নিউজ ডেস্ক:
একদিকে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার জন্য ঘোষণা করা হয়েছে ই-কার্ড কর্মসূচী, অপরদিকে গত দশ দিনেরও বেশি সময় ধরে দিন-রাত মালয়েশিয়া জুড়ে চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। এ পরিস্থিতিতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন দেশ থেকে মালয়েশিয়া যাওয়া ভিসাধারীরা।
বিগত দিনে দেখা যেত কোন এলাকায় একবার ইমিগ্রেশন পুলিশ ধরপাকড় করলে সেই সমস্ত এলাকায় ছয় মাস বা এক বছরেও কোন ধরনের অভিযোগ ছাড়া ধরপাকড় হতো না। তবে গত কয়েক দিনের চলা অব্যাহত ধরপাকড়ে দেখা যাচ্ছে কোন কোন এলাকায় দিনে পর পর দুই-তিনবারও ইমিগ্রেশন পুলিশ হাজির হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন বৈধভাবে অবস্থান করা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। কেউ কেউ বৈধ কাগজ-পত্র থাকা সত্বেও প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও জানা গেছে। বৈধ ব্যক্তিদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাউন্সিলর (শ্রম) মো. সায়েদুল ইসলামের যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ধরপাকড় মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের রুটিন কাজ। কাগজপত্র ঠিক থাকলে ছেড়ে দেয়ার কথা। তার পরেও যদি ধরে নিয়ে যায়, সঠিক কাগজপত্র নিয়ে হাই কমিশনে যোগাযোগ করা হলে অবশ্যই তাদের ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।
গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধদের বৈধ হওয়ার জন্য রি-হিয়ারিং নামক কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই রি-হিয়ারিং কর্মসূচির আওতায় প্রায় এক লাখ ৮৮ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি রেজিস্ট্রেশন করেন এবং এর মাঝে ভিসা পেয়েছেন ১৮ হাজার বাংলাদেশি। বাকি এক লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি এখনও ভিসা পাওয়ার অপেক্ষায়। তবে এ রি-হিয়ারিং প্রোগ্রাম গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হলেও আবার চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ হওয়ার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে রি-হিয়ারিং প্রোগ্রামের পাশাপাশি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হয় অবৈধ শ্রমিকদের অস্থায়ী কাজের নিবন্ধন ই-কার্ড কর্মসূচি, যা এখনো চলমান এবং শেষ হবে আগামী ৩০জুন। তারপরও চলছে ধরপাকড় ও হয়রানি।
এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পুত্রজায়ায় ইমিগ্রেশনের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশসহ মালয়েশিয়ায় শ্রমিক সরবরাহকারী অন্য দেশগুলোর দূতাবাসের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ায় বসবাসকারি কাগজপত্রহীন বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার শেষ সুযোগ অ্যানফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড) হলো সাময়িক পাস। রাষ্ট্রদূত আরও জানান, বৈধ কাগজপত্র পেতে মাইইজির অধীনে চলমান রি-হিয়ারিং প্রকল্পে এক লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশি রেজিস্ট্রেশন করেছেন। আর অন্য সব দেশ মিলিয়ে করেছে মাত্র ১০ হাজার। এছাড়া নতুন প্রকল্প ই-কার্ড এখন পর্যন্ত ৬১ জন বাংলাদেশি পেয়েছেন। অন্য সব দেশ মিলিয়ে পেয়েছে ৩৯টি।
তিনি বলেন, যাদের শারীরিক সমস্যা আছে, যাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা চলমান রয়েছে এবং যেসব কর্মী বৈধভাবে কোনো কর্মক্ষেত্রে কর্মরত ছিলেন কিন্তু তারা মালিকপক্ষকে অবহিত না করে পালিয়ে গেছেন এবং অফিস তার বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশনে অভিযোগ দাখিল করেছে, এই তিন শ্রেণির শ্রমিকরা ই-কার্ড করতে পারবে না।
আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত নিবন্ধন চলবে। কোনোভাবেই এই সময় বর্ধিত করা হবে না। যারা এই সুযোগের পরেও ই-কার্ড করবেন না তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং অবৈধ শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ধারণা করা হচ্ছে ই-কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ লাখ অবৈধ শ্রমিক নিবন্ধিত হবে।