শিরোনাম :
Logo ফ্রিল্যান্সিং করে সফল কাওসার তালুকদার Logo জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কোনো শক্তি দাঁড়ায় তবে অবশ্যই তাদের সাথে আমাদের ঐক্য সম্ভব নয়: নাহিদ ইসলাম Logo যুবদের জনসম্পদে রূপান্তরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টা Logo গোপন ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ইবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল Logo জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ইবিতে মাসব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি Logo পলাশবাড়ীতে রাতের আধারে বিদ্যালয়ের ছাদ ঢালাই! দেখার কেউ নেই Logo শহীদ জিয়া ও তারেক রহমানকে অবমাননার ঘটনায় ইবিতে উত্তাল বিক্ষোভ Logo কচুয়ার তেগুরিয়া শিশু বিদ্যা নিকেতনে শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ ও আলোচনা সভা Logo বরগুনা জেলা নির্বাচন অফিস কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ড Logo সিরাজদিখানে ঢাবির নবীন শিক্ষার্থীদের ঝিকুটের সংবর্ধনা ২৫ জুলাই

সুন্দরবনে কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, খরচ কত !

  • আপডেট সময় : ০৩:২৮:৫০ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৭
  • ৭৮২ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক : সুন্দরবন এক প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর নাম। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকায় এটি পৃথিবীর বৃহত্তম লবণাক্ত বনাঞ্চল। ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারজুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে জায়গাটি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনের গহীনে যেতে হলে নৌ-পথেই পাড়ি দিতে হয়। শীতকাল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অনেকেই ভ্রমণ করতে চাইলেও প্রয়োজনীয় তথ্য জানেন না। রাইজিংবিডির পাঠকদের চাহিদার কথা ভেবে সুন্দরবনের খুঁটিনাটি তুলে ধরা হলো।

সুন্দরবনে কী দেখবেন

জামতলা সৈকত : জামতলার আকর্ষণীয় জায়গা হলো পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। টাওয়ার থেকেই বিস্তীর্ণ ছনক্ষেতে হাজার হাজার হরিণের ছোটাছুটি, ভাগ্য ভালো হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পেয়ে যেতে পারেন। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কচিখালী সমুদ্র সৈকত হয়ে বন বিভাগের কচিখালী স্টেশন পর্যন্ত হাঁটা পথ। পথের পাশে ঘন অরণ্যে বাঘ, হরিণ, শূকর, বিষধর সাপ ইত্যাদির দেখা মেলে। সুতরাং সাবধান হতেই হবে। আর এ কারণে গা ছমছম পরিবেশে দুঃসাহসী পর্যটকদের জন্য এই স্থানের যেন বিকল্প নেই। সত্যিই মনোমুগ্ধকর!

মান্দারবাড়িয়া সৈকত : মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত সুন্দরবন ও উত্তাল বঙ্গোপসাগরের যেন এক রূপসী কন্যা, যা এখনও কিছুটা অনাবিষ্কৃত এবং অস্পর্শিত। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর থেকে মান্দারবাড়িয়া ৭৫-৮০ কিলোমিটার দূরে। সাতক্ষীরা থেকে বুড়িগোয়ালিনীর দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর পর্যন্ত গাড়িতে যাওয়া যায়, তারপর ৭৫-৮০ কিলোমিটার যেতে হবে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা স্পীড বোটে।

হীরন পয়েন্ট : হীরন পয়েন্টে গিয়ে কাঠের তৈরি ওয়াকওয়ে ধরে বনের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে বানর, হরিণ, গুইসাপ অথবা কুমিরের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দেখা যাবে। হীরণ পয়েন্ট ছাড়াও টাইগার পয়েন্ট, বুড়িগোয়ালিনী, হারবাড়িয়া প্রভৃতি এলাকায় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখাও মিলে যেতে পারে।

দুবলার চর :

দুবলার চর সুন্দরবনের অন্তর্গত একটি ছোট্ট চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী; সেসব নদী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। দুবলার চর একটু ভেতরে অবস্থিত বিধায় কোনো দশনার্থী সহজে এই চরে প্রবেশ করতে পারে না।

