বাংলাদেশভিত্তিক আন্তজাতিক উন্নয়ন গবেষণা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সংস্থা ‘ইনোভেশন কনসাল্টিং’ আয়োজিত ‘বাংলাদেশ স্পিকস’ নামের একটি জরিপে উঠে এসেছে রাজনীতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের ভাবনা। এখন নির্বাচন হলে মানুষ কাকে ভোট দেবেন, তা জানতে অনলাইন ও মাঠ পর্যায়ে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, এখন নির্বাচন হলে কাকে ভোট দেবেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন দেশের প্রায় ৩৪ শতাংশ জনগণ।
মাঠপর্যায়ে জরিপে অংশগ্রহণকারী ১১ শতাংশ উত্তরদাতা ছাত্র-সমর্থিত দলকে ভোট দিতে চান।
অন্যদিকে, অনলাইন জরিপের ৩৫ শতাংশ উত্তরদাতা ছাত্র-সমর্থিত দলকে ভোট দেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
অনলাইন জরিপের ১১ শতাংশ নিশ্চিত নন তারা কাকে ভোট দেবেন। তবে দুই ধরনের জরিপেই মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো পিছিয়ে আছে।
আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জনমতে ভোটের হিসাব: অনলাইন বনাম মাঠ জরিপের ফলাফল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাঠপর্যায়ে ৫ হাজার ১১৫ জনের ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, তাদের ৩৪ শতাংশ এখনো নিশ্চিত নন তারা কাকে ভোট দেবেন। তাদের ২১ শতাংশ বিএনপিকে ভোট দিতে চান। জামায়াত ইসলামীকে ভোট দিতে চান ১৪ শতাংশ। এছাড়া তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ ছাত্র-সমর্থিত নতুন দলকে, ৫ শতাংশ আওয়ামী লীগ, ৩ শতাংশ স্বতন্ত্র ও ৩ শতাংশ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে ভোট দেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
অনলাইনে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩ হাজার ৫৮১ জনের ফলাফল যাচাই করে দেখা যায়, ছাত্র-সমর্থিত নতুন দলকে ৩৫ শতাংশ, জামায়াতে ইসলামীকে ২৫ শতাংশ, আওয়ামী লীগকে ১০ শতাংশ, বিএনপিকে ১০ শতাংশ, স্বতন্ত্র ৩ শতাংশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে ১ শতাংশ মানুষ ভোট দেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। তবে অনলাইন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১০ শতাংশ এখনো নিশ্চিত নন তারা কাকে ভোট দেবেন। এছাড়া তাদের কেউ জাতীয় পার্টিকে ভোট দেওয়ার আগ্রহের কথা জানাননি। পাশাপাশি অন্যান্য দলকে ১ শতাংশ ও কাউকেই ভোট না দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ৩ শতাংশ মানুষ।
কৃষক ও শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এগিয়ে রয়েছে মাঠপর্যায়ে জরিপের ফলাফলে। এক্ষেত্রে, শিক্ষার্থী ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের কাছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর জনপ্রিয়তা প্রায় কাছাকাছি। তবে অনলাইন জরিপে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ শিক্ষার্থী, বেকার ও বেসরকারি চাকরিজীবীর কাছে জনপ্রিয়তায় জামায়াত এগিয়ে।
অনলাইন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রত্যাখ্যান করার প্রবণতা স্পষ্ট বলে জানিয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা। জেন-জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ প্রজন্মের মতামতে ভেদাভেদ, নারী ও পুরুষের মধ্যে মতামতের ভিন্নতা এবং অনলাইন মতামতের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের মতামতের পার্থক্য পর্যালোচনা ভবিষ্যৎ রাজনীতির ভিত্তি তৈরিতে সহায়ক হবে।
অনুষ্ঠানে তথ্য উপস্থাপনা ও মূল প্রবন্ধ তুলে ধরে ইনোভিশন কনসাল্টিয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াৎ সরওয়ার বলেন, জেন-জি প্রজন্মের বেশিরভাগই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কখনো অংশ নেয়নি। অথচ তাদের নেতৃত্বেই হয়েছে জুলাই বিপ্লব। ঠিক এই পরিস্থিতিতে, নির্বাচন হলে জনগণের অভিমত কেমন হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের টেকসই রাজনৈতিক সংস্কারের একটা রূপরেখা দিতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
গত ২৯ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে প্রাপ্ত দেশের ৫০টি জেলার ৫ হাজার ১১৫টি নমুনা ও অনলাইন জরিপের ৬৪টি জেলার ৩ হাজার ৫৮১টি নমুনার তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে জরিপ ও অনলাইন জরিপে তথ্যদাতাদের মধ্যে কয়েকটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
মাঠপর্যায়ে জরিপে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে জরিপে নারীদের অংশগ্রহণ জনসংখ্যার অনুপাতে নিশ্চিত করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে জরিপে জেন-এক্স, বুমারস ও বয়সে জ্যেষ্ঠ প্রজন্মের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, অনলাইন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৯২ শতাংশই জেন-জি এবং মিলেনিয়ালস বলে জানা গেছে।