ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ শুরু করেন, যা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর প্রশাসনের লিখিত আশ্বাসে প্রত্যাহার করা হয়।
সকাল থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারাও। হাতে প্ল্যাকার্ড ধরে তারা শ্লোগান দেন— ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘জাস্টিস ফর সাজিদ’, ‘শিক্ষার্থী মর্গে, প্রশাসন ঘুমায় স্বর্গে’, ‘ইবির পুকুরে ভাসছে লাশ, তদন্ত চলবে দুই মাস’, ইত্যাদি।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সাজিদ সুসাঁতারু হওয়ায় পানিতে ডুবে মৃত্যু অসম্ভব। তারা বলেন, লাশ পাওয়ার ৪০ মিনিট পর আসে অ্যাম্বুলেন্স, তিন ঘণ্টা পর হলে আসে প্রশাসন। ফোন বন্ধ থাকলেও তার নম্বরে মৃত্যুর আগমুহূর্তে কল রিসিভ হয় বলে দাবি করেছেন ঘনিষ্ঠরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবিতে সাজিদের শরীরে আঘাতের চিহ্নও দেখা গেছে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসনের নির্লিপ্ততা প্রমাণ করে তারা দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থ। ঘটনাস্থলে সময়মতো কেউ না আসা এবং দুই দিন পেরিয়ে গেলেও ভিসি বা প্রো-ভিসির অনুপস্থিতি তাদের আরও ক্ষুব্ধ করে।
বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে ভবনে অবরুদ্ধ করেন। পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম এবং কোরআন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ জাকির হোসেন শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করেন সাজিদের বন্ধু আজহারুল ইসলাম।
১৫ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য— ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ, নিরাপত্তার ব্যর্থতায় এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ, ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনা, হলে এন্ট্রি-এক্সিট মনিটরিং, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।
এদিন সকালে ছাত্রদলের মানববন্ধনের মাধ্যমে শুরু হওয়া প্রতিবাদে পরে ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন, তালাবায়ে আরাবিয়াসহ বিভিন্ন সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে। শেষে ফুটবল মাঠে সাজিদের গায়েবানা জানাজা শেষে ফের বিক্ষোভ মিছিল করে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, “সাজিদ আমার বিভাগেরই ছাত্র। প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। আজ থেকেই সিসিটিভি বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। আমরা যা-ই করি, সাজিদ আর ফিরে আসবে না। তবে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।