নিউজ ডেস্ক:
বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের দুই সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকরা। একই সঙ্গে এই ঘটনা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর করা ‘বেফাঁস’ মন্তব্য প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়। শনিবার সকালে শাহবাগে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
গত বৃহস্পতিবার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ডাকা হরতালের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে শাহবাগে পুলিশের মারধরের শিকার হয় এটিএন নিউজের রিপোর্টার কাজী এহসান ও ক্যামরাপার্সন আব্দুল আলীম। এই ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবিতে ‘মাঠ পর্যায়ের সকল সাংবাদিক’ এর উদ্যোগে মানববন্ধনটির আয়োজন করা হয়।
এতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে তিন শতাধিক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করে। এসময় সংবাদকর্মীরা ক্যামেরা রাস্তায় রেখে কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান। অনেকে ‘মুক্ত স্বদেশ, বন্দী সাংবাদিকতা’, ‘সাংবাদিকের স্বাধীনতা চাই’, ‘কলম আর ক্যামেরা মাথা নত করে না’স্লোগানে লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। মানববন্ধন থেকে হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করার দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারায় আবারও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে এই দুইজন সংবাদকর্মীকে থানায় নিয়ে নির্যাতন করেছে। এর আগেও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করি সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের বিচার হয় না। যার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ একটা খারাপ সূচকে অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, আমরা দুঃখজনকভাবে প্রত্যক্ষ করেছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটা মন্তব্য। তিনি (মন্ত্রী) বলেছেন, পুলিশের সাথে ধাক্কাধাক্কির কারণে দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। তাকে অনুরোধ করবো তার বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য। নইলে এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও তার মন্তব্যের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের মতো ‘বেফাঁস’ মন্তব্যকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ মুন্নী সাহা বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এই সংস্কৃতি যদি প্রশাসন থেকেই শুরু হয় তাহলে সাংবাদিকরা কীভাবে কাজ করবে। এটা আমাদের জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়াই না।
তিনি বলেন, আমরা জানি পুলিশের সঙ্গেই হরতাল-মিছিল-মিটিংয়ে কাজ করতে হবে। এই ধরণের ট্রেন্ড যদি চালু হয় যে সময়ে অসময়ে পুলিশ সাংবাদিকদের পিটাবে আর পদোন্নতি নিবে। এই ধরণের পদোন্নতি নেওয়ার এ ট্রেন্ডটি কি বন্ধ করা যায়? নাকি সাময়িক বরখাস্তের নামে জামাই-আদরে থাকবে। তাহলে এমন একটি সুন্দর জায়গা বলে দিন, আজকে আমরা যেমন মৌন মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি তেমনি আমরা মাইক্রোফোন ছাড়া নিরস্ত্র দাড়াই। আর আপনারা আমাদের পিটিয়ে পদোন্নতি নিন।
শাহেদ চৌধুরী বলেন, পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে জনবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন তাতে কতটা সাড়া দিয়েছে তার উজ্জ্বল প্রমাণ হলো সাংবাদিকদের ওপরে রাজপথে কোন অন্যায় ছাড়াই বেধড়ক পিটুনির ঘটনা। এটা যদি হয় জনবান্ধব হওয়ার নমুনা তাহলে আমাদের দুঃখ প্রকাশ ছাড়া কিছু নেই। এ ঘটনা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর করা মন্তব্যকে পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত রসিকতা বলে মন্তব্য করেন।