শুক্রবার | ২৮ নভেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি রবিউল হাসানকে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলী Logo প্রতিষ্ঠার পর থেকে নির্মাণ হয়নি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে স্থায়ী মর্গ, জীর্ণ-ভবনে ময়নাতদন্ত Logo চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে তারুণ্যের আলো সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প Logo ফের ভূমিকম্প Logo কচুয়ায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে ৩০টি প্রদর্শনী Logo কুবির বাংলা বিভাগের বাংলা নাটক বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন Logo মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবক নিহত Logo মাগুরার শ্রীপুরে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনী- ২০২৫ এর উদ্বোধন Logo পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় জাতীয় প্রাণীসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ প্রদর্শনী Logo আমরা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছি: চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী বাবু খান

পরম্পরার রোগ নিয়ে আপনি সচেতন তো?

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৫:৪৩ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭
  • ৮১০ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

মাত্র ৩৬ বছর বয়সে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা ধরা পড়ে রাকিবের। একদিন অফিসে চিন চিন করে বুকের ব্যথা শুরু। চিকিৎসকের কাছে যেতেই প্রথমে ইসিজি করা হলো। ভ্রু কুঁচকে গেল চিকিৎসকের। পরামর্শ দিলেন এনজিওগ্রামের। এনজিওগ্রাম চলার সময় বলা হলো হৃদ্‌যন্ত্রের তিনটি ধমনিতে ব্লক আছে, বাইপাস সার্জারি করতে হবে।

বিয়ে হয়েছে মাত্র কয়েক বছর, চার বছরের শিশুসন্তান—রাকিবের স্ত্রীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল প্রায়। সেই সময়ের কথা মনে করলে এখনো শিউরে ওঠেন শিউলি, রাকিবের স্ত্রী। ছোটাছুটি করে টাকাপয়সা, রক্ত জোগাড় করা, ১০ দিন হাসপাতালে থাকা—সব মিলিয়ে একেবারে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরে চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করেছিলেন একদিন, এত অল্প বয়সে কেন হৃদ্‌রোগ হলো তাঁর স্বামীর। চিকিৎসক বললেন, ‘জোরালো পারিবারিক ইতিহাসই রাকিবের হৃদ্‌রোগের কারণ। রাকিবের দুই চাচা অল্প বয়সেই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। বড় ভাই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন ৪০ বছর বয়সে। রাকিবের বাবাও মারা গেছেন হৃদ্‌রোগে, তবে একটু বেশি বয়সে। পারিবারিকভাবেই তাঁদের রক্তে ক্ষতিকর চর্বির মাত্রা বেশি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাকিবের বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের ধূমপানের বদাভ্যাস। চিকিৎসক এ-ও বললেন যে একই রকমের ঝুঁকি তাঁদের সন্তানের জীবনেও রয়েছে। তাই ওকে এই সমস্যা থেকে বাঁচাতে হলে ছোটবেলা থেকেই সচেতন হতে হবে।

দুনিয়াজুড়ে অসংক্রামক ব্যাধি এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ ইত্যাদি এখন মারণ ঘাতক। এই রোগগুলোর ক্ষেত্রে পারিবারিক বা জিনগত (জেনেটিক) ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার সঙ্গে যোগ হয় পরিবেশগত উপাদান। যেমন মন্দ খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রমের অভাব, ধূমপান, মানসিক চাপ ইত্যাদি। এই দুয়ে মিলে বর্তমান প্রজন্মে অনেক কম বয়সেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এ ধরনের রোগে। কম বয়সে অনেকে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন, পারিবারিক ব্যয় বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলেন, বংশগত বা জিনগত উপাদানকে আমরা পরিবর্তন করতে পারি না। এটি নন-মডিফায়েবল বা পরিবর্তন অযোগ্য। কিন্তু পরিবেশগত উপাদানগুলোকে পরিবর্তন করা যায়। তাই যাঁদের পরিবারে এ ধরনের রোগবালাই আছে, তাঁদের বিশেষভাবে সচেতন হওয়া উচিত। শৈশব থেকেই এ ধরনের পরিবারের সন্তানদের দিকে মনোযোগী হতে হবে। ওজন বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড বা কোমল পানীয় গ্রহণ, ধূমপান—ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। ছেলেবেলা থেকে কায়িক শ্রম, ব্যায়াম ও খেলাধুলায় উৎসাহী করতে হবে এদের। কাঁচা শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে বেশি। ইদানীং বলা হচ্ছে স্তন ক্যানসার, অন্ত্রের ক্যানসারসহ কিছু ক্যানসারেরও পারিবারিক ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। আর স্থূলতা, ওজনাধিক্য প্রতিরোধ করা গেলে, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারলে এ ধরনের ক্যানসারকেও প্রতিরোধ করা যায়।

