শিরোনাম :
Logo ৭৮ তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে চাঁদপুর এলজিইডির অবহিতকরন সভা Logo পিয়াস আফ্রিদির উদ্যোগে চিত্রনায়ক ডিএ তায়েব অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের পথচলা Logo প্রান্তিক মানুষের আস্থার নাম সরাইলকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিক Logo ইবিতে সিরাতুন নবি (সা.) উপলক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী Logo ইবি ক্যাম্পাসে তালিকাভুক্ত নয় এমন  সংগঠনের সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা Logo সুন্দরবনের বিনা পাশে প্রবেশ করায় তিন জেলা কটক  Logo খুবি রিসার্চ সোসাইটির নতুন নেতৃত্বে বকসী-গৌর Logo চাঁদপুরে কল্যাণ ট্রাস্টের চেক পেয়েছেন ১৯ সাংবাদিক Logo কাল চাঁদপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশাল সমাবেশ Logo খানপুর ইয়ং স্টার ক্লাবের উদ্যোগে আট দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সিরিয়ায় সাংবিধানিক ঘোষণায় স্বাক্ষর আল-শারার, কী আছে এতে

সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আল-শারা দেশটির পাঁচ বছরের অন্তর্বর্তীকালীন শাসনব্যবস্থা নির্ধারণকারী সাংবিধানিক ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) এতে স্বাক্ষর করে তিনি একে ‘সিরিয়ার নতুন ইতিহাসের সূচনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই ঘোষণায় নারীদের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীরা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দমনমূলক সরকারকে উৎখাতের তিন মাস পর এই ঘোষণা এলো। আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দেশ-বিদেশ থেকে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এক নতুন সিরিয়ার আহ্বান ওঠে। নতুন কর্তৃপক্ষ আসাদ শাসনামলের সংবিধান বাতিল ও পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করেছে।

‘সিরিয়ার নতুন ইতিহাসের সূচনা’য় যা থাকছে–

* নারীদের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত
* প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে
* আইন প্রণয়নের প্রধান উৎস শরিয়া
* অভিশংসনযোগ্য নন প্রেসিডেন্ট
* বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি

অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আল-শারা প্রেসিডেনশিয়াল প্রাসাদে এই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে বলেন, ‘আমরা যেন নিপীড়নের বদলে ন্যায়বিচার, আর কষ্টের বদলে দয়া প্রতিষ্ঠা করতে পারি—এই ঘোষণা সিরিয়ার সেই নতুন ইতিহাসের সূচনা।’

এই ঘোষণায় পাঁচ বছরের অন্তর্বর্তীকালীন শাসনব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই সময়ে একটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন বিচার কমিশন’ গঠন করা হবে, যা ‘দায়বদ্ধতা নির্ধারণ, সত্য উন্মোচন ও সাবেক সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের শিকারদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার’ দায়িত্ব পালন করবে।

সংবিধান ঘোষণার অন্যতম খসড়া প্রণেতা আবদুল হামিদ আল-আওয়াক বলেন, এতে ‘নারীদের কাজ ও শিক্ষায় অংশগ্রহণের অধিকার এবং তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক—সব অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।’

এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই একজন মুসলিম হতে হবে এবং ইসলামী শরিয়াকে ‘আইন প্রণয়নের প্রধান উৎস’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। আওয়াক আরো বলেন, এতে ‘ক্ষমতার পরিপূর্ণ পৃথককরণ’ নিশ্চিত করা হয়েছে, যা তিনি বাশার আল-আসাদের ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় হস্তক্ষেপের’ বিপরীতে উল্লেখ করেন।

পাশাপাশি এটি প্রেসিডেন্টকে একটি ব্যতিক্রমী ক্ষমতা প্রদান করেছে, তা হলো—  জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার অধিকার।

তিনি আরো বলেন, জনগণের পরিষদের (পার্লামেন্ট) এক-তৃতীয়াংশ সদস্য প্রেসিডেন্ট কর্তৃক মনোনীত হবেন এবং এই পরিষদ আইন প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করবে। একটি সর্বোচ্চ নির্বাচন কমিটি গঠন করা হবে, যা সংসদ সদস্যদের নির্বাচন তদারকি করবে।

অভিশংসনযোগ্য নন প্রেসিডেন্ট

এই ঘোষণার অধীনে সংসদ প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করতে পারবে না, ঠিক যেমন প্রেসিডেন্টও কোনো আইন প্রণেতাকে বরখাস্ত করতে পারবেন না। আওয়াক বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে নির্বাহী ক্ষমতা শুধু প্রেসিডেন্টের হাতে থাকবে, ‘যাতে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবেলা করা যায়।’

তিনি আরো জানান, এই ঘোষণা ‘মতপ্রকাশ, বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করে। পাশাপাশি এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ‘বিশেষ আদালত’ প্রতিষ্ঠার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে বহু সিরীয় নাগরিক দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

এই ঘোষণা সরকারিভাবে প্রকাশিত হলেই তা কার্যকর হবে জানিয়ে আওয়াক বলেন, ভবিষ্যৎ স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।

এর আগে জানুয়ারির শেষ দিকে আল-শারা একটি ‘সাংবিধানিক ঘোষণা’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ‘আইনি ভিত্তি’ হিসেবে কাজ করবে। এরপর মার্চের শুরুতে তিনি একটি সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন, যাতে দুজন নারীও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সেই সময় প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে জানানো হয়, ‘সিরিয়ার জনগণের আইনশাসনের ভিত্তিতে তাদের রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষা এবং সিরীয় জাতীয় সংলাপ সম্মেলনের ফলাফলের ভিত্তিতে এই ঘোষণা এসেছে।’

