দেশে দেশে রমজান-সংস্কৃতি

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ১১:৩০:৫৬ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
  • ৭০৭ বার পড়া হয়েছে
রমজান এক গভীর আধ্যাত্মিক মাস, যা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আচার ও রীতি-নীতি পালন করার মাধ্যমে উদযাপিত হয়। আজকের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে রমজান মাস উদযাপনের অনন্য ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপর।

মধ্যপ্রাচ্যের রমজান ঐতিহ্য

১. মিসর : ‘ফানুস’ উত্সব : মিসরের রমজান অত্যন্ত জনপ্রিয়, বিশেষ করে ‘ফানুস’ উৎসবের জন্য। এটি বহু শতাব্দী ধরে রমজানের অন্যতম চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মিসরের মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, দোকান এবং রাস্তাঘাট ফানুস দিয়ে সাজায়, যা রমজানের শুভ্রতা ও আনন্দের প্রতীক। বিশেষ করে মিশরের রাজধানী কায়রোতে রমজান মাসের শুরুর দিকে ঐতিহ্যবাহী রঙিন ফানুসের মেলা বসে।

২. সৌদি আরব : মসজিদভিত্তিক ইফতার ও ঐতিহ্যবাহী খাবার : সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনার পবিত্র মসজিদগুলোতে রমজান মাসে ইফতার একটি বিশেষ সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। হাজার হাজার মুসল্লি একত্রে ইফতার করেন, যা রমজানের সৌন্দর্যকে আরো জাঁকজমকপূর্ণ করে তোলে। সৌদি আরবে রমজান মাসের খাবারের মধ্যে খেজুর, স্যুপ, সাম্বুসা, এবং আরবি কফি অন্যতম। এর মধ্যে সাম্বুসা বিশেষভাবে জনপ্রিয়, যা মূলত মাংস বা সবজি দিয়ে তৈরি একটি স্ন্যাকস।

৩. লেবানন : কামানের শব্দে ইফতার ঘোষণা : লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে রমজান মাসে কামান দাগানো হয়, যা ইফতার এবং সেহরি সময়সূচী ঘোষণা করে। মূলত, এটি মিসরের ঐতিহ্য থেকে শুরু হয়ে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কামানের শব্দের মাধ্যমে রমজান মাসের প্রতিদিনের ইফতার ঘোষণা করা হয় এবং এটি মুসলিমদের জন্য এক আবেগপূর্ণ সময় হয়ে ওঠে।

৪. সংযুক্ত আরব আমিরাত : ‘হক আল লায়লা’ উৎসব : সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশেষভাবে ‘হক আল লায়লা’ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় শাবান মাসের ১৫ তারিখে। এই উৎসবে শিশুদের বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করা হয়। তারা উজ্জ্বল পোশাক পরে প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে মিষ্টি ও বাদাম সংগ্রহ করে। এটি একটি ঐতিহ্যগত উৎসব, যা রমজানের আগমনের প্রতি আনন্দ প্রকাশ করে।

দক্ষিণ এশিয়ার রমজান সংস্কৃতি

৫. বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান: বাহারি ইফতার আয়োজন : বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে রমজানের সময় বিভিন্ন ধরনের খাবার দিয়ে ইফতার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের রাস্তা, মসজিদ এবং বাসাবাড়িতে ইফতার বিতরণ একটি ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, জিলাপি, শরবত, খেজুর, হালিম, সবই এই অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার। ইফতারের মাধ্যমে মুসলিমরা একে অপরের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখে।

৬. পাকিস্তান : সেহরি ডাক : পাকিস্তানে, বিশেষত পেশাওয়ার এবং কাশ্মীর অঞ্চলে সেহরির জন্য ‘সেহরি ডাক’ নামে একটি ঐতিহ্য প্রচলিত রয়েছে। যেখানে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত একদল ড্রাম বাজিয়ে সেহরি খাবারের জন্য মুসলিমদের ডেকে তুলে। এটা শুধু এক রীতিই নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক সেলিব্রেশন হিসেবে পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানানো হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রমজান সংস্কৃতি

