আলোর ঝলকানি, হাসি-খুশির উচ্ছ্বাস আর গান-কবিতার সুরে মুখরিত পরিবেশে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম (সিএমজে) বিভাগে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ উপলক্ষে নবীনবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকাল ১০টায় মীর মোশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের ৪৩৯ নম্বর কক্ষে এ আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই নবীন শিক্ষার্থীদের গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুল, ডায়েরি, কলম ও চাবিররিং দিয়ে বরণ করে নেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরপর নবীনদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিভাগীয় শিক্ষকবৃন্দ। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি সুশিক্ষা, সৃজনশীলতা ও ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার পরামর্শ দেন।
বর্ণিল আয়োজনে মুখরিত হয়ে উঠেছিল কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম (সিএমজে) বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানটি। এসময় বিভাগীয় সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ রশিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আসন অলঙ্কৃত করেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. বেগম রোকসানা মিলি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর ড. এ. কে. এম. মতিনুর রহমান, থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আ. ব. ম. ছিদ্দিকুর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোঃ ওবায়দুল ইসলাম এবং প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. শাহীনুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনজুর রহমান, প্রফেসর ড. তিয়াশা চাকমা, প্রভাষক তন্ময় শাহা জয় ও প্রভাষক মোঃ উজ্জ্বল হোসেনসহ বিভাগের নবীন ও সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্তরিক উপস্থিতি ও অংশগ্রহণে পুরো আয়োজন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
নবীনদের স্বপ্নময় যাত্রার সূচনা আর সিনিয়রদের উচ্ছ্বসিত বরণ যেন মিলেমিশে এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করে। এই পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত আহমেদ শিশির এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আফরিনা আমিন নদী।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান বলেন, “বিভাগে আপনাদের প্রকৃত অভিভাবক হচ্ছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও বড় ভাইবোনেরা। ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া এই পরিবারে সবাই সবার সঙ্গে আত্মিক সম্পর্কে আবদ্ধ। বিপদ-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোই হবে মূল শক্তি। যেকোনো সমস্যায় তাদেরই স্মরণ করবে তোমরা। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আরও গর্ব করার মতো আয়োজন উপহার দিতে না পারায় বিভাগের অভিভাবক হিসেবে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।”
অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মতিনুর রহমান শুভেচ্ছামূলক বক্তব্যে বলেন, “কমিউনিকেশন, মাল্টিমিডিয়া ও জার্নালিজম—এই তিনটি বিষয়কে একত্রিত করে গঠিত হয়েছে এই বিভাগ, যা অন্য কোথাও নেই। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে প্রত্যেকে মূল্যবান মানবসম্পদে পরিণত হবে। ফ্যাসিস্ট আমলে সমাজের দর্পণখ্যাত সংবাদপত্র ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এখন তোমাদের মাধ্যমে আমরা এমন এক দর্পণ গড়ে তুলতে চাই, যা সমাজের প্রকৃত চিত্র ফুটিয়ে তুলবে।”
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, “সাংবাদিক হতে হলে যে সাংবাদিকতা বিভাগেই পড়তে হবে, এমন নয়। তবে একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই বিভাগ বিশেষভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের সময় যে ছবিগুলো ফ্যাসিস্ট সরকারকে পতনে বাধ্য করেছিল, সেগুলো তুলেছিলেন সাহসী সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। বর্তমানে সমাজ ও রাষ্ট্রে সাংবাদিকতার গুরুত্ব বাড়ছে। এ বিভাগে যারা পড়াশোনা করছেন, তারা যদি আন্তরিক হন তবে নিঃসন্দেহে দক্ষ সাংবাদিক হিসেবে গড়ে উঠবেন।”
প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “সাংবাদিকতা সৎ ও সাহসী পেশা। এটি দেশ, জাতি ও সমাজের উন্নয়নে অপরিহার্য। বহুমুখী প্রতিভা বিকাশে এই বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকরা সমাজের কথক—তোমরা মানুষের না বলা কথা বলবে, সমাজের অন্তরালের চিত্র উন্মোচন করবে, উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি প্রকাশ করবে, পরিবেশ বিপর্যয় ও নানা খাতের ত্রুটি তুলে ধরবে। ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাংবাদিকদের অবদান রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “সাংবাদিক তার মুখ, কথা ও কর্ম দিয়ে সমাজকে উপস্থাপন করে। এ দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুতর, তবে একই সঙ্গে তা গৌরবেরও। পেশাগত ক্ষেত্রেও সাংবাদিকতা শিক্ষার্থীদের সামনে বিশাল সুযোগ রয়েছে। যেকোনো পেশা বেছে নেওয়া সম্ভব হলেও সাংবাদিকতার প্রতিটি স্তরেই কাজ করার সুযোগ আছে। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে চাকরির বাজারে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার জায়গা—তোমাদের মূলমন্ত্র হতে হবে পড়াশোনা। তাহলেই চমৎকার ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রত্যয় নিয়েই তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”