সাকিব আল হাসান:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, “হাসিনা আর আওয়ামীলীগ সরকার গণঅভ্যুত্থানের সময় আমাদের কিনতে পারিনি। তাই এখন যারা ভাবছেন সংসদের কয়েকটা চেয়ার দিয়ে ছাত্রদের কিনে ফেলে ক্ষমতা দখল করবেন, তারা ভুল ভাবছেন। ক্ষমতার দিকে যারা যেতে চাচ্ছেন তাদেরকে বলি,আপনারা ক্ষমতার দিকে না যেয়ে জনতার দিকে আসুন, আমরাও আপনাদের পাশে থাকবো।
আজ মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বিপরীতে শিল্পকলা একাডেমি মুক্তমঞ্চ প্রাঙ্গন জাতীয় নাগরিক কমিটির, চুয়াডাঙ্গা রাইজিং শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ সড়কের পৌর মুক্তমঞ্চ মাঠ প্রাঙ্গণে আজ সোমবার বেলা ২টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘রাইজিং চুয়াডাঙ্গা’ছাত্র-জনতার মতবিনিময় সভা। কেন্দ্রীয় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখা আয়োজিত এই বিশেষ সভায় ফ্যাসিবাদ, গণতন্ত্র, আন্দোলন এবং সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নুসরাত তাবাসসুমসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয়,চুয়াডাঙ্গা জেলা,উপজেলাসহ,মেহেরপুর,কুষ্টিয়া জেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন,প্রিয় চুয়াডাঙ্গাবাসী, এই চুয়াডাঙ্গায় যেরকম অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন ছিলো সেরকম দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন এখনো হয়নি। এই চুয়াডাঙ্গা এত বড় একটা জেলা হওয়া স্বত্বেও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে এ জনপদের মানুষদের সেবা নিতে হয়। এই চুয়াডাঙ্গা সীমান্তবর্তী জেলা, এ জেলায় এখনো পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো তৈরি হয়নি। এ জেলার উন্নয়নে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতা কাজ করবে।
মনে রাখবেন, আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসন করেছে, ক্ষমতায় এসে তাদেরই হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। সুতরাং, আপনারা যারা ভাবছেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করবেন এবং পুনর্বাসিত আওয়ামী লীগ আপনাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে, আপনারা সেটা ভুল ভাবছেন। মনে রাখবেন, গর্দান এবং তলোয়ার কখনও একসঙ্গে থাকতে পারে না।”
“যারা ভোটের রাজনীতির জন্য আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের তৎপরতা চালাচ্ছেন, আপনারা জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে বেঈমানি করছেন। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের বিষয় না এনে, আওয়ামী লীগ যে ১৬ বছর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে, তার বিচারের দাবি তুলুন। আল্লাহর কসম করে বলছি, আপনারা যদি বিচারের জন্য আওয়াজ তোলেন, আমরা আবার আপনাদের সঙ্গে রাস্তায় নামব। এই ফ্যাসিবাদ-জুলুম যারা কায়েম করেছে, তাদের পক্ষে যদি আপনারা দাঁড়ান, তাহলে সেটি হচ্ছে মজলুমের বিপক্ষে। আমরা শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এ ফ্যাসিবাদকে ঠেকাব,” বলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই নেতা।
তিনি আরও বলেন, “এতগুলো ছেলে রাস্তায় প্রাণ দিয়েছে। বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের অবদান আমরা স্বীকার করি। দীর্ঘ ১৬ বছর আপনারা নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্যে দিয়ে গেছেন। আপনারা বাসার মধ্যে ভাতটা ঠিকমতো খেতে পারেননি। মামলার ভয়ে এই বাড়ি, ওই বাড়িতে থাকতে হয়েছে। ভালো একটা পোশাক পরতে পারেননি। ৬০-৭০টা মামলায় সপ্তাহে পাঁচ দিন হাজিরা দিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের এসব অত্যাচার আপনারা কীভাবে এত সহজে ভুলে গেলেন!”
ইতিবাচক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, “এখানে সকলের অংশগ্রহণ থাকবে। সেই বাংলাদেশ করার জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করব। সেখানে কোনো বিভাজন থাকবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।”
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও এর আগে কোটা সংস্কারসহ বিভিন্ন আন্দোলন ও সংস্কারমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্রসমাজ ও জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার উপস্থিতি এই সভার গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেছেন।