রমজান মাস মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ বরকতময় সময়, যেখান আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের সুযোগ মেলে। এই মাসের অন্যতম বৈশষ্ট্যি হলো কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান। ইতিহাস সাক্ষী, আমাদের পূর্বসূরি মনীষীরা রমজানে অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় কোরআন তিলাওয়াতকে অধিক অগ্রাধিকার দিতেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আল-বুখারি (রহ.), যিনি হাদিস সংকলনে অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করলেও কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি গভীর অনুরাগ পোষণ করতেন।
ইমাম বুখারি (রহ.) শুধুমাত্র হাদিস সংকলনে ব্যস্ত ছিলেন না, বরং কোরআনের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা ছিল। পবিত্র রমজান মাসে তাঁর তিলাওয়াতের পরিমাণ ছিল অভূতপূর্ব। ইতিহাসবিদ আল্লামা খতিবে বাগদাদি (রহ.) বলেন, ইমাম বুখারি (রহ.) প্রতিদিন সাহরির সময় কোরআনের অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতেন এবং প্রতি তিন রাত অন্তর সাহরির সময় একবার কোরআন খতম করতেন। এছাড়াও, দিনের বেলায় একবার পূর্ণ কোরআন খতম করতেন, এবং ইফতারের সময় আরেকবার কোরআন খতম করতেন। (তারিখে বাগদাদ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা : ৩৩১)
এর পেছনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল
১. ইফতারের সময় দোয়া কবুলের মুহূর্ত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৪৩)
২. কোরআন খতমের পর দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা। বিভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে যে যখন কেউ কোরআন খতম করে, তখন তার দোয়া কবুল হয়। (আল মুজামুল কাবির, হাদিস: ৬৭৩; আত-তিবইয়ান ফি আদাবি হামালাতিল কোরআন, পৃষ্ঠা : ১৫৯)
ইমাম বুখারি (রহ.) এই দুটি বরকতময় সময়কে একত্রিত করে ইফতারের মুহূর্তে কোরআন খতম করতেন, যেন তঁার দোয়া অধিকতর কবুল হয়।
ইমাম বুখারি (রহ.)-এর জীবন আমাদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি শুধু হাদিস সংকলনের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেননি, বরং কোরআন তিলাওয়াতের প্রতিও রেখেছেন বিশেষ যত্ন। আমাদের জন্য এটি এক বড় শিক্ষা আমাদের ব্যস্ততার মাঝেও কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখা উচিত।
বিশেষত, রমজান মাসে কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এটি শুধু আত্মার পরিশুদ্ধিই ঘটায় না, বরং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যমও বটে। ইমাম বুখারি (রহ.)-এর উদাহরণ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, রমজান মাস শুধুমাত্র রোজা রাখার জন্য নয়, বরং কোরআনের মাস হিসেবে এটিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করাও আবশ্যক।
আমাদের পূর্বসূরি মনীষীরা কোরআনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন, বিশেষত রমজান মাসে তারা অন্যান্য নফল ইবাদতের চেয়ে কোরআন তিলাওয়াতকে অধিক গুরুত্ব দিতেন। তাই আমাদেরও উচিত কোরআনকে হূদয়ে স্থান দেওয়া, এর তিলাওয়াতকে জীবনের অপরিহার্য অংশ বানানো এবং বিশেষত রমজান মাসে অধিক পরিমাণে তিলাওয়াতের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি সাধন করা। কেননা, কোরআনই আমাদের সত্য পথের দিশারি এবং পরকালের সাফল্যের চাবিকাঠি। আল্লাহ তাআলা আমাদের কোরআনময় রমজান অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া মাদানিয়া, শুলকবহর, চট্টগ্রাম।