শিরোনাম :
Logo দুর্নীতির মামলায় বেরোবির সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ গ্রেফতার Logo তেগুরিয়া শিশু বিদ্যানিকেতন এখন শিশু শিক্ষার আলোকবর্তিকা Logo কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত Logo উচাং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইবির সমঝোতা স্মারক পর্যালোচনা বৈঠক Logo ইবিতে হিন্দুধর্ম অবমাননার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন Logo সিরাজগঞ্জের শিশু নামাজ পড়তে গিয়ে নিখোঁজ Logo সিরাজগঞ্জে বাঁশের বেড়া দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে পরিবার অবরুদ্ধ করার অভিযোগ Logo আলোকিত পথপ্রদর্শক: পীরে কামেল শাহসূফি সৈয়দ আবুল ওলা (রহ.) Logo জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষ্যে চাঁদপুর জেলা পুলিশের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন Logo প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভিডিও করে সিরাজগঞ্জের শিপলুর চাঁদাবাজি

আনারসের বাণিজ্যিক চারা উৎপাদনে সাফল্য, কম খরচে চারা দিচ্ছে টিস্যু কালচার

বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ আনারস টক স্বাদের হয়ে থাকে। এর অন্যতম কারণ একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ ফল সংগ্রহ করে সেগুলো পাকানোর জন্য ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম রাসায়নিক এজেন্ট ব্যবহার করেন।

এতে ফলের প্রাকৃতিক স্বাদ, গন্ধ ও গুণগত মান নষ্ট হয়। এ সমস্যার সমাধানে আনারস চাষে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ।

আনারসের গুণগত মানসম্পন্ন চারা উৎপাদনের জন্য টিস্যু কালচার পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন তিনি। যার মাধ্যমে একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ চারা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এ গবেষণায় অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে ছিলেন বিভাগটির এমএস শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা ও পিএইচডি ফেলো মাকসুদা পারভিন।

কৃষি অনুষদের অধীন অ্যাগ্রোটেকনোলজি ল্যাবের গ্রোথ চেম্বারে আনারসের কেলাস থেকে সোমাটিক এমব্রায়ো বা অণু চারা তৈরি করা হয়। এ অণু চারাগুলো তিনি-চার মাসে সুস্থ ও পূর্ণাঙ্গ চারায় পরিণত হয়। এরপর অভিযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলো স্থানান্তর করা হয় মাঠ পর্যায়ে। ল্যাবসংলগ্ন সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত একটি পরীক্ষামূলক প্লটে এ চারা রোপণ করা হয়েছে। গাছগুলো টবে রোপণ করা এবং প্রতিটি টবে নিচ দিয়ে পিএইচ নিয়ন্ত্রিত ড্রিপ সেচের ব্যবস্থা রয়েছে। এরই মধ্যে সেখানকার কিছু গাছে ফল ধরেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, আনারস গাছে সাধারণত তিনটি অংশ থাকে—সাকার, স্লিপ ও ক্রাউন। এর মধ্যে ক্রাউন অংশ থেকে ছোট একটি খণ্ড নিয়ে আর্টিফিশিয়াল গ্রোথ রেগুলেটর ও এমএস মিডিয়া ব্যবহার করে কেলাস তৈরি করা হয়। এ কেলাস থেকে পরবর্তী ধাপে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে সাব-কালচার তৈরি করা হয়। সাব-কালচারে বিভাজন করে নতুন কেলাস তৈরি করা হয়। এরপর রিজেনারেশন পদ্ধতিতে এসব কেলাস থেকে চারা তৈরি হয়।

পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। শিকড় গজানোর পর চারাগুলোকে ধাপে ধাপে উন্মুক্ত পরিবেশে অভিযোজন করানো হয়। এরপর অর্গানিক উপাদানে তৈরি মাটির মিশ্রণে, নির্দিষ্ট পিএইচ বজায় রেখে রোপণ করা হয় মাঠে। প্রথম কয়েকদিন হালকা রোদে রেখে অভিযোজনের পর সেগুলো চাষাবাদের জন্য স্থানান্তর করা হয়।

অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বড় পরিসরে আনারস চাষ করতে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ চারা প্রয়োজন, যা সাধারণভাবে সম্ভব নয়। তাই আমরা টিস্যু কালচার পদ্ধতি নিচ্ছি। এটি মূলত মাইক্রোপ্রোপাগেশন ভিত্তিক, যেখানে মাস প্রোপাগেশন পদ্ধতিতে হাজার হাজার চারা উৎপাদন সম্ভব।’

