শিরোনাম :
Logo কয়রায় যৌথবাহিনীর চেকপোস্ট Logo লক্ষ্মীপুরে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে ইসলামী আন্দোলন নেতৃবৃন্দের নগদ অর্থ প্রদান Logo বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চাঁদপুরে স্মরণকালের বর্ণাঢ্য র‌্যালি Logo জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা Logo শ্রীরাধার প্রেম ও প্রার্থনায় মুখর ইবির টিএসএসসি প্রাঙ্গণ Logo চবি শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ Logo রাকসু নিয়ে উত্তেজনা ; বক্তব্য দেওয়ার সময় শিবির সভাপতির বুকে বোতল নিক্ষেপ Logo মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পানির ফিল্টার দিলেন স্বেচ্ছাসেবী নারী উদ্যোক্তা সংগঠন বিজয়ী Logo চাঁদপুরে মাদক নির্মূলে সাহসিকতার সাথে কাজ করছে সহকারী পরিচালক মুহাঃ মিজানুর রহমান Logo পশ্চিম ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিকে সংবর্ধনা – ঐক্যবদ্ধভাবে মিলনকে এমপি করার অঙ্গীকার

ঝিনাইদহে অবৈধ মাইক্রো ক্রেডিটের জালে জড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ !

  • আপডেট সময় : ১২:০৯:৩২ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১ জানুয়ারি ২০১৮
  • ৭৪৮ বার পড়া হয়েছে

জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহে অবৈধ মাইক্রোক্রেডিটের জালে জড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। এনজিও কিম্বা সমিতির বৈদেশিক সহায়তা কমে আসায় তারা ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে চড়া সুদে ব্যবসা শুরু করেছে। দারিদ্রবিমোচনের কথা বলে এনজিও ও সমিতির নামে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো ঝিনাইদহে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে ৩০ থেকে ৩৬ শতাংশ সুদ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে। যাতে নিয়মনীতির কোন বালাই নেই। এতে প্রান্তিক পারিবারগুলো আরও নিঃস্ব হচ্ছে। এদিকে এই খাত থেকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এ সকল সমিতি বা এনজিও এখন প্রায় শত কোটি টাকার পুঁজি নিয়ে মাঠে কাজ করছে। এ সকল সংস্থার ৭০ শতাংশেরই এনজিও ব্যুরো বা সমাজ সেবা অধিদফতরের অনুমোদন নেই। কোন কোন এনজিও বা সিমিতি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হচ্ছে। সূত্রমতে, আয় বৈষম্য থাকা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ এখন ঘোষিত মধ্যম আয়ের দেশ। ফলে এনজিওগুলোকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য দাতারা বৈদেশিক সাহায্য সহযোগিতা দিচ্ছে না। এক সময় দাতাসংস্থার সহায়তার উপর নির্ভর করে ঝিনাইদহে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠে এনজিও। এরা এখন নিরুপায় হয়ে ঋণ কার্যক্রম জোরদার করছে। যা অতীতের মহাজন জোতদারের মতই। ঝিনাইদহ শহরের আনাচে কানাচে সুদ ভিত্তিক এনজিও এবং সমিতি হতদরিদ্র মানুষের উপর জালের মতো প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরনের কথা বলে এসব সমিতি সাধারণ গ্রাহকদের চড়া সুদ দেয়ার কথা বলে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। আবার সমিতিগুলো ঋন দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী গৃহবধূসহ তৃনমুল পর্যায়ে সঞ্চয় সংগ্রহ এবং এক পর্যায়ে ক্ষুদ্র ঋণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক ঋণ প্রথা চালু করে। সহজ শর্তে ঋণ পাবার আশায় সাধারণ মানুষ এ সকল সংস্থার প্রতি ঝুঁকে পড়ে। দৈনিক, সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক কিস্তিতে ঋণ আদায় শুরু হলে গড় হিসাবে দেখা যায় সুদের হার ৩০% থেকে ৪০%। প্রথমদিকে বড় বড় বাজারের ব্যবসায়ীদের ঘিরে এসব সমিতির কার্যক্রম চালু হয়। সমিতি প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসে দশ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্কের আমানত সংগ্রহ করে চলেছে। মেয়াদ শেষে আমানতকারীকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার কথা বলা হয়। ১৯৭৮ সাল থেকে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আইলা, মহসেনসহ জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণ সহায়তায় এগিয়ে এসেছে এনজিওগুলো। সরকারের বেশকিছু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির সহায়তা দিতেও এনজিওগুলো কাজ করেছে তৃণমুল পর্যায়ে। এছাড়া স্বাস্থ্য স্যানিটেশন, সোস্যাল মোবিলাইজেশন, পরিবার পরিকল্পনা, মানবাধিকার সুরক্ষা ও শিক্ষা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এনজিওরা। ফান্ড না পেয়ে এনজিওগুলো স্থানীয়ভাবে পুঁজি সংগ্রহ করে ঋণ কর্মসূচি চালু করেছে। যা ব্যাংকিং সিস্টেমের সম্পূর্ন পরিপন্থি। এসব এনজিও বা সমিতি থেকে ঋণ নেয়া একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঝিনাইদহের স্থানীয় প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ী মিলে সুদে কারবারী শুরু করেছে। ঝিনাইদহ জেলায় এমন দুই’শ চিহ্নিত সুদখোর রয়েছে। কিন্তু তাদের কেও কিছু বলতে সাহস পায় না। আসল পাওয়ার পরও তারা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে মানুষকে বিপদগ্রস্থ করে তুলেছে। ঝিনাইদহের আদালতগুলোতে এমন শত শত মামলা রয়েছে। এ ব্যাপরে ঝিনাইদহ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সমাজ সেবা থেকে রেজিষ্ট্রশন নিয়ে ঋণ কার্যক্রম চালানো যাবে না। কেউ ঋণ কার্যক্রম বা ব্যাংকিং সিষ্টেম চালালে তা হবে সম্পূর্ন অবৈধ। সরকারের কড়াকড়ি সত্ত্বেও এ সকল সংস্থাগুলো কিভাবে অবৈধ পন্থায় ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তা জনগনের বোধগম্য নয়।

ট্যাগস :

কয়রায় যৌথবাহিনীর চেকপোস্ট

ঝিনাইদহে অবৈধ মাইক্রো ক্রেডিটের জালে জড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ !

