মোঃ সুমন আলী খান, হবিগঞ্জ থেকে ॥
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ৪ মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে, ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা আছেন ১৫ দিনের ছুটিতে, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ঢাকায় গেছেন ট্রেনিংয়ে। যারা দায়ীত্বপালনের কথা তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা বাণিজ্যে। এভাবেই চলছে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধেও। সবমিলিয়ে প্রয়োজনীয় লোকবল ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নবীগঞ্জ উপজেলাবাসী। উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ লোকের নিরাপদ চিকিৎসা সেবার একমাত্র সরকারি সেবা কেন্দ্র নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। চিকিৎসক না পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে হাসপাতালে আসা রোগীরা ফিরে অন্যত্র যাচ্ছেন। বর্তমানে ১ জন চিকিৎসক দিয়েই চলছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রক্রিয়া চললেও বাড়েনি জনবল। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র ১ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালের প্রায় ৪৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। এতে উপজেলার বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীসহ আশপাশের উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ১৩ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা নিয়ে জেলার জনসংখ্যার দিক দিয়ে বৃহত্তম উপজেলা নবীগঞ্জ। উপজেলার লোক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। এ ছাড়াও সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার সীমান্তে নবীগঞ্জের অবস্থান। পার্শ¦বর্তী হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও বাহুবল উপজেলা, সুনামগঞ্জের দিরাই ও জগন্নাথপুর উপজেলা, মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাও এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালে ময়লাযুক্ত বিছানাপত্র পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের ব্যাপক অভিযোগ করেন চিকিৎসাধীন রোগীরা। এছাড়া হাসপাতালের বহিঃ বিভাগে ময়লা আবর্জনা ও দূর্গন্ধের জন্য ভর্তিকৃত রোগীরা সুস্থ্য হওয়ার বদলে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতালের জেনারেটরটিকে মনে হয় যাবৎজীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। যেখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে ভূতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এখানে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যার যার মতো করে ডিউটি করছেন চিকিৎসকরা। ফলে আগত রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারীভাবে বেতনভুক্ত চিকিৎসকরা সিন্ডিকেট করে হাসপাতালে রোগী দেখার পরিবর্তে নিজস্ব চেম্বারে বেশির ভাগ সময় রোগী দেখেন। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে তাদের চিকিৎসার নামে রমরমা বাণিজ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালে চিকিৎসক পদ ৯টি থাকলেও এর মধ্যে ৬টি পদ শূন্য। যারা কর্মরত রয়েছেন, তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম চিকিৎসার জন্য ১ মাসের ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেও বিগত প্রায় ৪ মাস ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি বিদেশে অবস্থানের কারণে ওই পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন ডা. আব্দুস সামাদ। তবে ড. আব্দুস সামাদ ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পঃপঃ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের জন্য প্রায় সময়ই বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতে থাকেন। তবে গত ৩/৪ দিন আগ থেকে তিনিও ১৫ দিনের অর্জিত ছুটিতে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ইফতেখার হোসেন গত ২ দিন পূর্বে ট্রেনিংয়ে গেছেন ঢাকায়। মেডিকেল অফিসার ২ জনের মধ্যে ডা. গোলাম শাহরিয়ার প্রেষনে (ডেপুটেশন) ঢাকা মেডিক্যালে কর্মরত। শুধু ডাঃ সাইফুর রহমান সাগরই কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মৌসুমী সাহা হাসপাতালে যোগ দিলেও ট্রেনিং ও বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে প্রায়ই ঢাকায় অবস্থান করেন। সে হিসেবে হাসপাতালটিতে বর্তমানে চিকিৎসক মাত্র ১ জন। হাসপাতালে অন্যান্য পদের মধ্যে ১৯ জন নার্সিং অফিসার পদ থাকলেও সেখানে কর্মরত রয়েছেন ১২ জন, ৭টি পদ এখনো শূন্য। ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ২০ জনের মধ্যে ১৩ জন কর্মরত রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১ শত ৩৬ জন জনবলের স্থলে আছেন ৯৩ জন। বাকি ৪৪টি পদ শূন্য রয়েছে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ২ জন ফার্মাসিস্টের জায়গায় ১ জনও না থাকায় ওষুধ বিতরণে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে গেলে দেখা যায় জরুরী বিভাগে দায়ীত্ব পালন করছেন ডাঃ ইদ্দিছ আলম। তবে এর আগে ডিউটিতে ছিলেন ডাঃ মেহেদী হাসান। যদিও তিনি একটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত। এ ছাড়া প্রায়ই হাসপাতালে ঘটছে ছোট বড় অনেক ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির খামেখেয়ালিপনার কারণে এই অবস্থ্যা বিরাজ করছে।
গতকাল হাসপাতালে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের রিপাতপুর গ্রামের সুফি মিয়া, হরিধরপুর গ্রামের জমর উদ্দিন, দিরাই থানার পুলন ইউনিয়নের বনিশাল গ্রামের হেপি দাশ, আজিদা বেগমসহ বেশ কয়েকজন রোগী অভিযোগের সুরে বলেন, তারা কেউ ৩ দিন, কেউ ৪ দিন আগে ভর্তি হয়েছেন টিকই কিন্তু চিকিৎসকরা তাদেরকে টিক মতো দেখছেন না। খাবারও দেওয়া হচ্ছেনা সময় মতো। তারা বলেন, চিকিৎসকরা তাদের প্রাইভেট বানিজ্যে ব্যস্ত থাকায় চেম্বারেই বেশির ভাগ সময় কাটান।
ওই সময়ে হাসপাতালে দায়ীত্বরত উপ-সহঃ ডাঃ ইদ্দিছ আলম জানান, তারা ২৪ ঘন্টা রোগিদের শতভাগ চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে চিকিৎসকের কিছু পদ খালি রয়েছে কতৃপক্ষ এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে অবহিত করা হয়েছে।