শিরোনাম :
Logo রাজধানীতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্মরণে টেকনাফ প্রেসক্লাবের দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা Logo বাংলাদেশি না বাঙালি : আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায় Logo শিশুদের ঝলসানো শরীর যেন ঝলসানো বাংলাদেশ Logo বিমান বিধ্বস্তে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনায় কচুয়ায় ওয়ার্ড যুবদলের আয়োজনে দোয়া মাহফিল Logo বিনয়কাঠিতে ছিনতাইয়ের অভিযোগে জনগনের হাতে আটক ২ পুলিশে সোপর্দ Logo পাকিস্তানকে ১৩৪ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ Logo সাজিদের ইস্যুতে ইবি শিক্ষার্থীদের মৌন অবস্থান, আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি Logo ফিলিপাইনে ভয়াবহ বন্যা Logo ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহত ১৫ Logo বীরগঞ্জে রাস্তার গাছ কাটা ও চাঁদা দাবীর অপরাধে এনসিপি নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

‘মনে হচ্ছিল যেন কেয়ামত নেমে এসেছে’

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর হামলায় জিম্মি হওয়া সব যাত্রীকে মুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলুচিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি হাইজ্যাক করে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। এই ঘটনায় ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী জিম্মি হয়েছিলেন। ট্রেন ছিনতাইয়ের মিশনে অংশ নিয়েছিলেন বিএলএ’র ৩০ জন সশস্ত্র যোদ্ধা। তাদের সবাই সেনা অভিযানে নিহত হয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসে ভয়াবহ এ ঘটনার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন উদ্ধার যাত্রীরা। ইশাক নূর নামের এক যাত্রী বলেছেন, ‘যখন গুলি চলছিল, ভয়ে-আতঙ্কে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কারণ আমরা জানতাম না যে পরবর্তীতে কী হতে চলেছে।’

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল প্রায় ৯টার দিকে নয় বগির জাফর এক্সপ্রেস খাইবার পাখতুনখওয়ার পেশোয়ার শহরের উদ্দেশে বেলুচিস্তানের কোয়েটা ছেড়ে যায়। এরপর দুপুর প্রায় ১টার দিকে বেলুচিস্তানের বোলান জেলার পানির ও পেশি রেল স্টেশনের মাঝামাঝি মুশকাফের নিকটবর্তী রেলওয়ে টানেল ৮ এর কাছে ট্রেনটিতে হামলা হওয়ার খবর আসে।

হামলার পরপরই এর দায় স্বীকার করে বার্তা দেয় বিএলএ। বার্তায় বলা হয়, কারাগারে বন্দি সব বালোচ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া হলে ট্রেনের যাত্রীদের সবাইকে হত্যা করা হবে। দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় বিএলএ।

হামলার সময় ট্রেনটিতে ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। এই যাত্রীদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন ছিলেন পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের পরিবরের সদস্য।

জিম্মিদের ‍উদ্ধারে বুধবার থেকে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। তবে অভিযান শুরুর আগেই ২১ জনকে হত্যা করে বিএলএ যোদ্ধারা।

উদ্ধার এই যাত্রীদের একজন মুহম্মদ আশরাফ। লাহোরে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কোয়েটা থেকে জাফর এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন তিনি। আশরাফ বলেন, ‘যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক শুরু হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, যেন কেয়ামত নেমে এসেছে।’

ছিনতাইয়ের পরপরই অবশ্য কয়েকজন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে পড়তে পেরেছিলেন। মুহম্মদ আশরাফও তাদের মধ্যেম একজন। আশরাফ জানান, ট্রেন থেকে নামার পর পরবর্তী স্টেশনের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন তারা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে। কারণ ঘটনাস্থল থেকে সবচেয়ে কাছের স্টেশনের দূরত্ব হাঁটা পথে ৪ ঘণ্টা। আমাদের সঙ্গে নারী ও শিশুও ছিল বেশ কয়েকজন।’

মোহাম্মদ নূর নামে আরেক যাত্রী জানিয়েছেন, তিনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। যখন হামলা ঘটে, সে সময় ছিনতাইকারীদের সম্ভাব্য গুলি থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি এবং তার স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি আর আমার স্ত্রী ঢাল হয়ে সন্তানদের আড়াল করছিলাম। যাতে গুলি যদি আসে, তা যেন তাদের গায়ে না লাগে।’

