নিউজ ডেস্ক:
আজকাল নারীদের বিশেষ করে তরুণীদের ক্ষেত্রে একটা অন্যতম সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তা হলো হঠাৎ করে পেট ব্যাথা, ঋতুচক্রের অনিয়ম, কিংবা অত্যাধিক রক্তক্ষরণ। এগুলিকে ছোটখাট সমস্যা ভাবলে কিন্তু মারাত্মক ভুল হয়ে যাবে। এমনকি গোপন সমস্যা বলে এড়িয়ে যাওয়াও উচিত নয়। কারণ প্রথম থেকে সতর্ক না হলে পরবর্তীকালে ডিম্বাশয়ে টিউমার বা সিস্টও হওয়ার সুযোগ থাকে। সমস্যা দেখা দেয় সন্তানধারণেও। তাই পিরিয়ডস বা ঋতুচক্রের ট্যাবু ঘুচিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভীষণ জরুরি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের গাইনোকলজিস্ট ডা. নিবেদিতা চট্টোপাধ্যায়।
প্রধানত কী কী সমস্যা দেখা দিচ্ছে:
এখনকার দিনে ঋতুস্রাব হওয়ার সময়সীমা ক্রমশই এগিয়ে আসছে৷ অনেক মেয়েদেরই ৯ বছর বয়সে ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যাচ্ছে৷ তবে চিকিৎসকদের মতে, এই নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এছাড়া চাইল্ডহুড ওবেসিটি খুব বেশি মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে৷ বয়ঃসন্ধিকালে (১২-১৭ বছর বয়সে) দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ মেয়েই ওবেসিটির জন্য সিস্টের সমস্যায় ভুগছে৷ কারও পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিস্ট, আবার কারও চকলেট সিস্ট৷ সপ্তাহে অন্তত ১০ থেকে ১২ জন তরুণী সিস্টের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে আসছেন।
আবার হরমোনের সমস্যা দেখা দিলে অনেকক্ষেত্রেই প্রথম ঋতুস্রাবের পর প্রায় তিন থেকে ছয় মাস সেটা বন্ধ থাকে৷ এক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷ এমন হলে আবার সংক্রমণ হয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় সাদাস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে৷
ছোট থেকেই পরিষ্কার না থাকলে ইউরিনট্রাক ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ আর একবার ইউরিনট্রাক ইনফেকশন হলে বারবার ইনফেকশন হতে পারে।
পরিবারের ডায়াবেটিস, ওসেবিসিট, হাইপো-থাইরয়েড থাকলে সেই পরিবারের মহিলাদের সিস্টের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷ এছাড়া খুব বেশি মাত্রায় ফাস্ট ফুড খেলেও ক্ষতি মারাত্মক৷
কখন ভয়:
যাদের ঠিক সময়েই ঋতুস্রাব হলেও কিন্তু পরিমাণ কম, সেক্ষেত্রে লুকিয়ে থাকতে পারে রোগ।
ঋতুচক্র বা তার পরিমাণ স্বাভাবিক না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কার যদি ঋতুস্রাব হয়ে যাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে আবার একটু রক্তপাত হয় তাহলে টিউমার বা পলিপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ঋতুস্রাব শুরুর ৭ দিন আগে থেকে একটু একটু করে ব্লিডিং হলে হতে পারে হরমোনের সমস্যা।
ঋতুস্রাবের সময়ের তারতম্য, অতিরিক্ত ব্যথা হলে বুঝতে হবে ইউরেটাস বা জরায়ুর সমস্যা। এছাড়া পিটুইটারি গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যাও হতে পারে। ডিম্বাশয়ে কোনও টিউমার থাকলেও কিন্তু ব্যথা হয় খুব৷ পরে ঋতুস্রাবের সমস্যা দেখা যায়।
ভালো লক্ষণ:
১৪-১৬ বছর বয়সের মধ্যে ঋতুস্রাব শুরু হলে তা স্বাভাবিক বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে।
স্বাভাবিক নিয়মে ঋতুস্রাবের সময় রোজ ২০-৬০ মিলি রক্তপাত হয়।
তিন থেকে সাত দিন ঋতুস্রাব থাকলে ভাল।
ঋতুস্রাবের কারণে খুব অল্প ব্যথা, খেতে অনীহা, ক্লান্তি হলে ভয় নেই।
স্বাভাবিকভাবে একবার ঋতুস্রাব হওয়ার ২১-৩৫ দিনের মধ্যে পরবর্তী ঋতুস্রাব হয়।
সাধারণত ৪৫-৫০ বছরের মধ্যে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়।
সুস্থতার চাবিকাঠি:
মেয়েদের সবসময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত। শারীরিক সম্পর্কে যাওয়ার আগে অবশ্যই প্রতিরোধের ভ্যাকসিন নেওয়াটা জরুরি। যৌনাঙ্গে যে কোনও ইনফেকশন থেকে বাঁচতে পরিষ্কার অন্তর্বাস পরা জরুরি৷ হাইজিন মেনে চললে ৮০-৯০ শতাংশ ফাঙ্গাল ইনফেকশন (ক্যান্ডিডা) ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন (ইকোলাই) থেকে দূরে থাকা সম্ভব৷ পরিবারে ওবেসিটির সমস্যা থাকলে ওজন, খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত এক্সারসাইজ করতে হবে। প্রস্রাব চেপে রাখা কখনই উচিত নয়। সবসময় বেশি পরিমাণে পানি খাওয়া প্রয়োজন। চেষ্টা করুন লো ফ্যাট, লো ক্যালরি খাবার খেতে। সূত্র: কলকাতা টুয়েন্টিফোর সেভেন।