৭. ইন্দোনেশিয়া: ‘পাডুসান’ (Padusan) প্রথা : ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে, রমজানের আগে বিশেষভাবে ‘পাডুসান’ নামে একটি ঐতিহ্য রয়েছে। পাডুসান অর্থ গোসল করা। জাভানিজ মুসলিমরা ঝর্ণার পানিতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর ডুবিয়ে রেখে এটি পালন করে। এই ঐতিহ্য অনুযায়ী, স্থানীয় মুসলমানরা নদী, ঝরনা বা সমুদ্রে স্নান করে নিজেদের পবিত্র করেন। এটি শুধুমাত্র শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নয়, আত্মিক পরিচ্ছন্নতা অর্জনের একটি উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

৮. মালয়েশিয়া: ‘পাসার রমাদান’ (Pasar Ramadhan) বাজার : মালয়েশিয়া রমজান মাসে ‘পাসার রমাদান’ নামে বিশেষ বাজার আয়োজন করে। এখানে ইফতারের জন্য বিভিন্ন ধরনের মালয় খাবার, মিষ্টি, রুটি ও ফলমূল পাওয়া যায়। এই বাজারগুলি শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য নয়, বরং একটি সামাজিক জমায়েত হিসেবেও ব্যবহূত হয়, যেখানে মানুষ একে অপরের সাথে মিলিত হয়।

আফ্রিকার রমজান ঐতিহ্য

৯. সেনেগাল: ‘নডগু’ (Ndogou) ইফতার : সেনেগালে, ইফতারের সময় ‘নডগু’ নামে পরিচিত একটি প্রথা রয়েছে, যেখানে সমাজের সবাই একত্রিত হয়ে খেজুর, ফলমূল ও দুগ্ধজাত খাবার খেয়ে ইফতার করেন। এটি সামাজিকতা ও সমপ্রদায়ের ঐক্য দৃঢ় করে এবং মুসলিমদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে।

১০. মরক্কো : ‘নাফার’ দ্বারা সেহরির সময় ঘোষণা : মরক্কোতে ‘নাফার’ নামক বিশেষ একদল শিঙাবাজ সেহরির সময় মুসলমানদের জাগিয়ে তোলে। সেহরির জন্য প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে শিঙা বাজানো হয় এবং এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউরোপ ও আমেরিকার রমজান সংস্কৃতি

১১. তুরস্ক : ঐতিহ্যবাহী ড্রাম বাজিয়ে সেহরি ঘোষণা : তুরস্কে রমজান মাসের প্রথম দিকে বিশেষ ড্রাম বাজানো হয়, যা সেহরির সময়সূচী ঘোষণা করে। ড্রামাররা বিশেষ পোশাক পরে এই ড্রাম বাজিয়ে সেহরি সময়ের কথা ঘোষণা করেন এবং এটি এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তুরস্কের আরেকটি বিশেষ ঐতিহ্য হলো, রমজান মাসের প্রথম দিন, ইফতার সময় কামান থেকে গোলা ছোড়া হয়। কামানের শব্দ শোনা মাত্রই ইফতার শুরু করা হয়, যা একটি অত্যন্ত পুরনো এবং সাংস্কৃতিক প্রথা। তুরস্কে এই রীতি সাধারণত ইস্তাম্বুলে পালন করা হয় এবং এটি একটি আধ্যাত্মিক এবং উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে

১২. যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র, বহুজাতিক ইফতার : পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে ইফতার আয়োজনে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। এখানে মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারগুলোতে মুসলিমরা একত্রে ইফতার করে, যেখানে বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী খাবার ভাগাভাগি করে থাকে। এটি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে একত্রিত করে এবং মুসলিম সমাজের ঐক্য প্রদর্শন করে।

বিশ্বব্যাপী রমজান উদযাপনের সময় নানা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যা শুধুমাত্র পার্থক্যই তুলে ধরে না, বরং মুসলিম সমাজের ঐক্য এবং সহানুভূতির প্রতীকও। বিভিন্ন দেশের প্রতিটি সমাজে রমজান ভিন্ন রীতিতে পালিত হলেও মূল উদ্দেশ্য আত্মশুদ্ধি, সহানুভূতি এবং মানবতার কল্যাণ। (আল-জাজিরা, আল-আরাবিয়া, আল-কুদস আল-আরাবি ইত্যাদি)

