আলোচ্য সুরার শুরুতে মহানবী (সা.)-এর ঐতিহাসিক মিরাজের বর্ণনা এসেছে। ই সুরায় বনি ইসরাঈলের ঔদ্ধত্য ও পাপাচার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ইসলামের সামাজিক শিষ্টাচার সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। মাতা-পিতার আনুগত্য করতে বলা হয়েছে। তাঁদের জন্য দোয়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ‘উফ’ বলতেও নিষেধ করা হয়েছে।
এতে হত্যা ও ব্যভিচার থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। এই সুরায় মানব মর্যাদা উন্নীত করে তাকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মানবচরিত্রের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। মহানবী (সা.)-কে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুসা (সা.)-এর শরিয়তের সারমর্ম তুলে ধরা হয়েছে এবং কোরআনকে অল্প অল্প করে নাজিল করার তাত্পর্য বর্ণনা করা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. ইসরা ও মিরাজ উভয়টি অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। তাই কোনো প্রকার ব্যাখ্যা ছাড়া তা বিশ্বাস করা আবশ্যক। (আয়াত: ১)
২. ইসরা ও মিরাজ উভয়টি নবীজি (সা.)—এর সশরীরে হয়েছিল। (আয়াত: ১)
৩. আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন যে পানাহারের পর তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। (আয়াত: ৩)
৪. মানুষ যখন আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের অধিকার নষ্ট করে, তখন আল্লাহ তাদের ওপর অত্যাচারী শাসক ও বাহিনী চাপিয়ে দেন। (আয়াত: ৫)
৫. অধিক জনসংখ্যা অভিশাপ নয়, বরং তা আল্লাহর অনুগ্রহ। (আয়াত: ৬)
৬. দিনের প্রকৃতি ও পরিবেশ কাজের উপযোগী। তাই দিনের কর্মঘণ্টার যত্নবান হওয়া আবশ্যক। (আয়াত: ১২)
৭. একজনের অপরাধে অন্যকে শাস্তি দেওয়া ইসলামী শরিয়তে অনুমোদিত নয়। (আয়াত: ১৫)
৮. তিন জিনিস বিশুদ্ধ না হলে আমল কবুল হয় না : ক. আকিদা-বিশ্বাস, খ. নিয়ত, গ. কাজ। (আয়াত: ১৮-১৯)
৯. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার মতো মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া ওয়াজিব। (আয়াত: ২৩)
১০. পিতা-মাতার হক নষ্ট করা এবং তাদের অবাধ্যতার শাস্তি আল্লাহ দুনিয়াতেও দেন। (আয়াত: ২৩)
১১. মা-বাবার পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের অধিকার আদায় করাও গুরুত্বপূর্ণ। (আয়াত: ২৬)
১২. প্রয়োজন পূরণ ও নেক কাজে মানুষ ব্যয় করবে। তবে ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ অবশিষ্ট রাখবে। (আয়াত: ২৯)
১৩. ইসলামে কন্যা শিশুর প্রতি বিদ্বেষ নিন্দনীয় ও নিষিদ্ধ। (আয়াত: ৩১)
১৪. ইসলামী শরিয়তের ভ্রুণহত্যা নিষিদ্ধ। (আয়াত: ৩১)
১৫. ব্যাভ্যিচার যেমন হারাম, ব্যাভিচারের প্রতি প্রলুব্ধ করে এমন সবকিছু হারাম। যেমন অসংযত দৃষ্টি, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক ইত্যাদি। (আয়াত: ৩২)
১৬. এতিমের সম্পদ আত্মসাত্ করা আরো গুরুতর পাপ। (আয়াত: ৩৪)
১৭. পাপ ও ধৃষ্টতার কারণে মানুষের চিন্তা-ভাবনায় অসারতা দেখা দেয়। (আয়াত: ৪৫)
১৮. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ব্যাপারে মন্দ বিশেষণ ব্যবহার করা এবং তাঁকে মন্দ কিছুর সঙ্গে তুলনা করা অপরাধ। (আয়াত: ৪৮)
১৯. মুমিন ক্রোধের সময়ও সংযম প্রদর্শন করে। (আয়াত: ৫৩)
২০. তিনটি বিশেষ গুণের মাধ্যমে রাসুল (সা.)-কে সব নবী-রাসুলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তা হলো : ক. শেষ নবী হওয়া, খ. শেষ্ঠ ও চূড়ান্ত কিতাব কোরআন লাভ, গ. মিরাজে গমন। (আয়াত: ৫৫)
২১. ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভই আল্লাহকে পাওয়ার মাধ্যম। (আয়াত: ৫৭)
২২. ছোট ছোট বিপদের মাধ্যমে আল্লাহ প্রথমে মানুষকে সতর্ক করেন। অতঃপর তাদেরকে ধ্বংস করেন। (আয়াত: ৫৮)
২৩. মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মূল ভিত্তি ঈমান, আল্লাহভীতি ও তাঁর নৈকট্য। (আয়াত: ৭০)
২৪. মানুষকে মাতৃভূমি থেকে বের করে দেওয়া পাপ। (আয়াত: ৭৬)
২৫. তাহাজ্জুদ সবচেয়ে মর্যাদাশীল নফল নামাজ। (আয়াত: ৭৯)
২৬. কোরআন শারীরিক ব্যাধির জন্যও আরোগ্য স্বরূপ। (আয়াত: ৮২)
২৭. রুহ সরাসরি আল্লাহর আদেশে সৃষ্টি। (আয়াত: ৮৫)
২৮. মুসলমানরা দ্বিনদারির মধ্যে সর্বপ্রথম আমানতদারিতা এবং সর্বশেষ নামাজকে হারিয়ে ফেলবে। (আয়াত: ৮৭)
২৯. মানুষের জন্য ফেরেশতা নয়, মানুষই নবী হওয়ার অধিক যোগ্য। (আয়াত: ৯৪)
৩০. আল্লাহর সত্ত্বাগত নামে তাঁর জিকিরের মতো তাঁর গুণবাচক নামে তাঁর জিকির করলে সাওয়াব মেলে। (আয়াত: ১১০)