কটকা বিচ : কটকাতে ৪০ ফুট উচ্চ একটি টাওয়ার আছে যেখান থেকে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে সেখানে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হতে ফেরার সময় হেঁটে বিচের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। কটকা থেকে কাচিখালী পর্যন্ত প্রচুর ঘাস জন্মে। যে কারণে অনেক জীবজন্তুর আনাগোনা রয়েছে। অনেকে জায়গাটিকে ‘বাঘের জায়গা’ও বলে।

কোথায় থাকবেন
সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণ পয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভাড়া নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ ৩ হাজার টাকা, ৪ কক্ষ ১২ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষ ৩ হাজার টাকা, ৪ কক্ষ ১০ হাজার টাকা। কটকা প্রতি কক্ষ ২ হাজার টাকা, ২ কক্ষ ৪ হাজার টাকা। বিদেশিদের কাছে ভাড়া কিন্তু প্রায় দ্বিগুণ। সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে একক, পরিবার ও গ্রুপ নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে। মংলায় আছে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, পশুর বন্দরে সাধারণ হোটেল আছে পর্যটকদের থাকার জন্য। খুলনা মহানগরে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন্, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলিনিয়াম মানসম্পন্ন।

ঢাকা থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন এবং লঞ্চে সরাসরি খুলনা যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এসি এবং ননএসি দুই ধরনের বাস চলাচল করে। ঢাকা থেকে সোহাগ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ এবং ঈগল পরিবহন নিয়মিত চলাচল করে খুলনার উদ্দেশ্য। ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গাড়িগুলো খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুলনা পৌঁছাতে সময় লাগে ৭ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ নিয়মিত যাতায়াত করছে খুলনার উদ্দেশ্যে।

খুলনার নন এসি বাসের ভাড়া ৫৫০, এসি ১৪০০ টাকা। বাস থেকে নেমে রিকশা বা অটোতে যেতে হবে লঞ্চ ঘাট। আর ট্রেনে খুলনা গেলে স্টেশনে নেমে গাড়ি নিতে হবে না। কারণ, স্টেশন ও লঞ্চঘাট একেবারেই গায়ে লাগানো। সায়েদাবাদ থেকে মংলার সরাসরি বাস আছে। এই সেমি চেয়ারকোচ বাসগুলো রাত ৮টা থেকে ৮.৩০ এর মধ্যে ছেড়ে গিয়ে ভোর ৫-৬টার মধ্যে মংলা পৌঁছায়। ভাড়া ৪৫০ টাকা।

ট্যুর কোম্পানির বিস্তারিত
সাধারণত প্রতি শুক্র থেকে রবিবার অথবা সোম থেকে বৃহস্পতিবার খুলনা লঞ্চঘাট থেকে অপারেটরদের প্যাকেজ থাকে। ১০-২০ জনের গ্রুপ হলেও প্যাকেজে নিজেরা একটি লঞ্চ নিতে পারবেন। এতে আপনাদের প্রাইভেসিও থাকবে, লোক কম হওয়ায় সার্ভিসও ভালো পাবার সম্ভাবনা থাকে। আর মংলা থেকে লঞ্চে সময়ও ৩ ঘণ্টা কম লাগে।

নিয়মিত প্যাকেজে যারা ভ্রমণপিপাসুদের সুন্দরবন নিয়ে যায়, এমন কয়েকটি কোম্পানির নাম:
দি গাইড ট্যুরস লি. ফোন-০১৭১১৫৪০৪৩১
ডিঙি ও ভেলা ভেসেলের বেঙ্গল ট্যুরস লি. হলিডেস ট্যুর ফোন- ০১৫৫২৫৫৫৫৫০
সিলভার ওয়েভ, ফোন- ০১৭১৩৪৫৩১৩৭
খুলনার বাদাবন ও ওটি আলী ভেসেল পরিচালক রূপান্তর ইকো ট্যুরিজম লি. ফোন-০১৭১১৮২৯৪১৪
রয়েল গন্ডোলা ভেসেলের রয়াল ট্যুর, ফোন ০১৭১১২৯৫৭৩৮
সুন্দরবন ওয়ার্ন্ডার্স এন্ড এডভেঞ্চার্স লি. ফোন ০১৭১১৪৩৯৫৫৭
সাতক্ষীরার তিনটি ভেসেল পরিচালনাকারী বরসা ট্যুরিজম, ফোন ০১৭১৫২৫১৯৬৩

