বৃহস্পতিবার | ২৭ নভেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo কচুয়ায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে ৩০টি প্রদর্শনী Logo কুবির বাংলা বিভাগের বাংলা নাটক বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন Logo মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবক নিহত Logo মাগুরার শ্রীপুরে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনী- ২০২৫ এর উদ্বোধন Logo পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় জাতীয় প্রাণীসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ প্রদর্শনী Logo আমরা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছি: চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী বাবু খান Logo নোবিপ্রবিতে সীরাত মাহফিল ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত Logo ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলো রেজুয়ারা চকরিয়ায় রেললাইন পার হবার সময় ট্রেনের ইঞ্জিন বগির ধাক্কার বৃদ্ধা নারী নিহত Logo ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে যেকোনো দিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে : ইসি সানাউল্লাহ Logo চুয়াডাঙ্গায় কৃষকদের সাথে চলছে এক প্রকার প্রতারণা। আসল কোম্পানির মোড়কের মধ্যে নকল ভুট্টা বীজ ঢুকিয়ে বিক্রি

বেরোবির ১৭ বছর: সংগ্রাম পেরিয়ে সম্ভাবনার দিগন্তে

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৫:০৫ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • ৭৫৬ বার পড়া হয়েছে
 রিপন শাহরিয়ার -বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর:
উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)  এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার ফসল। ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি।
আজ ১৭ বছর পার করে ১৮ বছরে এই প্রতিষ্ঠান। শুরুটা ছিল সীমিত পরিসরে, নানা সংকট ও প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এখন এটি হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার প্রধান আশ্রয়স্থল ।
প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট:
রংপুর বিভাগে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দীর্ঘদিন ধরে ছিল সীমিত। ঢাকা, রাজশাহী কিংবা চট্টগ্রামে না গিয়ে যেন উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীরা নিজ এলাকায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা করতে পারে এই স্বপ্ন থেকেই শুরু হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।
দীর্ঘদিনের দাবি, মানববন্ধন, আন্দোলন রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের পর অবশেষে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ ২০০৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারী রংপুর সার্কিট হাউসে রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে সেই বছরই ১২ অক্টোবর ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার নামে । বেগম রোকেয়ার নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয় তাই কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি উত্তরবঙ্গের মানুষের আত্মমর্যাদা ও স্বপ্নের প্রতীক।
গড়ে ওঠার গল্প:
শুরুটা ছিল অস্থায়ী ক্যাম্পাসে, সীমিত ভবন ও অল্পসংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে। ৩০০ জন শিক্ষার্থী ১২ জন শিক্ষক নিয়ে রংপুর নগরীর ধাপ লালকুঠি এলাকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান।
এরপর ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়া রংপুর কারমাইকেল কলেজের ৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করেন এবং একটি নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করেন।
পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ৭ই মে তৃতীয় উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন ড. এ কে এম নুর উন নবী ২০১৭ সালের ১৪ জুন চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ  এবং পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে ২০২১ সালের ১৪ই জুন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদকে উপাচার্যের দায়িত্ব প্রদান করা হয় ‌।
তবে বিগত উপাচার্যদের প্রায় সকলের বিরুদ্ধে আছে নানাবিধ অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ।
অবশেষে চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ষষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. শওকাত আলীকে দায়িত্ব প্রদান করেন।
এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর উত্তরের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় সেন্টার অফ এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
সংগ্রাম ও সংকট:
১৭ বছরের পথচলায় বেরোবি পেরিয়েছে নানান কঠিন সময়। প্রশাসনিক জটিলতা, শিক্ষক সংকট, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, আন্দোলন ও সেশনজট সব মিলিয়ে পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীদের যৌথ প্রচেষ্টা, ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের ফলেই আজকের অবস্থানে এসেছে বেরোবি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদে ২২টি বিভাগ ২০৫ জন শিক্ষক ১৩৫ জন কর্মকর্তা ৪৮৯ জন কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজারের বেশি।
নির্মানাধীন একটি ছাত্রী হল সহ মোট চারটি আবাসিক হল, একটি প্রশাসনিক ভবন, চারটি অ্যাকাডেমিক ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, মসজিদ ক্যাফেটেরিয়া সহ আবাসিক স্থাপনা। তবে এখন পর্যন্ত হয়নি একটি অডিটোরিয়াম হয়নি স্থায়ী শহিদ মিনার নেই পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে ক্লাসরুম ও শিক্ষক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যা।
গবেষণা ও সম্ভাবনা:
গবেষণায় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গবেষণা কার্যক্রমে নতুন গতি এসেছে। শিক্ষকেরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করছেন, শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হচ্ছেন গবেষণার কাজে। প্রযুক্তি, সমাজবিজ্ঞান, কৃষি ও পরিবেশ সবক্ষেত্রেই বেরোবি এখন সম্ভাবনার আলো দেখাচ্ছে।
এবং সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার যৌথভাবে পরিচালিত জরিপে বিশ্বসেরা দুই শতাংশ গবেষকদের তালিকাতে ও জায়গা করে নিয়েছে বেরোবির শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
আগামীর দিকনির্দেশনা:
১৭ বছরে বেরোবি যতটা পথ এসেছে, সামনে আরও বড় যাত্রা অপেক্ষা করছে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, গবেষণায় বিনিয়োগ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আর আধুনিক অবকাঠামো এই চার দিকেই নজর দিলে বেরোবি দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে। শিক্ষার্থীদের আশা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, গোটা বাংলাদেশের গর্ব হয়ে উঠুক।
আজ ১৮ বছরে পদার্পণ করল এই দীর্ঘ সময়ে সংগ্রাম, অর্জন ও সম্ভাবনার গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় স্বপ্ন সত্যি হয় যখন মানুষ একসঙ্গে এগিয়ে আসে। রোকেয়ার আদর্শে আলোকিত হয়ে বেরোবি হোক জ্ঞানের আলোকবর্তিকা, আগামী প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণার কেন্দ্র।
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কচুয়ায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে ৩০টি প্রদর্শনী