পরিবারে মা-বাবার ডায়াবেটিস থাকলে তাঁদের তরুণী কন্যাসন্তানের গর্ভকালীন ডায়াবেটিসেরও ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এ ধরনের পরিবারের মেয়েদেরও হতে হবে সচেতন। মুটিয়ে যাওয়া এবং কায়িক শ্রমের অভাব এই ঝুঁকি বাড়াবে। তাই তাঁদের উচিত সন্তান নেওয়ার আগেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা ও খাদ্যাভ্যাস পাল্টানো।

নিয়মিত কিছু উদ্যোগ

যাদের পরিবারে এ ধরনের রোগ আছে, তাদের উচিত হবে এসবের পাশাপাশি নিয়মিত নিজেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। ৩৫ বছর বয়সের পর থেকেই বছরে অন্তত একবার রক্তে শর্করা, চর্বির পরিমাণ পরীক্ষা করা, রক্তচাপ মাপা উচিত। মাত্রা বর্ডার লাইনে হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক আছে কি না দেখুন। এ ধরনের পরিবারের সন্তানদের সামান্য উপসর্গকেও উপেক্ষা করা যাবে না। মেয়েরা গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই রক্তের শর্করা দেখে নেবেন। থাইরয়েডের সমস্যা পরিবারে থেকে থাকলে তা-ও দেখে নেওয়া ভালো। মা-খালাদের স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে নিজের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। নিয়মিত নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখুন। প্রয়োজনে আলট্রাসনোগ্রাম বা ম্যামোগ্রাফি করান চিকিৎসকের পরামর্শে। কোলন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে পারিবারিক খাদ্যাভ্যাস পাল্টে ফেলুন। লাল মাংস (গরু-খাসি) কম খাবেন, বেশি খাবেন আঁশযুক্ত খাবার ও ফলমূল। এ ছাড়া কিছু জিনগত রোগ আছে, যেমন থ্যালাসেমিয়ার জিন বংশগতভাবে সন্তানেরা পেয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে শিশুকাল থেকেই তার যথাযথ স্ক্রিনিং, রোগ নির্ণয় প্রয়োজন। বড় হলে প্রয়োজনে যেন ব্যবস্থা নেওয়া যায় এ জন্য সচেতন হতে হবে। এ ধরনের পরিবারে নিজেদের মধ্যে বিয়ে না হওয়াই ভালো। ‘কাজিন ম্যারেজ’ পরবর্তী প্রজন্মের সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলবে। এমনকি বিয়েশাদির সময় জীবনসঙ্গীও এ ধরনের জিনের বাহক কি না তা জেনে নেওয়া ভালো।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি রবিউল হাসানকে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলী

পরম্পরার রোগ নিয়ে আপনি সচেতন তো?

আপডেট সময় : ০৫:৪৫:৪৩ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

মাত্র ৩৬ বছর বয়সে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা ধরা পড়ে রাকিবের। একদিন অফিসে চিন চিন করে বুকের ব্যথা শুরু। চিকিৎসকের কাছে যেতেই প্রথমে ইসিজি করা হলো। ভ্রু কুঁচকে গেল চিকিৎসকের। পরামর্শ দিলেন এনজিওগ্রামের। এনজিওগ্রাম চলার সময় বলা হলো হৃদ্‌যন্ত্রের তিনটি ধমনিতে ব্লক আছে, বাইপাস সার্জারি করতে হবে।

বিয়ে হয়েছে মাত্র কয়েক বছর, চার বছরের শিশুসন্তান—রাকিবের স্ত্রীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল প্রায়। সেই সময়ের কথা মনে করলে এখনো শিউরে ওঠেন শিউলি, রাকিবের স্ত্রী। ছোটাছুটি করে টাকাপয়সা, রক্ত জোগাড় করা, ১০ দিন হাসপাতালে থাকা—সব মিলিয়ে একেবারে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরে চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করেছিলেন একদিন, এত অল্প বয়সে কেন হৃদ্‌রোগ হলো তাঁর স্বামীর। চিকিৎসক বললেন, ‘জোরালো পারিবারিক ইতিহাসই রাকিবের হৃদ্‌রোগের কারণ। রাকিবের দুই চাচা অল্প বয়সেই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। বড় ভাই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন ৪০ বছর বয়সে। রাকিবের বাবাও মারা গেছেন হৃদ্‌রোগে, তবে একটু বেশি বয়সে। পারিবারিকভাবেই তাঁদের রক্তে ক্ষতিকর চর্বির মাত্রা বেশি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাকিবের বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের ধূমপানের বদাভ্যাস। চিকিৎসক এ-ও বললেন যে একই রকমের ঝুঁকি তাঁদের সন্তানের জীবনেও রয়েছে। তাই ওকে এই সমস্যা থেকে বাঁচাতে হলে ছোটবেলা থেকেই সচেতন হতে হবে।

