রমজান হলো সবর ও মুয়াসাতের মাস। সবর মানে ধৈর্য আর মুয়াসাত মানে সহানুভূতি। গরিব-দুঃখি ও অসহায় মানুষেরা বিভিন্ন সময় ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করে থাকে। রোজার মাধ্যমে রোজাদারের সে উপলব্ধির সুযোগ হয়। অন্যের দুঃখ-কষ্ট বোঝার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। সহানুভূতি প্রকাশের পথ উন্মুক্ত হয়। তার আলোকে রমজানে অপরিহার্য ও সাধারণ; সব ধরনের দান-সদকার ক্ষেত্রে উদার হতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এমনিতেও সব মানুষের চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে তাঁর দানের হাত আরো বেশি সুপ্রসারিত হতো।
ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সব মানুষের চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে তাঁর দানের হাত আরো বেশি সুপ্রসারিত হতো যখন জিবরাঈল (আ.) তাঁর সাথে সাক্ষাত্ করতেন। রমজানের প্রতি রাতে জিবরাঈল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতেন। রাসুল (সা.) জিবরাঈল (আ.)-এর সাথে কোরআন মজিদ পুনরাবৃত্তি করতেন। আর রাসুল (সা.) প্রবলবেগে প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল ছিলেন। (বুখারি, হাদিস: ৬; মুসলিম, হাদিস: ৬১৪৯)
জাকাত : জাকাত এক বছরে একবার আদায়যোগ্য ইবাদত হলেও তা আদায়ের জন্য রমজানকে বেছে নেওয়া উচিত। কারণ, এতে একদিকে সহানুভূতি প্রকাশের মাসে সহানুভূতি প্রকাশ করা যায়। অন্যদিকে রমজানের করণে বেশি মাত্রায় নেকি পাওয়া যায়।
সাদাকাতুল ফিতর : সাদাকাতুল ফিতর তো এক মাস রোজা রাখার পর রোজার ভূল-ত্রম্নটির কাফ্ফারা হিসেবে আদায়কৃত সদকা। ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদাকাতুল ফিতর আত্নশুদ্ধি ও আমলের পূর্ণতার জন্য। (আবু দাউদ, হাদিস: ১৬১১; ইবন মাজাহ, হাদিস: ১৮২৭)
রাসুল (সা.) ঈদগাহে যাওয়ার আগেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতেন। তাছাড়া রোজার মাধ্যমে গরিবদের জীবন যাত্রার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়েই রোজাদার ঈদের মুখোমুখি হয়। ঈদের আনন্দে সবাইকে শরিক করতে জাকাত ও সাদাকাতুল ফিতর অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
অন্যকে ইফতার করানো : রমজানে অন্যকে ইফতার করানো রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। রমজানের বাইরে এর কোন সুযোগ নেই। অন্যকে ইফতার করানোর দ্বারা রোজার সমপরিমাণ সাওয়াব পাওয়া যায়। যায়দ ইবন খালিদ আল-জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় সে রোজাদারের মতোই সওয়াব লাভ করে এবং রোজাদারের সওয়াবও কমে না।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৮০৭)
সালমান (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করায় তার পাপ মাফ করে দেওয়া হয়, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তাকে রোজাদারের সওয়াব কমানো ছাড়াই রোজাদারের সমান সওয়াব দেওয়া হয়। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের অনেকেরই অন্যকে ইফতার করানোর সামর্থ নেই।
নবী (সা.) বলেন, যদি কেউ দুধ, খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দিয়েও ইফতার করায় আল্লাহ্ তাকেও এ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়ায় আল্লাহ্ তাকে আমার হাউজ থেকে এমনভাবে পান করাবেন যে, সে জান্নাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মোটেই পিপাসার্ত হবে না। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ১৯৬৫)
অধিনস্তদের কাজের চাপ কমিয়ে দেওয়া : রমজানে নিজের অধিনস্ত সবার কাজের চাপ কমিয়ে দেওয়া উচিত। মজুরি না কমিয়ে কাজের চাপ কমিয়ে দিলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের অধিনস্তদের কাজের চাপ কমিয়ে দেয়, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।’ (ইবন খুজাইমা, হাদিস: ১৮৮৭)
সাধারণ দান-সদকা: রমজানে সাধারণ ও নফল দান-সদকার পরিধি বৃদ্ধি করা একান্ত জরুরি। আল্লাহ বলেন, ‘তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে, কী ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তা-ই ব্যয় করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যেন তোমরা চিন্তা করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৯)
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।