বিবিসি বলছে, শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং নিপীড়কের মতো বা নির্মম উপায়ে বাংলাদেশ শাসন করেন। তার আওয়ামী লীগ সরকারের সদস্যরা নির্মমভাবে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালায়। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা ও জেলে পাঠানোর ব্যাপক অভিযোগ ছিল।
যদিও গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন ব্যাপক গণআন্দোলন ও বিদ্রোহ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। বিক্ষোভকারীদের আহ্বানে ড. ইউনূস নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যদি আমাদের ইচ্ছা মতো দ্রুত সংস্কার করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরে আমরা নির্বাচন করতে পারবো। আর যদি সংস্কারের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।”
গত গ্রীষ্মে বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা সহিংস বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলা থেকে এসেছি। (এমন বিশৃঙ্খলা যেখানে) মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।”
কিন্তু প্রায় সাত মাস পেরিয়ে গেলেও ঢাকার মানুষ বলছেন, আইনশৃঙ্খলা এখনো পুনরুদ্ধার হয়নি এবং পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে না। ড. ইউনূস বলেন, “বেটার (ভালো) একটি আপেক্ষিক শব্দ। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি গত বছরের একই সময়ের সাথে তুলনা করেন তবে এটি (আইনশৃঙ্খলা) ঠিক আছে। এখন যা ঘটছে, তা অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা বা ভিন্ন কিছু নয়।”
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের বর্তমান দুর্দশার জন্য আগের সরকারকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের ঘটনাগুলো হওয়া উচিত— তা আমি সমর্থন করছি না। আমি বলছি যে, আপনাকে বিবেচনা করতে হবে, আমরা কোনো আদর্শ দেশ বা আদর্শ শহর নই যা আমরা হঠাৎ করে তৈরি করেছি। এই অবস্থা হচ্ছে দেশের ধারাবাহিকতা যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি, এমন একটি দেশ যেখানে এসব বহু, বহু বছর ধরে চলছে।”
শেখ হাসিনার নৃশংস শাসনের শিকার মানুষ তার ওপরে ক্ষুব্ধ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমেছে, ছাত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর মারাত্মক দমন-পীড়নের জন্য তার (হাসিনার) বিচারের দাবিতে। বাংলাদেশের একটি আদালত হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, কিন্তু তাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ভারত এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এখন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাসিনা ইউটিউবে ভাষণ দেবেন এমন এমন খবরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হাসিনার প্রয়াত পিতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের সদস্যদের বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর এবং আগুন দেওয়া হয়েছিল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তী সরকারকে সহিংসতার ন্যায্যতা দেওয়ার অভিযোগ করেছে। বাংলাদেশ তাদের জন্য নিরাপদ নয় বলে আওয়ামী লীগের সদস্যদের দাবি সম্পর্কে বিবিসি জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, “দেশে আদালত আছে, আইন আছে, থানা আছে, তারা গিয়ে অভিযোগ করতে পারে, তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারে। আপনারা অভিযোগ করতে কেবল বিবিসি সংবাদদাতার কাছে না গিয়ে অভিযোগ করতে থানায় যান এবং দেখুন আইন তার গতিতে কাজ করছে কিনা।”
ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশি সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত এবং কার্যকরভাবে মার্কিন এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নকৃত প্রায় সব কর্মসূচি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মতো দেশে প্রভাব ফেলবে।
ড. ইউনূস বলেন, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, “এটি ভালোই হয়েছে। কারণ তারা এমন কিছু করছে যা আমরাই করতে চেয়েছিলাম, যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং এর মতো আরও জিনিস, যা আমরা কখনোই ঠিকভাবে (মোকাবিলা) করতে পারিনি।”
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকারি উন্নয়ন সহায়তার তৃতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিভাবে এই ঘাটতি পূরণ করা হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “যখন এটা হবে, আমরা তা পূরণ করব।”