ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলে ইন্টারনেট সেবার চরম দুরবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। নেটওয়ার্ক বিঘ্ন, ধীরগতি ও বারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস, গবেষণা ও চাকরির প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নেটের এই অচলাবস্থার কারণে হাঁসফাঁস হয়ে উঠেছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জীবন।
শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমান বিশ্বে প্রায় সব কাজই কম্পিউটার ও ইন্টারনেটনির্ভর। কিন্তু লালন শাহ হলের নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে তারা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকে অনলাইন ক্লাস, পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারছেন না, আবার চাকরির প্রস্তুতির অনলাইন কোর্সেও অংশ নিতে পারছেন না। প্রায়ই ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক অচল থাকলেও স্থায়ী সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ তাদের। ফলে অনলাইন নির্ভর পড়াশোনা, চাকরির প্রস্তুতি ও বিনোদন—সব ক্ষেত্রেই বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের দাবি, হল প্রশাসন যেন দ্রুত নতুন ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ডিভাইস স্থাপন করে স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান করে। নেটওয়ার্কের এমন অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কর্মকাণ্ড আরও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. রাশেদ বলেন, “লালন শাহ হলের ওয়াইফাইয়ের অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এখন প্রায় সময়ই নেট থাকে না। এতে অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা কিংবা গবেষণার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। অনেকের তো নিয়মিত এমবি কিনে ব্যবহার করার সামর্থ্যও নেই। এআই যুগে নিরবিচ্ছিন্ন ওয়াইফাই দিতে না পারা হল প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক। প্রতিদিন সাময়িক মেরামত নয়, স্থায়ী সমাধান দরকার।”
আল ফিকহ এন্ড ল বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান বলেন, “আধুনিক প্রযুক্তির যুগে পড়াশোনা, গবেষণা ও যোগাযোগ সবই এখন ইন্টারনেটনির্ভর। কিন্তু হলে ওয়াইফাইয়ের ধীরগতি ও সংযোগ বিচ্ছিন্নতা এতটাই বেশি যে, অনেক সময় দুই-তিন ঘণ্টা পার হলেও স্বাভাবিক হয় না। হল প্রশাসন আগেও কিছু সংস্কার করেছিল, কিন্তু অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। নতুন ডিভাইস স্থাপনসহ স্থায়ী উন্নয়ন দরকার।”
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২২–২৩ শিক্ষার্থী গোলাম রব্বানী বলেন, “দেড় বছর ধরে লালন শাহ হলে আছি। প্রথম থেকেই ইন্টারনেট সমস্যা চলছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে নেটও যায়, আবার ফিরে এলেও অনেক সময় সংযোগ আসে না। হঠাৎ নেট বন্ধ হয়ে যাওয়া বা ধীরগতির সমস্যা এখন নিয়মিত ঘটনা। আজিজুর রহমান হলের মতো দ্রুতগতির ফাইবার অপটিক সংযোগ স্থাপন করা জরুরি।”
এ বিষয়ে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. গাজী মো. আরিফুজ্জামান খান বলেন, “ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী আমাকে জানিয়েছে। বিষয়টি আইসিটি সেলকে অবহিত করা হয়েছে, আজ রাতের মধ্যেই তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।”
স্থানীয়ভাবে স্থায়ী সমাধানের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে ইউজিসির একটি প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হলে নেটওয়ার্ক সিস্টেম পুরোপুরি পরিবর্তন করা হবে। হলের প্রতিটি কক্ষে নতুন রাউটার স্থাপন করা হবে। ফলে এখন সাময়িকভাবে কিছুটা অসুবিধা হলেও ভবিষ্যতে নেটওয়ার্ক সচল রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”




















