প্যাকেজের খরচ : খাবারের মান ও জাহাজ ভেদে মাঝারি ধরনের একটি ‌ট্যুরে সাধারণত খরচ পড়ে ৬-৮ হাজার টাকা। আরেকটু ভালো চাইলে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্যাকেজ আছে। ৩৫-৪০ জন হলে একটি লঞ্চে ফ্লোরিং করে ৪০০০-৫০০০ টাকার মধ্যেও তিন দিনের সুন্দরবন ভ্রমণ সম্ভব। এডভান্স দিয়ে এক মাস আগে বুকিং না দিলে ভ্যাসেল পাওযা কঠিন।

সুন্দরবন ভ্রমণ ফি : অভয়ারণ্য এলাকায় প্রত্যেক দেশি পর্যটকের প্রতিদিনের ফি ১৫০ টাকা, ছাত্রছাত্রী ৩০ টাকা, বিদেশি পর্যটক ১৫০০ টাকা। অভয়ারণ্যের বাইরে দেশি পর্যটক ৭০ টাকা ও বিদেশি ১০০০ টাকা, ছাত্রছাত্রী ২০টাকা, গবেষক ৪০ টাকা। করমজল দেশি ২০ টাকা, বিদেশি ৩০০ টাকা। বন বিভাগের নির্দিষ্ট ভ্রমণ ফি ছাড়াও প্রতিদিন গাইড ফি ৫০০ টাকা, লঞ্চ ক্রু ফি ৭০ টাকা, নিরাপত্তা গার্ড ফি ৩০০ টাকা, টেলিকমিউনিকেশন ফি ২০০ টাকা, ভিডিও ক্যামেরা ফি দেশি পর্যটক ২০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটক ৩০০ টাকা। সুন্দরবনে রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে তীর্থ যাত্রীদের ফি তিন দিনের জন্য জনপ্রতি ৫০ টাকা, অনিবন্ধনকৃত ট্রলার ৮০০ টাকা, নিবন্ধনকৃত ট্রলার ২০০ টাকা এবং ট্রলারের অবস্থান ফি প্রতিদিন ২০০ টাকা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ফ্রিল্যান্সিং করে সফল কাওসার তালুকদার

সুন্দরবনে কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, খরচ কত !

আপডেট সময় : ০৩:২৮:৫০ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

নিউজ ডেস্ক : সুন্দরবন এক প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর নাম। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকায় এটি পৃথিবীর বৃহত্তম লবণাক্ত বনাঞ্চল। ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারজুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে জায়গাটি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনের গহীনে যেতে হলে নৌ-পথেই পাড়ি দিতে হয়। শীতকাল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অনেকেই ভ্রমণ করতে চাইলেও প্রয়োজনীয় তথ্য জানেন না। রাইজিংবিডির পাঠকদের চাহিদার কথা ভেবে সুন্দরবনের খুঁটিনাটি তুলে ধরা হলো।

সুন্দরবনে কী দেখবেন

জামতলা সৈকত : জামতলার আকর্ষণীয় জায়গা হলো পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। টাওয়ার থেকেই বিস্তীর্ণ ছনক্ষেতে হাজার হাজার হরিণের ছোটাছুটি, ভাগ্য ভালো হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পেয়ে যেতে পারেন। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কচিখালী সমুদ্র সৈকত হয়ে বন বিভাগের কচিখালী স্টেশন পর্যন্ত হাঁটা পথ। পথের পাশে ঘন অরণ্যে বাঘ, হরিণ, শূকর, বিষধর সাপ ইত্যাদির দেখা মেলে। সুতরাং সাবধান হতেই হবে। আর এ কারণে গা ছমছম পরিবেশে দুঃসাহসী পর্যটকদের জন্য এই স্থানের যেন বিকল্প নেই। সত্যিই মনোমুগ্ধকর!

