শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে অসুস্থ এক বন্যহাতিকে চিকিৎসা দিয়েছে বন বিভাগ। বৃহস্পতিবার শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দাওধারা কাটাবাড়ি পাহাড়ে নির্মাণাধীন নতুন পর্যটন এলাকার পাশে পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত ওই হাতিটি পড়ে ছিল।
মাদি বন্যহাতিটির আনুমানিক বয়স ১০ থেকে ১২ বছর। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ি এলাকায় প্রায় শতাধিক বন্যহাতি কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে আনাগোনা করছে। এসব বন্যহাতি খাদ্যের সন্ধানে কখনো ধানখেতে কখনও বা লোকালয়ে চলে আসছে। ফসল ও বসতবাড়ি রক্ষা করতে গ্রামবাসী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আবার কেউ কেউ ধানখেতে জেনারেটর বা বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ফাঁদ পেতে ক্ষুধার্ত হাতিগুলোকে নিভৃত করতে চেষ্টা করে।
এদিকে, বন্যহাতি আক্রান্ত এলাকায় বাইরে থেকে দলে দলে লোকজন তামাশা দেখতে আসে। তারা স্থানীয়দের সাথে হাতি তাড়াতে যোগ দেয়। তাদের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে বন্যহাতিকে পাথর ছুড়ে মারে কিংবা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। উপজেলার দাওধারা কাটাবাড়ি পাহাড়ে নির্মাণাধীন নতুন পর্যটন এলাকার পাশে এমনই এক আঘাতপ্রাপ্ত বন্যহাতিকে দেখতে পায় স্থানীয় অধিবাসীরা। বিষয়টি তারা বন বিভাগের লোকজনকে জানায়। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ও মেডিকেল টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত ওই বন্যহাতিকে চিকিৎসা দেয়।
মেডিকেল টিমের প্রধান চিকিৎসক গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ৩/৪ মাস আগে বল্লম জাতীয় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ওই হাতিকে আঘাত করা হয়েছিল। ৩/৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ওই আঘাতের গভীরতা প্রায় ৬ ইঞ্চির মতো। আঘাতের কারণে হাতিটি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার দেহের মেজর টিস্যু ড্যামেজ হয়ে যায়। আমরা পাহাড়ে এসে ওই হাতির আঘাতপ্রাপ্ত স্থান ড্রেসিং করে তার দেহে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে বনে ছেড়ে দিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুতই হাতিটি সুস্থ হয়ে উঠবে।’
হাতিটির সুশ্রুষার সময় উপস্থিত ছিলেন নালিতাবাড়ী প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সাকিব হোসেন সাগর, গাজীপুর সাফারি পার্কের ল্যাব টেকনিশিয়ান আতিকুল ইসলাম ভুইয়া, সহকারী টেকনিশিয়ান মোস্তফা কামাল, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. শাহিন কবির, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার, ওয়াইল্ড লাইফ রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল আমীন, মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী, সমশ্চুড়া বনবিট কর্মকর্তা কাউছার হোসেনসহ অন্যান্য বন বিভাগের কর্মকর্তারা।