শুক্রবার | ২১ নভেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo টেকনাফে ২০ হাজার পিস ইয়াবা তিন পাচারকারী আটক! Logo ভূমিকম্পে ভবন ধসে মেডিকেল শিক্ষার্থীর মৃত্যু Logo ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ৫.৫ ভূমিকম্প, কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদী, আতঙ্কে অনেকে রাস্তায় Logo ভূমিকম্পে করণীয়- Logo ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দেশের বিভিন্ন স্থান Logo তারেক রহমানের জন্মদিনে রাবি ছাত্রদল নেতার উদ্যোগে পথশিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ Logo মানিলন্ডারিং মামলায় সাকিব আল হাসানসহ ১৫ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে তলব Logo হাসিনা, কামালকে ফেরাতে আইসিসিতে যাওয়ার কথা ভাবছে সরকার : আসিফ নজরুল Logo বিজয়ীর আয়োজনে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও কম্বল বিতরন ! Logo একঝাঁক কোরআনের পাখিদের দোয়ার মাধ্যমে চাঁদপুরে কাচ্চি ডাইন উদ্বোধন

ভূমিকম্পে করণীয়-

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ১২:১০:৪৪ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • ৭০৯ বার পড়া হয়েছে

ভূমিকম্প পৃথিবীর অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার আগমন আগেভাগে বোঝা প্রায় অসম্ভব। আমাদের পুরো পৃথিবী আসলে কয়েকটি টেকটোনিক প্লেটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যেগুলো নিত্যদিনই অদৃশ্যভাবে নড়ে–চড়ে। কখনো সূক্ষ্মভাবে, আবার কখনো ভয়ংকর শক্তি নিয়ে। সেই প্লেটগুলোর সংঘর্ষ, ঘর্ষণ বা হঠাৎ সরে যাওয়া থেকেই জন্ম নেয় ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়। কয়েক সেকেন্ডের কম্পন যেন কার্যত মানুষের সব প্রস্তুতিকে ব্যর্থ করে দিতে পারে—মুহূর্তেই ভেঙে পড়তে পারে বহুতল ভবন, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সড়ক–সেতু, দগ্ধ হতে পারে গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, ভূমিকম্পের আগে কোনো শব্দ কিংবা বিশেষ সংকেত মানুষ বুঝতে পারে না; তাই আতঙ্কের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগও খুব সীমিত। তবুও গবেষকরা বলছেন, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশেই কমানো যায়—যদি মানুষ জানে কী করতে হবে ঠিক সেই মুহূর্তে, কম্পন থেমে যাওয়ার পরে, এমনকি প্রস্তুতির সময়ও। পৃথিবীর বহু দেশেই বেঁচে যাওয়া মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে, সচেতনতা ও দ্রুত সঠিক পদক্ষেপই জীবন রক্ষার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। উন্নত দেশগুলোতে নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া, নিরাপদ নির্মাণনীতি ও জরুরি প্রস্তুতি আইন থাকায় ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়। কিন্তু জনবহুল দেশে অগোছালো নগরায়ণ, দুর্বল ভবন নির্মাণ আর সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা অনেক সময় বিপর্যয়কে আরও ভয়াবহ করে তোলে। তাই ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতনতা শুধু তথ্যভিত্তিক নয়, জীবনরক্ষার বাস্তব প্রয়োজন।

