চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ২৬নং পালাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাচীরে আঁকা রয়েছে সহজপাঠ, বর্ণপরিচয়, ইংরেজি বর্ণমালা সয়া হ সামাজিক সচেতনতার নানা চিত্র। স্কুলের দেওয়ালে আঁকা রয়েছে নানা মনীষী ছবি ও মহাপুরুষদের বাণী।
বিদ্যালয়ে ঢোকার আগেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুরো সহজ পাঠ ও বর্ণ পরিচয়। সাধারণ জ্ঞানের বইয়ের আদলে সাজিয়ে তোলা হয়েছে স্কুলের সমস্ত দেওয়াল। যাতে ছাত্র ছাত্রীরা বইয়ে পড়ার পরেও দেওয়ালে সেইসব ছবি দেখে মনে রাখতে পারে। শুধু তাই নয়, ছয়টি ঋতুর নাম, মাসের নাম এইসব কিছুই সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিদ্যালয়ে। দেওয়াল দেখেই শিখছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ১৯৩৫ সালে পালাখাল গ্রামের অধিবাসী সুরেন্দ্র কুমার চৌধুরী এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামের সাথে ভালো ফলাফল অর্জন করে আসছে। ২০১০ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নজরুল ইসলাম যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে পড়াশোনা ও বিদ্যালয়ের চিত্র পাল্টে গেছে। তার নৈতিকতা ও সাহসিকতা এবং সৎ-আদর্শবানের কারনে প্রতিবছর এ বিদ্যালয়ের ভালো ফলাফল কুড়িয়েছেন। বিদ্যালয়ে দুই শিফট চালু থাকলে বর্তমানে এক শিফট চালু করাতে পড়াশুনার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে ১০ জন শিক্ষক এবং ৪০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। শিক্ষার্থী সংকুলান না হওয়ায় শ্রেনী কক্ষ ও শিক্ষক সংকট এবং শ্রেনীর শাখার প্রয়োজন রয়েছে। সকল সংকট সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, সরকারি বিদ্যালয়ে অনেক ছেলে-মেয়েদের পড়াতে চাননা। অনেকের অভিযোগ বিদ্যালয়ে ঠিক মতো পড়াশোনা হয় না। এর ফলেই রমরমা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। বর্তমানে এ স্কুলে চিত্রাংকনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা দৃশ্য ও সহজপাঠ। যার কারনে আমাদের ছেলে মেয়েরা এখানে অনেক কিছুই শিখতে পারে। এমন উদ্যোগ গ্রহন করায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, এ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালে বিভিন্ন পশু পাখির রং-বেরঙের ছবি আকাঁ হয়েছে। সেখানে যেমন মনীষীদের ছবি রয়েছে তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের ছবি। রয়েছে ফলমূল, ব্যায়ামের ছবি সহ মনীষী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বাণী সমূহ ছবি। শিশুরা যা দেখে তাই শিখে, এই ধারণা থেকেই বিদ্যালয়টিকে এরকমভাবে সাজানো হয়েছে বলে জানান তারা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের দেওয়াল ও শ্রেনি কক্ষের দেয়ালে নানা চিত্র সাজানো হয়েছে। যা আমরা দেখে দেখে পড়তে পাড়ি। আমাদের কাছে এমন চিত্রগুলো ভালো লাগে। তাছাড়া শিক্ষকরা আমাদের সঠিক পাঠদান করাচ্ছেন। এজন্য শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, স্লিপ ফান্ড বরাদ্দের মাধ্যমে শিক্ষক-কমিটির সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি সজ্জিত করা হয়। এতে করে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে এবং শতভাগ উপস্থিতি,অভিভাবকের আগ্রহ প্রকাশ ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী হচ্ছে। পাশাপাশি বইয়ের মধ্যে যা রয়েছে, সে গুলো দেখার আগেই যদি সেই সেই ছবি, ছড়া, অক্ষর, নম্বর গুলি দেওয়ালে রঙিন ভাবে দেখতে পায়, তা হলে তা শিশুমনে দাগ কাটে। তাই ছাত্রছাত্রীদের কাছে স্কুলকে আকর্ষণীয় করতেই স্কুলের দেওয়ালে সহজপাঠ, বর্ণপরিচয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সুবাস চন্দ্র সরকার জানান, এটা হলো ডির্পামেন্টের নির্দেশনা যে, প্রতিটি বিদ্যালয়কে সুসজ্জিত করতে হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের বাইরের পরিবেশ থেকে মনে করে যেন এটা আমার আকর্ষনীয় স্কুল, দেখতে ভালো লাগে। আমাদের দেওয়াল গুলো যে চিত্রাংকন করা আছে, পাঠ্যবইয়ের সাথে তা সম্পর্ক রয়েছে। বিদ্যালয়কে আকর্ষনীয়,সুসজ্জিত ও সু-পরিবেশ করার জন্য এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।