শিরোনাম :
Logo কচুয়ায় বায়েক-রাগদৈল সড়কের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে এলাকাবাসী Logo চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর ও হানারচর ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ Logo সরকার ও আইনের উদাসীনতায় বাড়ছে নারী ধর্ষণ ও সহিংসতা Logo সিমাগো র‌্যাঙ্কিংয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ স্থান অর্জন Logo কোচিংয়ে যাওয়ার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় ভাই-বোন সহ তিন জনের মৃত্যু Logo চুয়াডাঙ্গায় ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল Logo চুয়াডাঙ্গায় সেমাই ও মসলা প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় অভিযান, ২০ হাজার টাকা জরিমানা Logo রমজানে দান-সদকা Logo তারাবিতে কোরআনের বার্তা: পর্ব ১২ Logo ভারতে অবৈধ অভিবাসন রোধে কঠোর প্রস্তাব, অনুপ্রবেশ করলে ৫ বছর কারাদণ্ড

‘মনে হচ্ছিল যেন কেয়ামত নেমে এসেছে’

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর হামলায় জিম্মি হওয়া সব যাত্রীকে মুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলুচিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি হাইজ্যাক করে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। এই ঘটনায় ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী জিম্মি হয়েছিলেন। ট্রেন ছিনতাইয়ের মিশনে অংশ নিয়েছিলেন বিএলএ’র ৩০ জন সশস্ত্র যোদ্ধা। তাদের সবাই সেনা অভিযানে নিহত হয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসে ভয়াবহ এ ঘটনার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন উদ্ধার যাত্রীরা। ইশাক নূর নামের এক যাত্রী বলেছেন, ‘যখন গুলি চলছিল, ভয়ে-আতঙ্কে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কারণ আমরা জানতাম না যে পরবর্তীতে কী হতে চলেছে।’

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল প্রায় ৯টার দিকে নয় বগির জাফর এক্সপ্রেস খাইবার পাখতুনখওয়ার পেশোয়ার শহরের উদ্দেশে বেলুচিস্তানের কোয়েটা ছেড়ে যায়। এরপর দুপুর প্রায় ১টার দিকে বেলুচিস্তানের বোলান জেলার পানির ও পেশি রেল স্টেশনের মাঝামাঝি মুশকাফের নিকটবর্তী রেলওয়ে টানেল ৮ এর কাছে ট্রেনটিতে হামলা হওয়ার খবর আসে।

হামলার পরপরই এর দায় স্বীকার করে বার্তা দেয় বিএলএ। বার্তায় বলা হয়, কারাগারে বন্দি সব বালোচ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া হলে ট্রেনের যাত্রীদের সবাইকে হত্যা করা হবে। দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় বিএলএ।

হামলার সময় ট্রেনটিতে ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। এই যাত্রীদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন ছিলেন পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের পরিবরের সদস্য।

জিম্মিদের ‍উদ্ধারে বুধবার থেকে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। তবে অভিযান শুরুর আগেই ২১ জনকে হত্যা করে বিএলএ যোদ্ধারা।

উদ্ধার এই যাত্রীদের একজন মুহম্মদ আশরাফ। লাহোরে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কোয়েটা থেকে জাফর এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন তিনি। আশরাফ বলেন, ‘যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক শুরু হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, যেন কেয়ামত নেমে এসেছে।’

ছিনতাইয়ের পরপরই অবশ্য কয়েকজন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে পড়তে পেরেছিলেন। মুহম্মদ আশরাফও তাদের মধ্যেম একজন। আশরাফ জানান, ট্রেন থেকে নামার পর পরবর্তী স্টেশনের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন তারা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে। কারণ ঘটনাস্থল থেকে সবচেয়ে কাছের স্টেশনের দূরত্ব হাঁটা পথে ৪ ঘণ্টা। আমাদের সঙ্গে নারী ও শিশুও ছিল বেশ কয়েকজন।’

মোহাম্মদ নূর নামে আরেক যাত্রী জানিয়েছেন, তিনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। যখন হামলা ঘটে, সে সময় ছিনতাইকারীদের সম্ভাব্য গুলি থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি এবং তার স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি আর আমার স্ত্রী ঢাল হয়ে সন্তানদের আড়াল করছিলাম। যাতে গুলি যদি আসে, তা যেন তাদের গায়ে না লাগে।’