মান্দারবাড়িয়া সৈকত : মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত সুন্দরবন ও উত্তাল বঙ্গোপসাগরের যেন এক রূপসী কন্যা, যা এখনও কিছুটা অনাবিষ্কৃত এবং অস্পর্শিত। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর থেকে মান্দারবাড়িয়া ৭৫-৮০ কিলোমিটার দূরে। সাতক্ষীরা থেকে বুড়িগোয়ালিনীর দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর পর্যন্ত গাড়িতে যাওয়া যায়, তারপর ৭৫-৮০ কিলোমিটার যেতে হবে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা স্পীড বোটে।

হীরন পয়েন্ট : হীরন পয়েন্টে গিয়ে কাঠের তৈরি ওয়াকওয়ে ধরে বনের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে বানর, হরিণ, গুইসাপ অথবা কুমিরের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দেখা যাবে। হীরণ পয়েন্ট ছাড়াও টাইগার পয়েন্ট, বুড়িগোয়ালিনী, হারবাড়িয়া প্রভৃতি এলাকায় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখাও মিলে যেতে পারে।

দুবলার চর :

দুবলার চর সুন্দরবনের অন্তর্গত একটি ছোট্ট চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী; সেসব নদী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। দুবলার চর একটু ভেতরে অবস্থিত বিধায় কোনো দশনার্থী সহজে এই চরে প্রবেশ করতে পারে না।

কটকা বিচ : কটকাতে ৪০ ফুট উচ্চ একটি টাওয়ার আছে যেখান থেকে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে সেখানে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হতে ফেরার সময় হেঁটে বিচের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। কটকা থেকে কাচিখালী পর্যন্ত প্রচুর ঘাস জন্মে। যে কারণে অনেক জীবজন্তুর আনাগোনা রয়েছে। অনেকে জায়গাটিকে ‘বাঘের জায়গা’ও বলে।

কোথায় থাকবেন
সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণ পয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভাড়া নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ ৩ হাজার টাকা, ৪ কক্ষ ১২ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষ ৩ হাজার টাকা, ৪ কক্ষ ১০ হাজার টাকা। কটকা প্রতি কক্ষ ২ হাজার টাকা, ২ কক্ষ ৪ হাজার টাকা। বিদেশিদের কাছে ভাড়া কিন্তু প্রায় দ্বিগুণ। সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে একক, পরিবার ও গ্রুপ নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে। মংলায় আছে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, পশুর বন্দরে সাধারণ হোটেল আছে পর্যটকদের থাকার জন্য। খুলনা মহানগরে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন্, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলিনিয়াম মানসম্পন্ন।

ঢাকা থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন এবং লঞ্চে সরাসরি খুলনা যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এসি এবং ননএসি দুই ধরনের বাস চলাচল করে। ঢাকা থেকে সোহাগ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ এবং ঈগল পরিবহন নিয়মিত চলাচল করে খুলনার উদ্দেশ্য। ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গাড়িগুলো খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুলনা পৌঁছাতে সময় লাগে ৭ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ নিয়মিত যাতায়াত করছে খুলনার উদ্দেশ্যে।

খুলনার নন এসি বাসের ভাড়া ৫৫০, এসি ১৪০০ টাকা। বাস থেকে নেমে রিকশা বা অটোতে যেতে হবে লঞ্চ ঘাট। আর ট্রেনে খুলনা গেলে স্টেশনে নেমে গাড়ি নিতে হবে না। কারণ, স্টেশন ও লঞ্চঘাট একেবারেই গায়ে লাগানো। সায়েদাবাদ থেকে মংলার সরাসরি বাস আছে। এই সেমি চেয়ারকোচ বাসগুলো রাত ৮টা থেকে ৮.৩০ এর মধ্যে ছেড়ে গিয়ে ভোর ৫-৬টার মধ্যে মংলা পৌঁছায়। ভাড়া ৪৫০ টাকা।