কম্পন শুরু হওয়ার পর প্রথম ১০–১৫ সেকেন্ডকে বলা হয় “গোল্ডেন টাইম” বা সোনার সময়, যখন আতঙ্ক নয়—সঠিক সিদ্ধান্তই প্রাণ বাঁচাতে পারে। কম্পন অনুভূত হওয়া মাত্র নিচু হয়ে পড়া, মাথা ঢেকে মজবুত টেবিল বা আসবাবের নিচে আশ্রয় নেওয়া, এবং আসবাব ধরে রাখা—এই সাধারণ নিয়মই DROP–COVER–HOLD পদ্ধতি, যা পৃথিবীর যেকোনো ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে জীবন রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে মানা হয়। জানালা, কাচ, ভারী আলমারি, ঝুলন্ত ফ্যান বা লাইটের নিকট অবস্থান বিপজ্জনক। বহুতল ভবনে আতঙ্কে দৌড়ে বের হতে গেলে সিঁড়িতে পদদলিত হওয়া, কিংবা ভবনের ধসে চাপা পড়ার ঝুঁকি আরও বাড়ে। তাই যেখানে আছেন, সেখানেই নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়াই শ্রেয়। বাইরে থাকলে ভবন, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সেতু বা সাইনবোর্ড থেকে দূরে থাকা উচিত। ভূমিকম্প থেমে গেলেও বিপদ শেষ হয় না, কারণ সবচেয়ে ক্ষতিকর পরাঘাত বা আফটারশক কয়েক মিনিট থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত অনুভূত হতে পারে। কম্পন থামার পর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন পরীক্ষা করা জরুরি। কোনো অস্বাভাবিক গন্ধ, ফাটল বা ধসের চিহ্ন দেখা গেলে ভবন তৎক্ষণাৎ খালি করতে হবে। এলিভেটর ব্যবহার না করে সিঁড়ি বেছে নিতে হবে এবং খোলা জায়গায় গিয়ে পরিবার ও প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ভূমিকম্পের পর মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও ভীতি কাজ করে—বিশেষত শিশু ও প্রবীণদের। তাই তাদের আশ্বস্ত করা, প্রয়োজন হলে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া, এবং নিরাপদ জায়গায় একসঙ্গে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আগে থেকেই জরুরি প্রস্তুতি রাখা। ঘরে সর্বদা রাখা উচিত একটি জরুরি ব্যাগ, যাতে থাকবে টর্চলাইট, ব্যাটারি, সিটি, পানি, শুকনো খাবার, ওষুধ, প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কপি। ভূমিকম্পকে থামানো না গেলেও সচেতনতা, প্রশিক্ষণ ও সময়মতো সিদ্ধান্ত বিপদের মাত্রা অনেক কমাতে পারে—আর এই প্রস্তুতিই একমাত্র ভরসা যখন পৃথিবীর নীচের অদৃশ্য শক্তি হঠাৎ করে আমাদের শান্ত দিনকে ঝাঁকুনি দিয়ে দেয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

টেকনাফে ২০ হাজার পিস ইয়াবা তিন পাচারকারী আটক!

ভূমিকম্পে করণীয়-

আপডেট সময় : ১২:১০:৪৪ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

ভূমিকম্প পৃথিবীর অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার আগমন আগেভাগে বোঝা প্রায় অসম্ভব। আমাদের পুরো পৃথিবী আসলে কয়েকটি টেকটোনিক প্লেটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যেগুলো নিত্যদিনই অদৃশ্যভাবে নড়ে–চড়ে। কখনো সূক্ষ্মভাবে, আবার কখনো ভয়ংকর শক্তি নিয়ে। সেই প্লেটগুলোর সংঘর্ষ, ঘর্ষণ বা হঠাৎ সরে যাওয়া থেকেই জন্ম নেয় ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়। কয়েক সেকেন্ডের কম্পন যেন কার্যত মানুষের সব প্রস্তুতিকে ব্যর্থ করে দিতে পারে—মুহূর্তেই ভেঙে পড়তে পারে বহুতল ভবন, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সড়ক–সেতু, দগ্ধ হতে পারে গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, ভূমিকম্পের আগে কোনো শব্দ কিংবা বিশেষ সংকেত মানুষ বুঝতে পারে না; তাই আতঙ্কের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগও খুব সীমিত। তবুও গবেষকরা বলছেন, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশেই কমানো যায়—যদি মানুষ জানে কী করতে হবে ঠিক সেই মুহূর্তে, কম্পন থেমে যাওয়ার পরে, এমনকি প্রস্তুতির সময়ও। পৃথিবীর বহু দেশেই বেঁচে যাওয়া মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে, সচেতনতা ও দ্রুত সঠিক পদক্ষেপই জীবন রক্ষার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। উন্নত দেশগুলোতে নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া, নিরাপদ নির্মাণনীতি ও জরুরি প্রস্তুতি আইন থাকায় ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়। কিন্তু জনবহুল দেশে অগোছালো নগরায়ণ, দুর্বল ভবন নির্মাণ আর সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা অনেক সময় বিপর্যয়কে আরও ভয়াবহ করে তোলে। তাই ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতনতা শুধু তথ্যভিত্তিক নয়, জীবনরক্ষার বাস্তব প্রয়োজন।