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

দেশে দেশে রমজান-সংস্কৃতি

আপডেট সময় : ১১:৩০:৫৬ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
রমজান এক গভীর আধ্যাত্মিক মাস, যা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আচার ও রীতি-নীতি পালন করার মাধ্যমে উদযাপিত হয়। আজকের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে রমজান মাস উদযাপনের অনন্য ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপর।

মধ্যপ্রাচ্যের রমজান ঐতিহ্য

১. মিসর : ‘ফানুস’ উত্সব : মিসরের রমজান অত্যন্ত জনপ্রিয়, বিশেষ করে ‘ফানুস’ উৎসবের জন্য। এটি বহু শতাব্দী ধরে রমজানের অন্যতম চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মিসরের মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, দোকান এবং রাস্তাঘাট ফানুস দিয়ে সাজায়, যা রমজানের শুভ্রতা ও আনন্দের প্রতীক। বিশেষ করে মিশরের রাজধানী কায়রোতে রমজান মাসের শুরুর দিকে ঐতিহ্যবাহী রঙিন ফানুসের মেলা বসে।

২. সৌদি আরব : মসজিদভিত্তিক ইফতার ও ঐতিহ্যবাহী খাবার : সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনার পবিত্র মসজিদগুলোতে রমজান মাসে ইফতার একটি বিশেষ সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। হাজার হাজার মুসল্লি একত্রে ইফতার করেন, যা রমজানের সৌন্দর্যকে আরো জাঁকজমকপূর্ণ করে তোলে। সৌদি আরবে রমজান মাসের খাবারের মধ্যে খেজুর, স্যুপ, সাম্বুসা, এবং আরবি কফি অন্যতম। এর মধ্যে সাম্বুসা বিশেষভাবে জনপ্রিয়, যা মূলত মাংস বা সবজি দিয়ে তৈরি একটি স্ন্যাকস।

৩. লেবানন : কামানের শব্দে ইফতার ঘোষণা : লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে রমজান মাসে কামান দাগানো হয়, যা ইফতার এবং সেহরি সময়সূচী ঘোষণা করে। মূলত, এটি মিসরের ঐতিহ্য থেকে শুরু হয়ে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কামানের শব্দের মাধ্যমে রমজান মাসের প্রতিদিনের ইফতার ঘোষণা করা হয় এবং এটি মুসলিমদের জন্য এক আবেগপূর্ণ সময় হয়ে ওঠে।

৪. সংযুক্ত আরব আমিরাত : ‘হক আল লায়লা’ উৎসব : সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশেষভাবে ‘হক আল লায়লা’ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় শাবান মাসের ১৫ তারিখে। এই উৎসবে শিশুদের বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করা হয়। তারা উজ্জ্বল পোশাক পরে প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে মিষ্টি ও বাদাম সংগ্রহ করে। এটি একটি ঐতিহ্যগত উৎসব, যা রমজানের আগমনের প্রতি আনন্দ প্রকাশ করে।

দক্ষিণ এশিয়ার রমজান সংস্কৃতি

৫. বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান: বাহারি ইফতার আয়োজন : বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে রমজানের সময় বিভিন্ন ধরনের খাবার দিয়ে ইফতার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের রাস্তা, মসজিদ এবং বাসাবাড়িতে ইফতার বিতরণ একটি ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, জিলাপি, শরবত, খেজুর, হালিম, সবই এই অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার। ইফতারের মাধ্যমে মুসলিমরা একে অপরের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখে।

৬. পাকিস্তান : সেহরি ডাক : পাকিস্তানে, বিশেষত পেশাওয়ার এবং কাশ্মীর অঞ্চলে সেহরির জন্য ‘সেহরি ডাক’ নামে একটি ঐতিহ্য প্রচলিত রয়েছে। যেখানে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত একদল ড্রাম বাজিয়ে সেহরি খাবারের জন্য মুসলিমদের ডেকে তুলে। এটা শুধু এক রীতিই নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক সেলিব্রেশন হিসেবে পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানানো হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রমজান সংস্কৃতি