ট্যুর কোম্পানির বিস্তারিত
সাধারণত প্রতি শুক্র থেকে রবিবার অথবা সোম থেকে বৃহস্পতিবার খুলনা লঞ্চঘাট থেকে অপারেটরদের প্যাকেজ থাকে। ১০-২০ জনের গ্রুপ হলেও প্যাকেজে নিজেরা একটি লঞ্চ নিতে পারবেন। এতে আপনাদের প্রাইভেসিও থাকবে, লোক কম হওয়ায় সার্ভিসও ভালো পাবার সম্ভাবনা থাকে। আর মংলা থেকে লঞ্চে সময়ও ৩ ঘণ্টা কম লাগে।

নিয়মিত প্যাকেজে যারা ভ্রমণপিপাসুদের সুন্দরবন নিয়ে যায়, এমন কয়েকটি কোম্পানির নাম:
দি গাইড ট্যুরস লি. ফোন-০১৭১১৫৪০৪৩১
ডিঙি ও ভেলা ভেসেলের বেঙ্গল ট্যুরস লি. হলিডেস ট্যুর ফোন- ০১৫৫২৫৫৫৫৫০
সিলভার ওয়েভ, ফোন- ০১৭১৩৪৫৩১৩৭
খুলনার বাদাবন ও ওটি আলী ভেসেল পরিচালক রূপান্তর ইকো ট্যুরিজম লি. ফোন-০১৭১১৮২৯৪১৪
রয়েল গন্ডোলা ভেসেলের রয়াল ট্যুর, ফোন ০১৭১১২৯৫৭৩৮
সুন্দরবন ওয়ার্ন্ডার্স এন্ড এডভেঞ্চার্স লি. ফোন ০১৭১১৪৩৯৫৫৭
সাতক্ষীরার তিনটি ভেসেল পরিচালনাকারী বরসা ট্যুরিজম, ফোন ০১৭১৫২৫১৯৬৩

প্যাকেজের খরচ : খাবারের মান ও জাহাজ ভেদে মাঝারি ধরনের একটি ‌ট্যুরে সাধারণত খরচ পড়ে ৬-৮ হাজার টাকা। আরেকটু ভালো চাইলে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্যাকেজ আছে। ৩৫-৪০ জন হলে একটি লঞ্চে ফ্লোরিং করে ৪০০০-৫০০০ টাকার মধ্যেও তিন দিনের সুন্দরবন ভ্রমণ সম্ভব। এডভান্স দিয়ে এক মাস আগে বুকিং না দিলে ভ্যাসেল পাওযা কঠিন।

সুন্দরবন ভ্রমণ ফি : অভয়ারণ্য এলাকায় প্রত্যেক দেশি পর্যটকের প্রতিদিনের ফি ১৫০ টাকা, ছাত্রছাত্রী ৩০ টাকা, বিদেশি পর্যটক ১৫০০ টাকা। অভয়ারণ্যের বাইরে দেশি পর্যটক ৭০ টাকা ও বিদেশি ১০০০ টাকা, ছাত্রছাত্রী ২০টাকা, গবেষক ৪০ টাকা। করমজল দেশি ২০ টাকা, বিদেশি ৩০০ টাকা। বন বিভাগের নির্দিষ্ট ভ্রমণ ফি ছাড়াও প্রতিদিন গাইড ফি ৫০০ টাকা, লঞ্চ ক্রু ফি ৭০ টাকা, নিরাপত্তা গার্ড ফি ৩০০ টাকা, টেলিকমিউনিকেশন ফি ২০০ টাকা, ভিডিও ক্যামেরা ফি দেশি পর্যটক ২০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটক ৩০০ টাকা। সুন্দরবনে রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে তীর্থ যাত্রীদের ফি তিন দিনের জন্য জনপ্রতি ৫০ টাকা, অনিবন্ধনকৃত ট্রলার ৮০০ টাকা, নিবন্ধনকৃত ট্রলার ২০০ টাকা এবং ট্রলারের অবস্থান ফি প্রতিদিন ২০০ টাকা।