দুনিয়াজুড়ে অসংক্রামক ব্যাধি এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ ইত্যাদি এখন মারণ ঘাতক। এই রোগগুলোর ক্ষেত্রে পারিবারিক বা জিনগত (জেনেটিক) ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার সঙ্গে যোগ হয় পরিবেশগত উপাদান। যেমন মন্দ খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রমের অভাব, ধূমপান, মানসিক চাপ ইত্যাদি। এই দুয়ে মিলে বর্তমান প্রজন্মে অনেক কম বয়সেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এ ধরনের রোগে। কম বয়সে অনেকে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন, পারিবারিক ব্যয় বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলেন, বংশগত বা জিনগত উপাদানকে আমরা পরিবর্তন করতে পারি না। এটি নন-মডিফায়েবল বা পরিবর্তন অযোগ্য। কিন্তু পরিবেশগত উপাদানগুলোকে পরিবর্তন করা যায়। তাই যাঁদের পরিবারে এ ধরনের রোগবালাই আছে, তাঁদের বিশেষভাবে সচেতন হওয়া উচিত। শৈশব থেকেই এ ধরনের পরিবারের সন্তানদের দিকে মনোযোগী হতে হবে। ওজন বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড বা কোমল পানীয় গ্রহণ, ধূমপান—ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। ছেলেবেলা থেকে কায়িক শ্রম, ব্যায়াম ও খেলাধুলায় উৎসাহী করতে হবে এদের। কাঁচা শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে বেশি। ইদানীং বলা হচ্ছে স্তন ক্যানসার, অন্ত্রের ক্যানসারসহ কিছু ক্যানসারেরও পারিবারিক ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। আর স্থূলতা, ওজনাধিক্য প্রতিরোধ করা গেলে, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারলে এ ধরনের ক্যানসারকেও প্রতিরোধ করা যায়।

পরিবারে মা-বাবার ডায়াবেটিস থাকলে তাঁদের তরুণী কন্যাসন্তানের গর্ভকালীন ডায়াবেটিসেরও ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এ ধরনের পরিবারের মেয়েদেরও হতে হবে সচেতন। মুটিয়ে যাওয়া এবং কায়িক শ্রমের অভাব এই ঝুঁকি বাড়াবে। তাই তাঁদের উচিত সন্তান নেওয়ার আগেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা ও খাদ্যাভ্যাস পাল্টানো।

নিয়মিত কিছু উদ্যোগ

যাদের পরিবারে এ ধরনের রোগ আছে, তাদের উচিত হবে এসবের পাশাপাশি নিয়মিত নিজেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। ৩৫ বছর বয়সের পর থেকেই বছরে অন্তত একবার রক্তে শর্করা, চর্বির পরিমাণ পরীক্ষা করা, রক্তচাপ মাপা উচিত। মাত্রা বর্ডার লাইনে হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক আছে কি না দেখুন। এ ধরনের পরিবারের সন্তানদের সামান্য উপসর্গকেও উপেক্ষা করা যাবে না। মেয়েরা গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই রক্তের শর্করা দেখে নেবেন। থাইরয়েডের সমস্যা পরিবারে থেকে থাকলে তা-ও দেখে নেওয়া ভালো। মা-খালাদের স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে নিজের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। নিয়মিত নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখুন। প্রয়োজনে আলট্রাসনোগ্রাম বা ম্যামোগ্রাফি করান চিকিৎসকের পরামর্শে। কোলন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে পারিবারিক খাদ্যাভ্যাস পাল্টে ফেলুন। লাল মাংস (গরু-খাসি) কম খাবেন, বেশি খাবেন আঁশযুক্ত খাবার ও ফলমূল। এ ছাড়া কিছু জিনগত রোগ আছে, যেমন থ্যালাসেমিয়ার জিন বংশগতভাবে সন্তানেরা পেয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে শিশুকাল থেকেই তার যথাযথ স্ক্রিনিং, রোগ নির্ণয় প্রয়োজন। বড় হলে প্রয়োজনে যেন ব্যবস্থা নেওয়া যায় এ জন্য সচেতন হতে হবে। এ ধরনের পরিবারে নিজেদের মধ্যে বিয়ে না হওয়াই ভালো। ‘কাজিন ম্যারেজ’ পরবর্তী প্রজন্মের সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলবে। এমনকি বিয়েশাদির সময় জীবনসঙ্গীও এ ধরনের জিনের বাহক কি না তা জেনে নেওয়া ভালো।