ষড়ঝতুর বাংলাদেশে এখন বইছে গ্রীষ্মকাল। আর এ গ্রীষ্মের খর প্রকৃতিতে ফুল-ফলের বিপুল সমারোহ। অপরূপ মহিমাভরা পরিবেশ এখন ক্যাম্পাসে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস এখন সেজেছে মনমাতানো অনেক ফুলে। তেমনি এক জারুল ফুল। পাপড়ির নমনীয় কোমলতা, দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা নিয়ে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে প্রকৃতিকে । যার সৈন্দর্য উপভোগ করেছে সবাই। এমনই মোহনিয় জারুলের মায়ায় ছরিয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিদ্যাপীঠ।
জারুলকে বাংলার চেরি বলা হয়। কী অপূর্ব হয়ে ফুটে। চোখ ভরে যায় তার রূপে। চলার পথে পথিক ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাস্তায় দাড়িয়ে উপভোগ করছেন বেগুনি রঙের আভা। বেগুনি রঙের আগুন কি হওয়া উচিত। জারুল যেন বেগুনি আগুন। এক পাশে জারুল আরেক পাশে কৃষ্ণচূড়া, একটু না হয় সোনালু। আহ্ কী অপূর্ব তার শোভা ও আকর্ষণ যা চোখ ধাঁধিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে শিক্ষার্থী সহ সবার ।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মমতাজ উদ্দিন ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু অ্যাকাডেমিক ভবন, পশ্চিমপাড়া এলাকায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, পূর্বপাড়া মসজিদের সামনের রাস্তার ধারে, বধ্যভূমি এলাকার পুকুর পাড়ে এবং চারুকলা চত্বরসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় রঙ ছড়াচ্ছে চোখ জুড়ানো জারুলফুল।
প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখতে জারুল ফুলের কোনো জুড়ি নেই। জারুল সাধারণত রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় এমনিতেই জন্মায়। পাপড়ির নমনীয় কোমলতায় দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা নিয়ে প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে জারুল ফুল। বাকল মসৃণ ও রং ধূসর বা পিতাভ ধূসর। ফুল বেগুনি। কাঠ শক্ত, মসৃণ ও টেকসই। পানির নিচেও ব্যবহার করা যায়। গাছের উচ্চতা ৮০ থেকে ১০০ ফুট বা তদূর্ধ্ব। উদ্ভিদবিজ্ঞান অনুযায়ী জারুল লিথ্রাসী গোত্রের উদ্ভিদ। এর অর্থ সুন্দর-শোভন। ইংরেজি নাম কুইন ফ্লওয়ার। এর বৈজ্ঞানিক নাম লিরগার্সট্রোমিয়া স্পোসিওসা।
জারুল ফুলের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, এ মৌসুমে রাবির নৈসর্গিক অঙ্গনে ঝাড়লণ্ঠনের মতো পুষ্পগুচ্ছ-রূপের পসরা সাজিয়ে বসেছে এ জারুল ফুল। জারুল গাছে বেগুনি রঙের যেন ফুলের বন্যা। লালচে-বেগুনি রঙের জারুল ফুলের দীর্ঘ মঞ্জরি তোমাদের মোহিত করেছে আমাকে। গ্রীষ্মের শুরুতে জারুলের উজ্জ্বল প্রস্ফুটনে চারিদিকে উচ্ছলতার বিকিরণ মুগ্ধ করে না এমন সৌন্দর্য-পিপাসু দুষ্পাপ্য। এ যেন গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে এক টুকরো রঙিন হিমেল হাওয়া।
সৈন্দর্য-পিপাসু বাংলা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম বলেন, গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে এখন কৃষ্ণচূড়া, সোনালুসহ স্থানীয় জাতের অনেক ফুলই ফুটছে। এসবের মধ্যে আলাদা করে নজর কাড়ছে জারুল ফুল। একটা সময় গ্রাম-গঞ্জে, নদীপাড়ে, হাওরপাড়ে, হাওরসংলগ্ন গ্রামে অনেক জারুল গাছ দেখা যেত। এখন জারুল গাছের আর সেই প্রাচুর্য নেই তবে সে তুলনায় রাবিতে এর পরিমাণ বেশ ভালো।