চতুর্থদিনের মতো অনশনে তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা, বিকালে অবরোধ

0
3
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতির দাবিতে টানা চতুর্থদিনের মতো অনশন করছেন তিতুমীর কলেজের একদল শিক্ষার্থী।  শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) অনশনে রয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। আজ বিকাল ৪টার মধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা না এলে তারা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সড়ক অবরোধ করবেন।

আন্দোলনকারীদের নেতা নায়েক নূর মোহাম্মদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আজকে বিকাল ৪টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা না এলে আমরা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক অবরোধ করব।’

এই সদস্য আরও বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমার কারণে রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি শিথিল থাকবে। এর মধ্যে আমাদের অনশন কর্মসূচি যেটা চলছে, সেটা চলমান থাকবে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান ঘটনাস্থলে এসে প্রায় দেড় ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি। এ কারণে শিক্ষার্থীরা অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

শুক্রবার সকালে ঘোষণা দেওয়া হয়, অনশনরত শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান ফটকে জুমার নামাজ আদায় করবেন। প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রানী মণ্ডলসহ কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা। মো. নুরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তার পরও শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিতে রাজি হননি। তারা তিতুমীর কলেজকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ করার তাৎক্ষণিক ঘোষণা দেওয়ার দাবি করেন।

দীর্ঘ সময় বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান বলেন, ‘তোমাদের দাবি যে অযৌক্তিক– সেটা তো কেউ বলছেন না। কিন্তু এটি একটি প্রক্রিয়াধীন বিষয়। তোমরা ২৮ বছর ধরে আন্দোলন করছ। এটা তোমরা আদায় করেই ঘরে ফিরবা, সেটাও আমরা জানি। কিন্তু এখনই বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দেওয়াটা তো সম্ভব নয়। পরবর্তী সময়ে যত জায়গায় এটা নিয়ে কাজ হবে, আমি সেখানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। তোমরা আজকে রাতে ফিরে যাও।’

যুগ্ম সচিবের এমন বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা তা মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। তারা স্লোগান দেন, ‘হয় তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়, না হয় মৃত্যু’। এ ঘোষণা দিয়ে রাতেও তারা গণঅনশন, রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান।

আন্দোলনকারীদের ‘তিতুমীর ঐক্য’র সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা, শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।

এছাড়া ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম আইন এবং সাংবাদিকতা বিষয় সংযোজন, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বাড়াতে আসন সংখ্যা সীমিত এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবিও রয়েছে অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের।

এর আগে গত সোমবার রাতে ‘তিতুমীর ঐক্য’র তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

দাবি মানা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণাও দেওয়া হয় তখন। সেই সঙ্গে মঙ্গলবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে ‘শাটডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে ।

আন্দোলনকারীরা এর আগে ৭ জানুয়ারি শিক্ষালয়টির প্রধান ফটকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টানিয়ে দেন।

একই দাবিতে গত ১৮ নভেম্বর মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার ও রেলক্রসিংয়ে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। পরদিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ‘ক্লোজডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি দেন তারা। এরপর ৩ ডিসেম্বর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ওই কমিটি ‘যথাযথভাবে’ কাজ করছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।