শীত মানেই উৎসব, উষ্ণতা আর প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলনের সময়। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, এই আনন্দের ঋতুতেই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীরের ভেতরে এমন কিছু পরিবর্তন ঘটে, যা সরাসরি হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ ফেলে।
শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কেন বাড়ে এবং কীভাবে এর থেকে নিরাপদ থাকা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ার পেছনে বেশ কিছু শারীরিক প্রক্রিয়া দায়ী। ঠান্ডার সংস্পর্শে এলে শরীর দ্রুত তাপ ধরে রাখার চেষ্টা করে, যার ফলে ত্বকের নিচের রক্তনালীগুলি সংকুচিত হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হৃদপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করার জন্য বেশি চাপ দিতে হয়। পাশাপাশি, শীতে রক্ত কিছুটা ঘন হয়ে যায় এবং প্লেটলেটগুলো বেশি আঠালো হয়ে ওঠে। এর ফলে রক্তনালীর ভেতর সহজে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি করে।
এছাড়া শীতকালে সূর্যের আলোর অভাবে শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি-এর অভাব কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে, খুব ভোরে বা সন্ধ্যার পরে তীব্র ঠান্ডায় হাঁটতে বের হলে বা ভারী কাজ করলে ঠান্ডা বাতাস সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং শরীর দ্রুত শীতল হয়ে যায়। এটি হৃদপিণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
শীতে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। প্রথমত, নিজেকে উষ্ণ রাখতে হবে—পর্যাপ্ত গরম কাপড়, মাফলার, কান ঢাকা টুপি এবং গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত। ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক রাখার পাশাপাশি খুব ভোরে বা সন্ধ্যার পরে তীব্র ঠান্ডায় বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে। সকালে খুব ভোরে ঠান্ডায় ব্যায়াম না করে দিনের উষ্ণতম সময়ে ব্যায়াম করা ভালো। ঠান্ডা বেশি থাকলে বাইরে না গিয়ে ঘরে হালকা ব্যায়াম বা ইয়োগা করা নিরাপদ।
খাদ্যাভ্যাসেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সুষম খাবারের সঙ্গে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণের জন্য ডিম, ফ্যাটি ফিশ (যেমন স্যালমন) বা চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। শীতে পিপাসা কম লাগলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা জরুরি, যাতে রক্ত পাতলা থাকে। অতিরিক্ত মদ্যপান শরীরকে সাময়িকভাবে উষ্ণতার অনুভূতি দিলেও এটি রক্তনালীকে হঠাৎ প্রসারিত করে শরীরকে দ্রুত শীতল করে দেয়—ফলে হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ পড়ে।
যাদের হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। প্রয়োজনে শীতের শুরুতেই ওষুধের মাত্রা সমন্বয় করে নেওয়া যেতে পারে। সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বনই পারে শীতকালীন হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে।
























































