নিউজ ডেস্ক:
সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাইবাছাইয়ের জন্য নির্দেশিকা প্রচার এবং এজন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) কমিটি গঠন করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, জামুকার মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ ও শরীফ হুমায়ুন কবীর।
পরে আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম জানান, গত ১২ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই বাছাই সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। গত ৫ জানুয়ারি আরেকটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাছাইয়ের তারিখ পরিবর্তন করা হয়। তিনি আরও জানান, গেজেট প্রকাশের সময় ওই গেজেটকে চূড়ান্ত তালিকা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক সেই গেজেট বাতিলের ক্ষমতা আইন অনুযায়ী প্রয়োগ করা যেতে পারে।
কিন্তু তা না করে গেজেটভুক্ত সকল মুক্তিযোদ্ধাকে পুনরায় যাচাই বাছাই করার ক্ষমতা আইন অনুযায়ী জামুকার নেই। সেজন্য জামুকার বাইরে অন্য কাউকে দিয়ে কমিটি করার বিধানও প্রণয়ন করা হয় নাই। এসব কারণ দেখিয়ে তালিকা যাচাই বাছাইয়ের বিষয়ে জামুকার জারি করা নির্দেশনার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রফিকুল আলমসহ নয়জন মুক্তিযোদ্ধা হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। সেই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে আজ সোমবার আদালত এই রুল জারি করেন।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নামে স্বজনপ্রীতি, পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতাসহ নানা কারণে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি যাচাই-বাছাই শুরুর কয়েকদিন আগে বাগেরহাটের মংলা উপজেলায় ২৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে অমুক্তিযোদ্ধা দাবি করে আবেদন করেন নয় ব্যক্তি। ওই ২৪ জনের অনেকেরই গেজেটে নামসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিস্বাক্ষরিত ও মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যুকৃত উভয় সনদ রয়েছে। আছে মুক্তিবার্তা নম্বর। কেউ কেউ অন্য এলাকার তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। পরবর্তীতে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তিত হওয়ায় মন্ত্রনালয়ে আবেদন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। গত ২১ জানুয়ারি এসকল মুক্তিযোদ্ধাকে শুনানির জন্য ডাকা হলেও একজনের সঙ্গে কথা বলে অন্যদের বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়। শুনানিতে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের কয়েকজন বলেন, ব্যক্তি শত্রুতা ও রাজনৈতিক কারণে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ২৪ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সকল কাগজপত্র ও প্রমাণাদি থাকার পরও এসব মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা (মৃত) মুন্সী লাল মোহাম্মদের ছেলে এ কে এম শওকত আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তার বাবা-চাচাসহ পুরো পরিবার মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। যুদ্ধের শুরুতে তার বাবা মংলা থেকে সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি নড়াইল ফিরে গিয়ে যুদ্ধ অংশ নেন। তার চাচা আসাদুজ্জামান মুন্সী (হেমায়েত মুন্সী) ছিলেন স্থানীয় কমাণ্ডার যার নেতৃত্বে কয়েকশ’ মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করেছেন। দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে তার নাম পরিচিত। নড়াইলের কালিয়ায় তাদের গ্রামের বাড়িতে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দিনরাত রান্না চলতো। যুদ্ধের পর পাক বাহিনীর কাছ থেকে উদ্ধারকৃত বিপুল পরিমান অস্ত্র জমা দেওয়ায় তার চাচাকে একটি দোনলা বন্দুক উপহার দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকার তার বাবাকে নড়াইলের কালিয়া থানার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ দেয়। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়কের আমলে আবেদন করে ঠিকানা পরিবর্তন করে মংলার ঠিকানায় মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটি সনদ নেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি মংলার কয়েকজন তার বাবাকে অমুক্তিযোদ্ধা দাবি করে ইউএনও বরাবর আবেদন করেছে। গত ২১ জানুয়ারি এ ব্যাপারে শুনানীর জন্য ডাকা হলেও কোন কিছু না শুনে অন্যদিন শুনবে জানিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।