পঞ্চগড়ে মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র বালাৎকারের অভিযোগ, রাতের আঁধারে মিমাংসা

পঞ্চগড়ে মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক সেই মাদ্রাসা পড়ুয়া এক ছাত্রকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বালাৎকারের অভিযোগ উঠেছে। পরে সেই ঘটনা ধামচাপা দিতে রাতের আঁধারে মিমাংসার চেষ্টা করেন স্থানীয় মাতব্বররা এমন একটি ভিডিও শনিবার (২১ জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নে ঘটনাটি ঘটেছে

অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মোঃ মাহাবুব হুসাইন অরফে মাহে আলম, তিনি বগদুলঝুলা হাজীপাড়া আমিরিয়া একরামিয়া নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং এর মুহতামিম।

ভুক্তভোগী ছাত্র ও তার অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, বড়শশী ইউনিয়নের নাওতরি সুইয়ের পাড় গ্রামের ৮ বছর বয়সী সেই শিশুটি পার্শ্ববর্তী বগদুলঝুলা হাজীপাড়া আমিরিয়া একরামিয়া নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং এ কায়দা শ্রেণীতে পড়ার সুবাদে অন্যান্য শিশুদের সাথে সেখানেই থাকতো। একই ঘরে রাতে শিশুরা মেঝেতে আর শিক্ষক ঘরের একদিকে কালো কাপড়ের পর্দা বেষ্টিত খাটে ঘুমাতেন। গত কোরবানী ঈদের আগে ২ জুন রাতে অন্যান্য দিনের মতো শিশুরা যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, তখন অভিযুক্ত মাহেআলম হুজুর পাশ্ববর্তী লিচুর গাছ থেকে ছাত্রদের লিচু পেড়ে আনতে নির্দেশ দেন। এরপরে সবাই মিলে লিচু খাওয়া-দাওয়া শেষে নির্যাতনের শিকার শিশুটি কালো পর্দার ভেতর থেকে ময়লা ফেলার জন্য ঝুড়ি আনতে গেলে সেখানেই সে শিক্ষক মাহেআলমের বিকৃত যৌন লালসার শিকার হয়। ভয়ভীতি দেখিয়ে বালাৎকার করা হয় শিশুটিকে। বালাৎকারের পর প্রচন্ড যন্ত্রনায় যখন কাতরাচ্ছিল শিশুটি কে তখন ব্যাথানাশক ওষুধ খাইয়ে কাউকে ঘটনা বললে মেরে ফেলার ভয় দেখান সেই হুজুর।

এরপরের দিন ঈদ উপলক্ষে মাদ্রাসা ছেড়ে বাড়িতে যায় শিশুটি। ছুটি কাটানোর পুরোটা সময় ভয়ে সে কাউকে কিছু বলতে না পারলেও ছুটি শেষে মাদ্রাসায় ফিরে যেতে যখন চাঁপ দেওয়া হয় পরিবার থেকে তখন ভয়ে কাঁদতে থাকে সে, আপত্তি জানায় ফিরে যেতে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিশুটির বাবা যখন শিশুটিকে মারতে উদ্যত হয় তখন কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি বাধ্য হয় মাদ্রাসায় ফিরে যাওয়া নিয়ে তার ভয়ের আসল কারন বাবা-মার সামনে তুলে ধরতে। এরপরে গণমাধ্যমের কাছে ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে বারবার কাঁদছিলো শিশুটি। শিশুটির সাথে সাথে এসময় চোখ থেকে অশ্রু ঝড়তে দেখা যায় শিশুটির বাবা মো: সোনাহার আলীর চোখেও। এসময় চোখেমুখে চরম ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, ইসলাম ও দ্বিনের আলোয় আলোকিত করতে শিশু বাচ্চাকে দিয়েছিলাম আমানত হিসেবে মাদ্রাসার হুজুরের কাছে। তিনি আমার নাবালক শিশুটির সাথে এমন অমানুষিক কাজ কি করে করতে পারলো। আর যেন কোন শিশুর কপালে এমন দুর্ভোগ না ঘটে, আমি তাই দোষী শিক্ষক মাহে আলমের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি চাই। একই সাথে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আর যেন কোন বাবাব-মায়ের সন্তান এ ধরনের কর্মকান্ড করতে সাহস না পায়, সেজন্য দোষী মাদ্রাসা শিক্ষকের উপযুক্ত বিচার চান এলাকাসীরাও।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, আমরা সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। কিন্তু এইরকম অসৎ চরিত্রহীন মানুষের জন্য অভিভাবকরা ধর্মীয় শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আরেক অভিভাবক শহরআলী জানান এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওর মাধ্যমে জানা যায়, ঘটনা জানাজানি হওয়ার আগেই সেটি ধামাচাপা দিতে গভীর রাতে মিমাংসার চেষ্টা চালান স্থানীয় মাতব্বররা। এমনকি বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারটিকে বাড়াবাড়ি না করার বিষয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের পক্ষ থেকে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক মাহবুব হুসাইন ওরফে মাহে আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে নির্দোষ ও চক্রান্তের শিকার বলে উল্ল্যেখ করেন।

এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম এর কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি প্রথমে বিষযটি জানেন না, এবং পরে কিভাবে মিমাংসা করা যায় তার উপায় খোঁজেন খোঁদ গণমাধ্যম কর্মীদের কাছেই।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পঞ্চগড়ে মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র বালাৎকারের অভিযোগ, রাতের আঁধারে মিমাংসা

