নিউজ ডেস্ক:
অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকের অবসর নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেটে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তানের কোনো কোনো সাবেক তারকা ক্রিকেটার শনিবার মিসবাহ-উল হককে অবসর নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে আবার কেউ কেউ এই মুহূর্তে মিসবাহর বিকল্প দেখছেন না।
অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার জন্য তার দুর্বল ব্যাটিং ও অনুজ্জ্বল অধিনায়কত্বকে দায়ী করে মিসবাহকে অবসর নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কেউ কেউ।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশী (৪২ বছর) বয়সী ক্রিকেটার মিসবাহর নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে ২২০ রানে পরাজিত হয় পাকিস্তান। পুরো সিরিজে ৭৬-এর মধ্যে শেষ ইনিংসে তিনি করেন ৩৮ রান।
তিন ম্যাচ সিরিজে ১৯৯৯ সালের পর এটি ছিল পাকিস্তানের একনাগারে চতুর্থ হোয়াইটওয়াশ এবং একনাগারে দ্বাদশ পরাজয়।
গত সপ্তাহে দ্বিতীয় ম্যাচে পরাজিত হওয়ার পর মিসবাহ অবসর নেবে না বলে কেউ কেউ জানিয়ে ছিলেন। তবে তৃতীয় ম্যাচে পরাজয়ের পর মিসবাহ জানিয়েছেন- নিজের ভবিষ্যৎ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তিনি কিছুটা সময় নেবেন।
ইংল্যান্ড সফরে ২০১০ সালে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। সেই টালমাটাল অবস্থায় পাকিস্তান দলের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন মিসবাহ। এরপর ৫৩ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ২৪টিতে দলকে জয় এনে দেন মিসবাহ। বাকি ১৮টিতে পরাজিত ও ১১ টেস্ট ড্র করেন।
নিরাপত্তা শংকায় নিজ মাঠে কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে না পারলেও তার নেতৃত্বেই গতবছর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য টেস্ট র্যাকিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করে পাকিস্তান।
তবে সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা বলেছেন, মিসবাহর সময় শেষ। বার্তা সংস্থা এএফপিকে রাজা বলেন, ‘আমি মনে করছি মিসবাহর সময় শেষ। প্রত্যেক ক্রীড়াবিদেরই এমন সময়ের মধ্যদিয়ে যেতে হয় এবং অধিনায়ক মিসবাহ অনেক দিয়েছে। সুতরাং এখন সরে যাওয়ার পালা। ’
‘আমি মনে করি, একজন অধিনায়ক মাত্র পাঁচ বছর তার সেরাটা দিতে পারেন, যে সময়টা তিনি সর্বোচ্চ দিতে পারেন এবং এরপর খারাপ সময় শুরু হয়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সময়ের পর প্রতিপক্ষ তার কৌশল সম্পর্কে জেনে যায় এবং মিসবাহ সে উজ্জ্বল সময়টা পার করে এসেছে। পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক হওয়ার পথে সে তার সেরা ইনিংসগুলো খেলে ফেলেছে। ’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া সিরিজে মিসবাহর কৌশলের মান খুবই খারাপ ছিল। পাশাপাশি তার ব্যাটিং, ফিল্ডিং সাজানো এবং অধিনায়ক হিসেবেও তিনি উদ্দীপকের ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলেও উল্লেখ করেন রাজা।
পাকিস্তানের ট্রাম্প কার্ড লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ সিরিজে মোট ৮ উইকেট শিকার করতে সক্ষম হয়েছেন। এ জন্য তিন ম্যাচের সিরিজে সর্বোচ্চ ৬৭২ রান খরচ করেছেন এ লেগি।
রাজার সঙ্গে সুর মেলান সাবেক পেসার ওয়াসিম আকরামও। এএফপিকে আকরাম বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে এটি অবসর নয়। তবে আমি তার জায়গায় থাকলে অনেক কিছু অর্জন হয়ে গেছে বিবেচনায় আমি নিজেই সরে দাঁড়াতাম। ’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলয়া সফরের প্রথম দুই ম্যাচে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুললেও আমরা ৩-০ ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পর আমাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। একটা পরাজয় এমনভাবেই দৃশ্যপট পাল্টে দেয়। ’
তবে রাজা ও ওয়াসিমের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন সাবেক অধিনায়ক ও কোচ ‘বড়ে মিয়া’ জাভেদ মিয়াদাঁদ। তার মতে এই মুহূর্তে পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিতে মিসবাহর কোনো বিকল্প নেই। মিসবাহর বিকল্প না থাকার জন্য তিনি দেশের ঘরোয়া অবকাঠামোকে দায়ী করেন এবং এ কারণেই তার এখুনি অবসর নেয়া ঠিক হবে না।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে মিয়াদাঁদ বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে- আমাদের হাতে মিসবাহর বিকল্প কেউ নেই। এ থেকেই বুঝা যায়, আমাদের ক্রিকেট অবকাঠামো কত দুর্বল। পৃথিবীর সকল দেশেই একটি পদ্ধতি আছে এবং তার মধ্যদিয়েই খেলোয়াড় আসে-যায়। তবে দুর্ভাগ্য আমরা এমন কোন পদ্ধতি গড়ে তুরতে পারিনি। ’
তিনি প্রশ্নের সুরে বলেন, ‘আমরা এখন মিসবাহকে অবসর নিতে বলছি? তার কোনো বিকল্পের জন্য আমরা কি প্রস্তুত? দুঃখজনক হলেও উত্তর- ‘না’ এবং অবসর নেবে কি-না তা সম্পূর্ণটাই মিসবার ব্যাপার। ’
মিয়াদাঁদের বিশ্বাস পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো কোনো বিকল্প না রেখেই মিসবাহকে সরে দাঁড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এটাই পাকিস্তান ক্রিকেটের দুর্ভাগ্যজনক অংশ। টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো বিকল্প কেউ নেই- মিসবাহ সেটা ভালো করেই জানে এবং এ কারণেই সে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।