সোহারাফ হোসেন সৌরভ, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
আশাশুনি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সদর ক্লিনিকে সেবা কার্যক্রমে চরম অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বহীনতা ও সেবার মান অবনতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এতে পরিবার পরিকল্পনা সেবাগ্রহীতা সাধারণ নারী-পুরুষসহ গর্ভবতী মায়েরা নানামুখী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
রবিবার সকাল ১০টার দিকে সোদকোনা গ্রামের গর্ভবতী মা শিল্পী রানী এবং বালিয়াপুর গ্রামের ফাতেমা বেগম নিয়মিত চেকআপ নিতে ক্লিনিকে এসে দেখতে পান—পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ফাহমিদা আক্তার ইভার কক্ষ তালাবদ্ধ। স্থানীয়দের অভিযোগ এই কক্ষ প্রায় সময়ই তালাবদ্ধ থাকে।
প্রায় ৩৫ মিনিট অপেক্ষার পর সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ফাহমিদা ইভা অফিসে এসে কক্ষ খুললেও ভুক্তভোগীরা জানান, তিনি রাগান্বিত ভঙ্গিতে খারাপ ব্যবহার করেন এবং কিছুক্ষণ পর আবার রুমটি বন্ধ করে দেন। পরবর্তী দীর্ঘ অপেক্ষার পর সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে পুনরায় রুম খোলা হয়।
এর আগে গত বুধবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ইমপ্লান্ট গ্রহণ সংক্রান্ত পরামর্শ নিতে বুধহাটা ইউনিয়নের শ্বেতপুর গ্রামের আকলিমা খাতুন ক্লিনিকে গেলে একইভাবে কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় পান। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন—পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা দীর্ঘদিন ধরেই নিয়মিত দেরিতে অফিসে আসেন এবং অধিকাংশ সময় কক্ষ বন্ধ রেখে দায়িত্ব পালন করেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাকে নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ফাহমিদা আক্তার ইভা চাকরি জীবনে একটিও ডেলিভারি করেননি বলে জানা গেছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি নিয়ম কানুন মানছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
আশাশুনি পরিবার পরিকল্পনা অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান,তিনি প্রায় প্রতিদিন দেরিতে অফিসে আসেন। সাতক্ষীরা থেকে এসে কাজ করেন এবং স্থানীয় ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই সবকিছু চালান।
এ বিষয়ে জানতে আশাশুনি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. মো. মফিজুল ইসলাম–এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,আমাদের কাছে এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। মৌখিকভাবে একজন অভিযোগ করলেও পরে তা তুলে নিয়েছে। তাই আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি।
ক্লিনিকে সেবা বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন,একটি ক্লিনিকে ১১ জন কর্মীর কথা থাকলেও এখানে আছে মাত্র চারজন। এই চারজনের মধ্যে অনেকে আবার ওয়ার্ড বা ইউনিয়নে ডিউটিতে থাকেন, তাই কিছু সময় ক্লিনিকে তালা থাকতে পারে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা জানান, পরিবার পরিকল্পনা সদর ক্লিনিকের সেবার মান যেখানে চরম নিম্নমুখী, সেখানে দায়িত্ব পালনে ঘাটতি মেনে নেওয়ার মতো নয়। তারা ফাহমিদা আক্তার ইভার দ্রুত বদলি এবং জরুরি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

















