কম্পন শুরু হওয়ার পর প্রথম ১০–১৫ সেকেন্ডকে বলা হয় “গোল্ডেন টাইম” বা সোনার সময়, যখন আতঙ্ক নয়—সঠিক সিদ্ধান্তই প্রাণ বাঁচাতে পারে। কম্পন অনুভূত হওয়া মাত্র নিচু হয়ে পড়া, মাথা ঢেকে মজবুত টেবিল বা আসবাবের নিচে আশ্রয় নেওয়া, এবং আসবাব ধরে রাখা—এই সাধারণ নিয়মই DROP–COVER–HOLD পদ্ধতি, যা পৃথিবীর যেকোনো ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে জীবন রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে মানা হয়। জানালা, কাচ, ভারী আলমারি, ঝুলন্ত ফ্যান বা লাইটের নিকট অবস্থান বিপজ্জনক। বহুতল ভবনে আতঙ্কে দৌড়ে বের হতে গেলে সিঁড়িতে পদদলিত হওয়া, কিংবা ভবনের ধসে চাপা পড়ার ঝুঁকি আরও বাড়ে। তাই যেখানে আছেন, সেখানেই নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়াই শ্রেয়। বাইরে থাকলে ভবন, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সেতু বা সাইনবোর্ড থেকে দূরে থাকা উচিত। ভূমিকম্প থেমে গেলেও বিপদ শেষ হয় না, কারণ সবচেয়ে ক্ষতিকর পরাঘাত বা আফটারশক কয়েক মিনিট থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত অনুভূত হতে পারে। কম্পন থামার পর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন পরীক্ষা করা জরুরি। কোনো অস্বাভাবিক গন্ধ, ফাটল বা ধসের চিহ্ন দেখা গেলে ভবন তৎক্ষণাৎ খালি করতে হবে। এলিভেটর ব্যবহার না করে সিঁড়ি বেছে নিতে হবে এবং খোলা জায়গায় গিয়ে পরিবার ও প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ভূমিকম্পের পর মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও ভীতি কাজ করে—বিশেষত শিশু ও প্রবীণদের। তাই তাদের আশ্বস্ত করা, প্রয়োজন হলে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া, এবং নিরাপদ জায়গায় একসঙ্গে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আগে থেকেই জরুরি প্রস্তুতি রাখা। ঘরে সর্বদা রাখা উচিত একটি জরুরি ব্যাগ, যাতে থাকবে টর্চলাইট, ব্যাটারি, সিটি, পানি, শুকনো খাবার, ওষুধ, প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কপি। ভূমিকম্পকে থামানো না গেলেও সচেতনতা, প্রশিক্ষণ ও সময়মতো সিদ্ধান্ত বিপদের মাত্রা অনেক কমাতে পারে—আর এই প্রস্তুতিই একমাত্র ভরসা যখন পৃথিবীর নীচের অদৃশ্য শক্তি হঠাৎ করে আমাদের শান্ত দিনকে ঝাঁকুনি দিয়ে দেয়।