প্রসঙ্গত, ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্ব দেওয়া ও আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার মূল ভূমিকা পালন করা আল-শারাকে জানুয়ারির শেষ দিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

৭৮ তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে চাঁদপুর এলজিইডির অবহিতকরন সভা

সিরিয়ায় সাংবিধানিক ঘোষণায় স্বাক্ষর আল-শারার, কী আছে এতে

আপডেট সময় : ১০:৪৭:০২ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আল-শারা দেশটির পাঁচ বছরের অন্তর্বর্তীকালীন শাসনব্যবস্থা নির্ধারণকারী সাংবিধানিক ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) এতে স্বাক্ষর করে তিনি একে ‘সিরিয়ার নতুন ইতিহাসের সূচনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই ঘোষণায় নারীদের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীরা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দমনমূলক সরকারকে উৎখাতের তিন মাস পর এই ঘোষণা এলো। আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দেশ-বিদেশ থেকে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এক নতুন সিরিয়ার আহ্বান ওঠে। নতুন কর্তৃপক্ষ আসাদ শাসনামলের সংবিধান বাতিল ও পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করেছে।

‘সিরিয়ার নতুন ইতিহাসের সূচনা’য় যা থাকছে–

* নারীদের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত
* প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে
* আইন প্রণয়নের প্রধান উৎস শরিয়া
* অভিশংসনযোগ্য নন প্রেসিডেন্ট
* বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি

অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আল-শারা প্রেসিডেনশিয়াল প্রাসাদে এই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে বলেন, ‘আমরা যেন নিপীড়নের বদলে ন্যায়বিচার, আর কষ্টের বদলে দয়া প্রতিষ্ঠা করতে পারি—এই ঘোষণা সিরিয়ার সেই নতুন ইতিহাসের সূচনা।’

এই ঘোষণায় পাঁচ বছরের অন্তর্বর্তীকালীন শাসনব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই সময়ে একটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন বিচার কমিশন’ গঠন করা হবে, যা ‘দায়বদ্ধতা নির্ধারণ, সত্য উন্মোচন ও সাবেক সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের শিকারদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার’ দায়িত্ব পালন করবে।

সংবিধান ঘোষণার অন্যতম খসড়া প্রণেতা আবদুল হামিদ আল-আওয়াক বলেন, এতে ‘নারীদের কাজ ও শিক্ষায় অংশগ্রহণের অধিকার এবং তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক—সব অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।’

এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই একজন মুসলিম হতে হবে এবং ইসলামী শরিয়াকে ‘আইন প্রণয়নের প্রধান উৎস’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। আওয়াক আরো বলেন, এতে ‘ক্ষমতার পরিপূর্ণ পৃথককরণ’ নিশ্চিত করা হয়েছে, যা তিনি বাশার আল-আসাদের ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় হস্তক্ষেপের’ বিপরীতে উল্লেখ করেন।

পাশাপাশি এটি প্রেসিডেন্টকে একটি ব্যতিক্রমী ক্ষমতা প্রদান করেছে, তা হলো—  জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার অধিকার।

তিনি আরো বলেন, জনগণের পরিষদের (পার্লামেন্ট) এক-তৃতীয়াংশ সদস্য প্রেসিডেন্ট কর্তৃক মনোনীত হবেন এবং এই পরিষদ আইন প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করবে। একটি সর্বোচ্চ নির্বাচন কমিটি গঠন করা হবে, যা সংসদ সদস্যদের নির্বাচন তদারকি করবে।

অভিশংসনযোগ্য নন প্রেসিডেন্ট

এই ঘোষণার অধীনে সংসদ প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করতে পারবে না, ঠিক যেমন প্রেসিডেন্টও কোনো আইন প্রণেতাকে বরখাস্ত করতে পারবেন না। আওয়াক বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে নির্বাহী ক্ষমতা শুধু প্রেসিডেন্টের হাতে থাকবে, ‘যাতে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবেলা করা যায়।’

তিনি আরো জানান, এই ঘোষণা ‘মতপ্রকাশ, বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করে। পাশাপাশি এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ‘বিশেষ আদালত’ প্রতিষ্ঠার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে বহু সিরীয় নাগরিক দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

এই ঘোষণা সরকারিভাবে প্রকাশিত হলেই তা কার্যকর হবে জানিয়ে আওয়াক বলেন, ভবিষ্যৎ স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।

এর আগে জানুয়ারির শেষ দিকে আল-শারা একটি ‘সাংবিধানিক ঘোষণা’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ‘আইনি ভিত্তি’ হিসেবে কাজ করবে। এরপর মার্চের শুরুতে তিনি একটি সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন, যাতে দুজন নারীও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সেই সময় প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে জানানো হয়, ‘সিরিয়ার জনগণের আইনশাসনের ভিত্তিতে তাদের রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষা এবং সিরীয় জাতীয় সংলাপ সম্মেলনের ফলাফলের ভিত্তিতে এই ঘোষণা এসেছে।’

প্রসঙ্গত, ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্ব দেওয়া ও আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার মূল ভূমিকা পালন করা আল-শারাকে জানুয়ারির শেষ দিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।