রাবি অধ্যাপক আরো জানান, একই পদ্ধতিতে এরই মধ্যে আলু ও স্ট্রবেরির চারা উৎপাদন করা হয়েছে। টিস্যু কালচারে উৎপাদিত ফল সাধারণ ফলের তুলনায় আকারে বড়, স্বাদে উন্নত ও নিখুঁত হয়ে থাকে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও তুলনামূলক কম হয়। যেখানে মাঠে একটি গাছ থেকে গড়ে মাত্র তিন-চারটি চারা পাওয়া যায়, টিস্যু কালচারে একই সময়ে শত শত চারা উৎপাদন সম্ভব। ফলে উৎপাদন খরচও কমে আসে।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

দুর্নীতির মামলায় বেরোবির সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ গ্রেফতার

আনারসের বাণিজ্যিক চারা উৎপাদনে সাফল্য, কম খরচে চারা দিচ্ছে টিস্যু কালচার

আপডেট সময় : ০৬:২৩:১২ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ আনারস টক স্বাদের হয়ে থাকে। এর অন্যতম কারণ একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ ফল সংগ্রহ করে সেগুলো পাকানোর জন্য ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম রাসায়নিক এজেন্ট ব্যবহার করেন।

এতে ফলের প্রাকৃতিক স্বাদ, গন্ধ ও গুণগত মান নষ্ট হয়। এ সমস্যার সমাধানে আনারস চাষে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ।

আনারসের গুণগত মানসম্পন্ন চারা উৎপাদনের জন্য টিস্যু কালচার পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন তিনি। যার মাধ্যমে একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ চারা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এ গবেষণায় অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে ছিলেন বিভাগটির এমএস শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা ও পিএইচডি ফেলো মাকসুদা পারভিন।

কৃষি অনুষদের অধীন অ্যাগ্রোটেকনোলজি ল্যাবের গ্রোথ চেম্বারে আনারসের কেলাস থেকে সোমাটিক এমব্রায়ো বা অণু চারা তৈরি করা হয়। এ অণু চারাগুলো তিনি-চার মাসে সুস্থ ও পূর্ণাঙ্গ চারায় পরিণত হয়। এরপর অভিযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলো স্থানান্তর করা হয় মাঠ পর্যায়ে। ল্যাবসংলগ্ন সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত একটি পরীক্ষামূলক প্লটে এ চারা রোপণ করা হয়েছে। গাছগুলো টবে রোপণ করা এবং প্রতিটি টবে নিচ দিয়ে পিএইচ নিয়ন্ত্রিত ড্রিপ সেচের ব্যবস্থা রয়েছে। এরই মধ্যে সেখানকার কিছু গাছে ফল ধরেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, আনারস গাছে সাধারণত তিনটি অংশ থাকে—সাকার, স্লিপ ও ক্রাউন। এর মধ্যে ক্রাউন অংশ থেকে ছোট একটি খণ্ড নিয়ে আর্টিফিশিয়াল গ্রোথ রেগুলেটর ও এমএস মিডিয়া ব্যবহার করে কেলাস তৈরি করা হয়। এ কেলাস থেকে পরবর্তী ধাপে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে সাব-কালচার তৈরি করা হয়। সাব-কালচারে বিভাজন করে নতুন কেলাস তৈরি করা হয়। এরপর রিজেনারেশন পদ্ধতিতে এসব কেলাস থেকে চারা তৈরি হয়।

পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। শিকড় গজানোর পর চারাগুলোকে ধাপে ধাপে উন্মুক্ত পরিবেশে অভিযোজন করানো হয়। এরপর অর্গানিক উপাদানে তৈরি মাটির মিশ্রণে, নির্দিষ্ট পিএইচ বজায় রেখে রোপণ করা হয় মাঠে। প্রথম কয়েকদিন হালকা রোদে রেখে অভিযোজনের পর সেগুলো চাষাবাদের জন্য স্থানান্তর করা হয়।

অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বড় পরিসরে আনারস চাষ করতে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ চারা প্রয়োজন, যা সাধারণভাবে সম্ভব নয়। তাই আমরা টিস্যু কালচার পদ্ধতি নিচ্ছি। এটি মূলত মাইক্রোপ্রোপাগেশন ভিত্তিক, যেখানে মাস প্রোপাগেশন পদ্ধতিতে হাজার হাজার চারা উৎপাদন সম্ভব।’

রাবি অধ্যাপক আরো জানান, একই পদ্ধতিতে এরই মধ্যে আলু ও স্ট্রবেরির চারা উৎপাদন করা হয়েছে। টিস্যু কালচারে উৎপাদিত ফল সাধারণ ফলের তুলনায় আকারে বড়, স্বাদে উন্নত ও নিখুঁত হয়ে থাকে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও তুলনামূলক কম হয়। যেখানে মাঠে একটি গাছ থেকে গড়ে মাত্র তিন-চারটি চারা পাওয়া যায়, টিস্যু কালচারে একই সময়ে শত শত চারা উৎপাদন সম্ভব। ফলে উৎপাদন খরচও কমে আসে।