া হয়েছে

তিনদিনের টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে ফেনীর মুহুরী কহুয়া সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অন্তত ১৫ স্থানে ভেঙে গেছে। বৃষ্টিপাত কিছুটা কমলেও বাংলাদেশ -ভারত টাইবাঁধের সংযোগস্থল দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে দুই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, জেলায় সোমবার সকাল ৯টা হতে আজ বুধবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত ৪৮ ঘন্টায় ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দেশের সর্বাধিক ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ফেনীতে। তবে রাত থেকে ভারী হতে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১৯৮ মিলিমিটার। এতে নদীর পানিও কিছুটা কমেছে।

ফেনী পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন জানান,বৃষ্টিপাত কমায় ফেনী শহর এলাকার পানি প্রধান প্রধান সড়ক থেকে নেমে গেছে। তবে শহরের নিচু এলাকা এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে।পরিছন্ন কর্মীরা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মুহুরী নদীর পরশুরাম গেজ ষ্টেশন মঙ্গলবার সকাল ৬টায় পানির লেভেল ৬.৯৭ মিটার, রাত ৮টায় ১৩.৮৫ মিটার ছিল। বিপদসীমা ১২.৫৫ মিটার। এই সময়ে প্রায় ৭ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।যা বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। দীর্ঘ সময় বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর ডান তীরে জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ- ভারত টাই বাঁধের সংযোগস্থল দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

মুহুরী নদীর উভয় তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে পরশুরাম উপজেলায়, জঙ্গলগোনা-২ টি (মুহুরী, ডান তীর), উত্তর শালধর-১টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), নোয়াপুর -১ টি (মুহুরী নদীর বাম তীর), পশ্চিম অলকা-১ টি (মুহুরী নদীর বাম তীর), ডি এম সাহেবনগর-১ টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর), পশ্চিম গদানগর-১ টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর), দক্ষিণ বেড়াবাড়ীয়া -১ টি (কহুয়া নদীর বাম তীর), পূর্ব সাতকুচিয়া-১ টি (কহুয়া নদীর ডান তীর), উত্তর টেটেশ্বর-১টি (কহুয়া নদীর বাম তীর) সহ ১০ টি স্থানে ভাঙন হয়েছে এবং ফুলগাজী উপজেলায় দেড়পাড়া-২ টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), শ্রীপুর-১টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), উত্তর দৌলতপুর -১ টি (কহুয়া নদীর ডান তীর), কমুয়া-১ টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর) সহ ৫ টি, সর্বমোট ১৫ টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বাসসকে জানান,প্রবল বেগে ভারতের উজান থেকে পানি আসায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে পানি উপচিয়ে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। সবশেষ সকাল ৯ টায় পানির লেভেল ১৩.৩১ মিটার।দুপুর থেকে বিপদ সীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বাসসকে জানান, জেলার পরশুরামে অন্তত ১৫ টি ও ফুলগাজীতে ১৩ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুই উপজেলায় ১৩১ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২ শতাধিক মানুষ দুই শতাধিক গবাদি পশু আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলার ছয় উপজেলায় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনিটরিং এর জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।তিনি সার্বক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরেজমিন খোঁজখবর রাখছেন।

এদিকে পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বাসসকে জানান,পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।জেলার সব থানায় পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসক সহ তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক ওসমান গনি রাসেল জানান, জেলার স্বেচ্ছাসেবকদের কয়েকটি টিম ইতিমধ্যে ফুলগাজী ও পরশুরামে অবস্থান করছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও মালামাল সরিয়ে নিতে তারা সাহায্য করছেন। এছাড়া জেলা সদরেও স্বেচ্ছাসেবকরা তৎপরতা চালাচ্ছেন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

ফেনীতে বাঁধ ভেঙে ঢুকছে পানি, ৩০ গ্রাম প্লাবিত

আপডেট সময় : ০৫:০৩:৪৬ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

তিনদিনের টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে ফেনীর মুহুরী কহুয়া সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অন্তত ১৫ স্থানে ভেঙে গেছে। বৃষ্টিপাত কিছুটা কমলেও বাংলাদেশ -ভারত টাইবাঁধের সংযোগস্থল দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে দুই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, জেলায় সোমবার সকাল ৯টা হতে আজ বুধবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত ৪৮ ঘন্টায় ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দেশের সর্বাধিক ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ফেনীতে। তবে রাত থেকে ভারী হতে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১৯৮ মিলিমিটার। এতে নদীর পানিও কিছুটা কমেছে।

ফেনী পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন জানান,বৃষ্টিপাত কমায় ফেনী শহর এলাকার পানি প্রধান প্রধান সড়ক থেকে নেমে গেছে। তবে শহরের নিচু এলাকা এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে।পরিছন্ন কর্মীরা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মুহুরী নদীর পরশুরাম গেজ ষ্টেশন মঙ্গলবার সকাল ৬টায় পানির লেভেল ৬.৯৭ মিটার, রাত ৮টায় ১৩.৮৫ মিটার ছিল। বিপদসীমা ১২.৫৫ মিটার। এই সময়ে প্রায় ৭ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।যা বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। দীর্ঘ সময় বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর ডান তীরে জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ- ভারত টাই বাঁধের সংযোগস্থল দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

মুহুরী নদীর উভয় তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে পরশুরাম উপজেলায়, জঙ্গলগোনা-২ টি (মুহুরী, ডান তীর), উত্তর শালধর-১টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), নোয়াপুর -১ টি (মুহুরী নদীর বাম তীর), পশ্চিম অলকা-১ টি (মুহুরী নদীর বাম তীর), ডি এম সাহেবনগর-১ টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর), পশ্চিম গদানগর-১ টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর), দক্ষিণ বেড়াবাড়ীয়া -১ টি (কহুয়া নদীর বাম তীর), পূর্ব সাতকুচিয়া-১ টি (কহুয়া নদীর ডান তীর), উত্তর টেটেশ্বর-১টি (কহুয়া নদীর বাম তীর) সহ ১০ টি স্থানে ভাঙন হয়েছে এবং ফুলগাজী উপজেলায় দেড়পাড়া-২ টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), শ্রীপুর-১টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), উত্তর দৌলতপুর -১ টি (কহুয়া নদীর ডান তীর), কমুয়া-১ টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর) সহ ৫ টি, সর্বমোট ১৫ টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বাসসকে জানান,প্রবল বেগে ভারতের উজান থেকে পানি আসায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে পানি উপচিয়ে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। সবশেষ সকাল ৯ টায় পানির লেভেল ১৩.৩১ মিটার।দুপুর থেকে বিপদ সীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বাসসকে জানান, জেলার পরশুরামে অন্তত ১৫ টি ও ফুলগাজীতে ১৩ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুই উপজেলায় ১৩১ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২ শতাধিক মানুষ দুই শতাধিক গবাদি পশু আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলার ছয় উপজেলায় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনিটরিং এর জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।তিনি সার্বক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরেজমিন খোঁজখবর রাখছেন।

এদিকে পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বাসসকে জানান,পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।জেলার সব থানায় পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসক সহ তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক ওসমান গনি রাসেল জানান, জেলার স্বেচ্ছাসেবকদের কয়েকটি টিম ইতিমধ্যে ফুলগাজী ও পরশুরামে অবস্থান করছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও মালামাল সরিয়ে নিতে তারা সাহায্য করছেন। এছাড়া জেলা সদরেও স্বেচ্ছাসেবকরা তৎপরতা চালাচ্ছেন।