আপডেট সময় : ১২:০৯:৩২ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১ জানুয়ারি ২০১৮

জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহে অবৈধ মাইক্রোক্রেডিটের জালে জড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। এনজিও কিম্বা সমিতির বৈদেশিক সহায়তা কমে আসায় তারা ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে চড়া সুদে ব্যবসা শুরু করেছে। দারিদ্রবিমোচনের কথা বলে এনজিও ও সমিতির নামে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো ঝিনাইদহে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে ৩০ থেকে ৩৬ শতাংশ সুদ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে। যাতে নিয়মনীতির কোন বালাই নেই। এতে প্রান্তিক পারিবারগুলো আরও নিঃস্ব হচ্ছে। এদিকে এই খাত থেকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এ সকল সমিতি বা এনজিও এখন প্রায় শত কোটি টাকার পুঁজি নিয়ে মাঠে কাজ করছে। এ সকল সংস্থার ৭০ শতাংশেরই এনজিও ব্যুরো বা সমাজ সেবা অধিদফতরের অনুমোদন নেই। কোন কোন এনজিও বা সিমিতি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হচ্ছে। সূত্রমতে, আয় বৈষম্য থাকা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ এখন ঘোষিত মধ্যম আয়ের দেশ। ফলে এনজিওগুলোকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য দাতারা বৈদেশিক সাহায্য সহযোগিতা দিচ্ছে না। এক সময় দাতাসংস্থার সহায়তার উপর নির্ভর করে ঝিনাইদহে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠে এনজিও। এরা এখন নিরুপায় হয়ে ঋণ কার্যক্রম জোরদার করছে। যা অতীতের মহাজন জোতদারের মতই। ঝিনাইদহ শহরের আনাচে কানাচে সুদ ভিত্তিক এনজিও এবং সমিতি হতদরিদ্র মানুষের উপর জালের মতো প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরনের কথা বলে এসব সমিতি সাধারণ গ্রাহকদের চড়া সুদ দেয়ার কথা বলে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। আবার সমিতিগুলো ঋন দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী গৃহবধূসহ তৃনমুল পর্যায়ে সঞ্চয় সংগ্রহ এবং এক পর্যায়ে ক্ষুদ্র ঋণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক ঋণ প্রথা চালু করে। সহজ শর্তে ঋণ পাবার আশায় সাধারণ মানুষ এ সকল সংস্থার প্রতি ঝুঁকে পড়ে। দৈনিক, সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক কিস্তিতে ঋণ আদায় শুরু হলে গড় হিসাবে দেখা যায় সুদের হার ৩০% থেকে ৪০%। প্রথমদিকে বড় বড় বাজারের ব্যবসায়ীদের ঘিরে এসব সমিতির কার্যক্রম চালু হয়। সমিতি প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসে দশ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্কের আমানত সংগ্রহ করে চলেছে। মেয়াদ শেষে আমানতকারীকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার কথা বলা হয়। ১৯৭৮ সাল থেকে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আইলা, মহসেনসহ জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণ সহায়তায় এগিয়ে এসেছে এনজিওগুলো। সরকারের বেশকিছু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির সহায়তা দিতেও এনজিওগুলো কাজ করেছে তৃণমুল পর্যায়ে। এছাড়া স্বাস্থ্য স্যানিটেশন, সোস্যাল মোবিলাইজেশন, পরিবার পরিকল্পনা, মানবাধিকার সুরক্ষা ও শিক্ষা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এনজিওরা। ফান্ড না পেয়ে এনজিওগুলো স্থানীয়ভাবে পুঁজি সংগ্রহ করে ঋণ কর্মসূচি চালু করেছে। যা ব্যাংকিং সিস্টেমের সম্পূর্ন পরিপন্থি। এসব এনজিও বা সমিতি থেকে ঋণ নেয়া একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঝিনাইদহের স্থানীয় প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ী মিলে সুদে কারবারী শুরু করেছে। ঝিনাইদহ জেলায় এমন দুই’শ চিহ্নিত সুদখোর রয়েছে। কিন্তু তাদের কেও কিছু বলতে সাহস পায় না। আসল পাওয়ার পরও তারা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে মানুষকে বিপদগ্রস্থ করে তুলেছে। ঝিনাইদহের আদালতগুলোতে এমন শত শত মামলা রয়েছে। এ ব্যাপরে ঝিনাইদহ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সমাজ সেবা থেকে রেজিষ্ট্রশন নিয়ে ঋণ কার্যক্রম চালানো যাবে না। কেউ ঋণ কার্যক্রম বা ব্যাংকিং সিষ্টেম চালালে তা হবে সম্পূর্ন অবৈধ। সরকারের কড়াকড়ি সত্ত্বেও এ সকল সংস্থাগুলো কিভাবে অবৈধ পন্থায় ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তা জনগনের বোধগম্য নয়।