মুশতাক মুহম্মদ নামের আরেক যাত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা তীব্র আতঙ্কে ছিলাম। হামলাকারীদের কথা প্রায় কিছুই বুজতে পারছিলাম না, কারণ তারা বেলুচ ভাষায় কথা বলছিল। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল— এ যাত্রা আর বেঁচে ফিরতে পারব না।’

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

রাজধানীতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্মরণে টেকনাফ প্রেসক্লাবের দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা

‘মনে হচ্ছিল যেন কেয়ামত নেমে এসেছে’

আপডেট সময় : ০২:৪০:৫৭ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর হামলায় জিম্মি হওয়া সব যাত্রীকে মুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলুচিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি হাইজ্যাক করে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। এই ঘটনায় ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী জিম্মি হয়েছিলেন। ট্রেন ছিনতাইয়ের মিশনে অংশ নিয়েছিলেন বিএলএ’র ৩০ জন সশস্ত্র যোদ্ধা। তাদের সবাই সেনা অভিযানে নিহত হয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসে ভয়াবহ এ ঘটনার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন উদ্ধার যাত্রীরা। ইশাক নূর নামের এক যাত্রী বলেছেন, ‘যখন গুলি চলছিল, ভয়ে-আতঙ্কে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কারণ আমরা জানতাম না যে পরবর্তীতে কী হতে চলেছে।’

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল প্রায় ৯টার দিকে নয় বগির জাফর এক্সপ্রেস খাইবার পাখতুনখওয়ার পেশোয়ার শহরের উদ্দেশে বেলুচিস্তানের কোয়েটা ছেড়ে যায়। এরপর দুপুর প্রায় ১টার দিকে বেলুচিস্তানের বোলান জেলার পানির ও পেশি রেল স্টেশনের মাঝামাঝি মুশকাফের নিকটবর্তী রেলওয়ে টানেল ৮ এর কাছে ট্রেনটিতে হামলা হওয়ার খবর আসে।

হামলার পরপরই এর দায় স্বীকার করে বার্তা দেয় বিএলএ। বার্তায় বলা হয়, কারাগারে বন্দি সব বালোচ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া হলে ট্রেনের যাত্রীদের সবাইকে হত্যা করা হবে। দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় বিএলএ।

হামলার সময় ট্রেনটিতে ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। এই যাত্রীদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন ছিলেন পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের পরিবরের সদস্য।

জিম্মিদের ‍উদ্ধারে বুধবার থেকে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। তবে অভিযান শুরুর আগেই ২১ জনকে হত্যা করে বিএলএ যোদ্ধারা।

উদ্ধার এই যাত্রীদের একজন মুহম্মদ আশরাফ। লাহোরে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কোয়েটা থেকে জাফর এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন তিনি। আশরাফ বলেন, ‘যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক শুরু হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, যেন কেয়ামত নেমে এসেছে।’

ছিনতাইয়ের পরপরই অবশ্য কয়েকজন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে পড়তে পেরেছিলেন। মুহম্মদ আশরাফও তাদের মধ্যেম একজন। আশরাফ জানান, ট্রেন থেকে নামার পর পরবর্তী স্টেশনের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন তারা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে। কারণ ঘটনাস্থল থেকে সবচেয়ে কাছের স্টেশনের দূরত্ব হাঁটা পথে ৪ ঘণ্টা। আমাদের সঙ্গে নারী ও শিশুও ছিল বেশ কয়েকজন।’

মোহাম্মদ নূর নামে আরেক যাত্রী জানিয়েছেন, তিনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। যখন হামলা ঘটে, সে সময় ছিনতাইকারীদের সম্ভাব্য গুলি থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি এবং তার স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি আর আমার স্ত্রী ঢাল হয়ে সন্তানদের আড়াল করছিলাম। যাতে গুলি যদি আসে, তা যেন তাদের গায়ে না লাগে।’

মুশতাক মুহম্মদ নামের আরেক যাত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা তীব্র আতঙ্কে ছিলাম। হামলাকারীদের কথা প্রায় কিছুই বুজতে পারছিলাম না, কারণ তারা বেলুচ ভাষায় কথা বলছিল। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল— এ যাত্রা আর বেঁচে ফিরতে পারব না।’