৭. ইন্দোনেশিয়া: ‘পাডুসান’ (Padusan) প্রথা : ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে, রমজানের আগে বিশেষভাবে ‘পাডুসান’ নামে একটি ঐতিহ্য রয়েছে। পাডুসান অর্থ গোসল করা। জাভানিজ মুসলিমরা ঝর্ণার পানিতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর ডুবিয়ে রেখে এটি পালন করে। এই ঐতিহ্য অনুযায়ী, স্থানীয় মুসলমানরা নদী, ঝরনা বা সমুদ্রে স্নান করে নিজেদের পবিত্র করেন। এটি শুধুমাত্র শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নয়, আত্মিক পরিচ্ছন্নতা অর্জনের একটি উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

৮. মালয়েশিয়া: ‘পাসার রমাদান’ (Pasar Ramadhan) বাজার : মালয়েশিয়া রমজান মাসে ‘পাসার রমাদান’ নামে বিশেষ বাজার আয়োজন করে। এখানে ইফতারের জন্য বিভিন্ন ধরনের মালয় খাবার, মিষ্টি, রুটি ও ফলমূল পাওয়া যায়। এই বাজারগুলি শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য নয়, বরং একটি সামাজিক জমায়েত হিসেবেও ব্যবহূত হয়, যেখানে মানুষ একে অপরের সাথে মিলিত হয়।

আফ্রিকার রমজান ঐতিহ্য

৯. সেনেগাল: ‘নডগু’ (Ndogou) ইফতার : সেনেগালে, ইফতারের সময় ‘নডগু’ নামে পরিচিত একটি প্রথা রয়েছে, যেখানে সমাজের সবাই একত্রিত হয়ে খেজুর, ফলমূল ও দুগ্ধজাত খাবার খেয়ে ইফতার করেন। এটি সামাজিকতা ও সমপ্রদায়ের ঐক্য দৃঢ় করে এবং মুসলিমদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে।

১০. মরক্কো : ‘নাফার’ দ্বারা সেহরির সময় ঘোষণা : মরক্কোতে ‘নাফার’ নামক বিশেষ একদল শিঙাবাজ সেহরির সময় মুসলমানদের জাগিয়ে তোলে। সেহরির জন্য প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে শিঙা বাজানো হয় এবং এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউরোপ ও আমেরিকার রমজান সংস্কৃতি

১১. তুরস্ক : ঐতিহ্যবাহী ড্রাম বাজিয়ে সেহরি ঘোষণা : তুরস্কে রমজান মাসের প্রথম দিকে বিশেষ ড্রাম বাজানো হয়, যা সেহরির সময়সূচী ঘোষণা করে। ড্রামাররা বিশেষ পোশাক পরে এই ড্রাম বাজিয়ে সেহরি সময়ের কথা ঘোষণা করেন এবং এটি এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তুরস্কের আরেকটি বিশেষ ঐতিহ্য হলো, রমজান মাসের প্রথম দিন, ইফতার সময় কামান থেকে গোলা ছোড়া হয়। কামানের শব্দ শোনা মাত্রই ইফতার শুরু করা হয়, যা একটি অত্যন্ত পুরনো এবং সাংস্কৃতিক প্রথা। তুরস্কে এই রীতি সাধারণত ইস্তাম্বুলে পালন করা হয় এবং এটি একটি আধ্যাত্মিক এবং উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে

১২. যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র, বহুজাতিক ইফতার : পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে ইফতার আয়োজনে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। এখানে মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারগুলোতে মুসলিমরা একত্রে ইফতার করে, যেখানে বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী খাবার ভাগাভাগি করে থাকে। এটি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে একত্রিত করে এবং মুসলিম সমাজের ঐক্য প্রদর্শন করে।

বিশ্বব্যাপী রমজান উদযাপনের সময় নানা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যা শুধুমাত্র পার্থক্যই তুলে ধরে না, বরং মুসলিম সমাজের ঐক্য এবং সহানুভূতির প্রতীকও। বিভিন্ন দেশের প্রতিটি সমাজে রমজান ভিন্ন রীতিতে পালিত হলেও মূল উদ্দেশ্য আত্মশুদ্ধি, সহানুভূতি এবং মানবতার কল্যাণ। (আল-জাজিরা, আল-আরাবিয়া, আল-কুদস আল-আরাবি ইত্যাদি)