মুশতাক মুহম্মদ নামের আরেক যাত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা তীব্র আতঙ্কে ছিলাম। হামলাকারীদের কথা প্রায় কিছুই বুজতে পারছিলাম না, কারণ তারা বেলুচ ভাষায় কথা বলছিল। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল— এ যাত্রা আর বেঁচে ফিরতে পারব না।’

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কচুয়ায় বায়েক-রাগদৈল সড়কের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

‘মনে হচ্ছিল যেন কেয়ামত নেমে এসেছে’

আপডেট সময় : ০২:৪০:৫৭ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর হামলায় জিম্মি হওয়া সব যাত্রীকে মুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলুচিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি হাইজ্যাক করে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। এই ঘটনায় ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী জিম্মি হয়েছিলেন। ট্রেন ছিনতাইয়ের মিশনে অংশ নিয়েছিলেন বিএলএ’র ৩০ জন সশস্ত্র যোদ্ধা। তাদের সবাই সেনা অভিযানে নিহত হয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসে ভয়াবহ এ ঘটনার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন উদ্ধার যাত্রীরা। ইশাক নূর নামের এক যাত্রী বলেছেন, ‘যখন গুলি চলছিল, ভয়ে-আতঙ্কে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কারণ আমরা জানতাম না যে পরবর্তীতে কী হতে চলেছে।’

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল প্রায় ৯টার দিকে নয় বগির জাফর এক্সপ্রেস খাইবার পাখতুনখওয়ার পেশোয়ার শহরের উদ্দেশে বেলুচিস্তানের কোয়েটা ছেড়ে যায়। এরপর দুপুর প্রায় ১টার দিকে বেলুচিস্তানের বোলান জেলার পানির ও পেশি রেল স্টেশনের মাঝামাঝি মুশকাফের নিকটবর্তী রেলওয়ে টানেল ৮ এর কাছে ট্রেনটিতে হামলা হওয়ার খবর আসে।

হামলার পরপরই এর দায় স্বীকার করে বার্তা দেয় বিএলএ। বার্তায় বলা হয়, কারাগারে বন্দি সব বালোচ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া হলে ট্রেনের যাত্রীদের সবাইকে হত্যা করা হবে। দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় বিএলএ।

হামলার সময় ট্রেনটিতে ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। এই যাত্রীদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন ছিলেন পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের পরিবরের সদস্য।

জিম্মিদের ‍উদ্ধারে বুধবার থেকে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। তবে অভিযান শুরুর আগেই ২১ জনকে হত্যা করে বিএলএ যোদ্ধারা।

উদ্ধার এই যাত্রীদের একজন মুহম্মদ আশরাফ। লাহোরে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কোয়েটা থেকে জাফর এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন তিনি। আশরাফ বলেন, ‘যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক শুরু হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, যেন কেয়ামত নেমে এসেছে।’

ছিনতাইয়ের পরপরই অবশ্য কয়েকজন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে পড়তে পেরেছিলেন। মুহম্মদ আশরাফও তাদের মধ্যেম একজন। আশরাফ জানান, ট্রেন থেকে নামার পর পরবর্তী স্টেশনের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন তারা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে। কারণ ঘটনাস্থল থেকে সবচেয়ে কাছের স্টেশনের দূরত্ব হাঁটা পথে ৪ ঘণ্টা। আমাদের সঙ্গে নারী ও শিশুও ছিল বেশ কয়েকজন।’

মোহাম্মদ নূর নামে আরেক যাত্রী জানিয়েছেন, তিনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। যখন হামলা ঘটে, সে সময় ছিনতাইকারীদের সম্ভাব্য গুলি থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি এবং তার স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি আর আমার স্ত্রী ঢাল হয়ে সন্তানদের আড়াল করছিলাম। যাতে গুলি যদি আসে, তা যেন তাদের গায়ে না লাগে।’

মুশতাক মুহম্মদ নামের আরেক যাত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা তীব্র আতঙ্কে ছিলাম। হামলাকারীদের কথা প্রায় কিছুই বুজতে পারছিলাম না, কারণ তারা বেলুচ ভাষায় কথা বলছিল। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল— এ যাত্রা আর বেঁচে ফিরতে পারব না।’