আপডেট সময় : ০৭:৪০:১৬ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

পঞ্চগড়ে মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক সেই মাদ্রাসা পড়ুয়া এক ছাত্রকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বালাৎকারের অভিযোগ উঠেছে। পরে সেই ঘটনা ধামচাপা দিতে রাতের আঁধারে মিমাংসার চেষ্টা করেন স্থানীয় মাতব্বররা এমন একটি ভিডিও শনিবার (২১ জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নে ঘটনাটি ঘটেছে

অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মোঃ মাহাবুব হুসাইন অরফে মাহে আলম, তিনি বগদুলঝুলা হাজীপাড়া আমিরিয়া একরামিয়া নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং এর মুহতামিম।

ভুক্তভোগী ছাত্র ও তার অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, বড়শশী ইউনিয়নের নাওতরি সুইয়ের পাড় গ্রামের ৮ বছর বয়সী সেই শিশুটি পার্শ্ববর্তী বগদুলঝুলা হাজীপাড়া আমিরিয়া একরামিয়া নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং এ কায়দা শ্রেণীতে পড়ার সুবাদে অন্যান্য শিশুদের সাথে সেখানেই থাকতো। একই ঘরে রাতে শিশুরা মেঝেতে আর শিক্ষক ঘরের একদিকে কালো কাপড়ের পর্দা বেষ্টিত খাটে ঘুমাতেন। গত কোরবানী ঈদের আগে ২ জুন রাতে অন্যান্য দিনের মতো শিশুরা যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, তখন অভিযুক্ত মাহেআলম হুজুর পাশ্ববর্তী লিচুর গাছ থেকে ছাত্রদের লিচু পেড়ে আনতে নির্দেশ দেন। এরপরে সবাই মিলে লিচু খাওয়া-দাওয়া শেষে নির্যাতনের শিকার শিশুটি কালো পর্দার ভেতর থেকে ময়লা ফেলার জন্য ঝুড়ি আনতে গেলে সেখানেই সে শিক্ষক মাহেআলমের বিকৃত যৌন লালসার শিকার হয়। ভয়ভীতি দেখিয়ে বালাৎকার করা হয় শিশুটিকে। বালাৎকারের পর প্রচন্ড যন্ত্রনায় যখন কাতরাচ্ছিল শিশুটি কে তখন ব্যাথানাশক ওষুধ খাইয়ে কাউকে ঘটনা বললে মেরে ফেলার ভয় দেখান সেই হুজুর।

এরপরের দিন ঈদ উপলক্ষে মাদ্রাসা ছেড়ে বাড়িতে যায় শিশুটি। ছুটি কাটানোর পুরোটা সময় ভয়ে সে কাউকে কিছু বলতে না পারলেও ছুটি শেষে মাদ্রাসায় ফিরে যেতে যখন চাঁপ দেওয়া হয় পরিবার থেকে তখন ভয়ে কাঁদতে থাকে সে, আপত্তি জানায় ফিরে যেতে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিশুটির বাবা যখন শিশুটিকে মারতে উদ্যত হয় তখন কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি বাধ্য হয় মাদ্রাসায় ফিরে যাওয়া নিয়ে তার ভয়ের আসল কারন বাবা-মার সামনে তুলে ধরতে। এরপরে গণমাধ্যমের কাছে ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে বারবার কাঁদছিলো শিশুটি। শিশুটির সাথে সাথে এসময় চোখ থেকে অশ্রু ঝড়তে দেখা যায় শিশুটির বাবা মো: সোনাহার আলীর চোখেও। এসময় চোখেমুখে চরম ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, ইসলাম ও দ্বিনের আলোয় আলোকিত করতে শিশু বাচ্চাকে দিয়েছিলাম আমানত হিসেবে মাদ্রাসার হুজুরের কাছে। তিনি আমার নাবালক শিশুটির সাথে এমন অমানুষিক কাজ কি করে করতে পারলো। আর যেন কোন শিশুর কপালে এমন দুর্ভোগ না ঘটে, আমি তাই দোষী শিক্ষক মাহে আলমের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি চাই। একই সাথে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আর যেন কোন বাবাব-মায়ের সন্তান এ ধরনের কর্মকান্ড করতে সাহস না পায়, সেজন্য দোষী মাদ্রাসা শিক্ষকের উপযুক্ত বিচার চান এলাকাসীরাও।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, আমরা সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। কিন্তু এইরকম অসৎ চরিত্রহীন মানুষের জন্য অভিভাবকরা ধর্মীয় শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আরেক অভিভাবক শহরআলী জানান এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওর মাধ্যমে জানা যায়, ঘটনা জানাজানি হওয়ার আগেই সেটি ধামাচাপা দিতে গভীর রাতে মিমাংসার চেষ্টা চালান স্থানীয় মাতব্বররা। এমনকি বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারটিকে বাড়াবাড়ি না করার বিষয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের পক্ষ থেকে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক মাহবুব হুসাইন ওরফে মাহে আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে নির্দোষ ও চক্রান্তের শিকার বলে উল্ল্যেখ করেন।

এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম এর কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি প্রথমে বিষযটি জানেন না, এবং পরে কিভাবে মিমাংসা করা যায় তার উপায় খোঁজেন খোঁদ গণমাধ্যম কর্মীদের কাছেই।