বেরোবির ১৭ বছর: সংগ্রাম পেরিয়ে সম্ভাবনার দিগন্তে

আপডেট সময় : ০৫:৩৫:০৫ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
 রিপন শাহরিয়ার -বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর:
উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)  এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার ফসল। ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি।
আজ ১৭ বছর পার করে ১৮ বছরে এই প্রতিষ্ঠান। শুরুটা ছিল সীমিত পরিসরে, নানা সংকট ও প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এখন এটি হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার প্রধান আশ্রয়স্থল ।
প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট:
রংপুর বিভাগে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দীর্ঘদিন ধরে ছিল সীমিত। ঢাকা, রাজশাহী কিংবা চট্টগ্রামে না গিয়ে যেন উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীরা নিজ এলাকায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা করতে পারে এই স্বপ্ন থেকেই শুরু হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।
দীর্ঘদিনের দাবি, মানববন্ধন, আন্দোলন রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের পর অবশেষে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ ২০০৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারী রংপুর সার্কিট হাউসে রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে সেই বছরই ১২ অক্টোবর ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার নামে । বেগম রোকেয়ার নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয় তাই কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি উত্তরবঙ্গের মানুষের আত্মমর্যাদা ও স্বপ্নের প্রতীক।
গড়ে ওঠার গল্প:
শুরুটা ছিল অস্থায়ী ক্যাম্পাসে, সীমিত ভবন ও অল্পসংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে। ৩০০ জন শিক্ষার্থী ১২ জন শিক্ষক নিয়ে রংপুর নগরীর ধাপ লালকুঠি এলাকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান।
এরপর ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়া রংপুর কারমাইকেল কলেজের ৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করেন এবং একটি নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করেন।
পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ৭ই মে তৃতীয় উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন ড. এ কে এম নুর উন নবী ২০১৭ সালের ১৪ জুন চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ  এবং পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে ২০২১ সালের ১৪ই জুন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদকে উপাচার্যের দায়িত্ব প্রদান করা হয় ‌।
তবে বিগত উপাচার্যদের প্রায় সকলের বিরুদ্ধে আছে নানাবিধ অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ।
অবশেষে চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ষষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. শওকাত আলীকে দায়িত্ব প্রদান করেন।
এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর উত্তরের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় সেন্টার অফ এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
সংগ্রাম ও সংকট:
১৭ বছরের পথচলায় বেরোবি পেরিয়েছে নানান কঠিন সময়। প্রশাসনিক জটিলতা, শিক্ষক সংকট, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, আন্দোলন ও সেশনজট সব মিলিয়ে পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীদের যৌথ প্রচেষ্টা, ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের ফলেই আজকের অবস্থানে এসেছে বেরোবি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদে ২২টি বিভাগ ২০৫ জন শিক্ষক ১৩৫ জন কর্মকর্তা ৪৮৯ জন কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজারের বেশি।
নির্মানাধীন একটি ছাত্রী হল সহ মোট চারটি আবাসিক হল, একটি প্রশাসনিক ভবন, চারটি অ্যাকাডেমিক ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, মসজিদ ক্যাফেটেরিয়া সহ আবাসিক স্থাপনা। তবে এখন পর্যন্ত হয়নি একটি অডিটোরিয়াম হয়নি স্থায়ী শহিদ মিনার নেই পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে ক্লাসরুম ও শিক্ষক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যা।
গবেষণা ও সম্ভাবনা:
গবেষণায় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গবেষণা কার্যক্রমে নতুন গতি এসেছে। শিক্ষকেরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করছেন, শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হচ্ছেন গবেষণার কাজে। প্রযুক্তি, সমাজবিজ্ঞান, কৃষি ও পরিবেশ সবক্ষেত্রেই বেরোবি এখন সম্ভাবনার আলো দেখাচ্ছে।
এবং সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার যৌথভাবে পরিচালিত জরিপে বিশ্বসেরা দুই শতাংশ গবেষকদের তালিকাতে ও জায়গা করে নিয়েছে বেরোবির শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
আগামীর দিকনির্দেশনা:
১৭ বছরে বেরোবি যতটা পথ এসেছে, সামনে আরও বড় যাত্রা অপেক্ষা করছে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, গবেষণায় বিনিয়োগ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আর আধুনিক অবকাঠামো এই চার দিকেই নজর দিলে বেরোবি দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে। শিক্ষার্থীদের আশা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, গোটা বাংলাদেশের গর্ব হয়ে উঠুক।
আজ ১৮ বছরে পদার্পণ করল এই দীর্ঘ সময়ে সংগ্রাম, অর্জন ও সম্ভাবনার গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় স্বপ্ন সত্যি হয় যখন মানুষ একসঙ্গে এগিয়ে আসে। রোকেয়ার আদর্শে আলোকিত হয়ে বেরোবি হোক জ্ঞানের আলোকবর্তিকা, আগামী প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণার কেন্দ্র।