নিউজ ডেস্ক:
মহাকাশে এই প্রথম এমন একটি তারা বা নক্ষত্রের হদিশ পাওয়া গেল, যে তারই ‘সন্তান’ একটি গ্রহের ভয়ে সদা থরহরিকম্প থাকে! আমাদের সূর্যের মতো সেই তারাটিও তার সৌরমণ্ডলে গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে সংসার করছে। তবে সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণায়মান গ্রহ-উপগ্রহ যেমন নিরীহ, ওই নক্ষত্রটির ক্ষেত্রে তা মোটেও নয়। তারই সৌরজগতের একটি গ্রহ নিয়ে সর্বতা আতঙ্কে থাকে ‘এইচএটি বা হ্যাট-পি-২’ নামের নক্ষত্রটি। কারণ হঠাৎ হঠাৎ ভয়ঙ্কর গতি নিয়ে নক্ষত্রটির একেবারে কাছে ছুটে আসছে ‘এইচএটি বা হ্যাট-পি-২বি’ নামের গ্রহটি। যে কোন সময় যেন ঘটে যেতে পারে সংঘর্ষ। এ কারণেই এ গ্রহটিকে বলা হচ্ছে অবাধ্য সন্তান বা প্রবলেম চাইল্ড।
মহাকাশের এই ‘প্রবলেম চাইল্ড’ বিশ্বের তাবড় তাবড় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ব্রহ্মাণ্ডে যতগুলি সৌরমণ্ডলের খোঁজ পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, তাদের সবক’টিতেই বাধ্য, ভদ্র-সভ্য ‘সন্তানসন্ততি’ গ্রহ, উপগ্রহদের নিয়ে সংসার করছে সূর্য মহাশয়। এই প্রথম এমন কোনও সৌরমণ্ডলের হদিশ মিলল, যেখানে কোনও তারা বা নক্ষত্রকে আতঙ্কগ্রস্থ করে রেখেছে তারই এক ‘অবাধ্য সন্তান’! এই সাড়াজাগানো আবিষ্কারটি করেছেন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) আর্থ, অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস বিভাগের এক গবেষকদল। যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল ছাত্র জুলিয়েন দ্য উইট। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘প্ল্যানেট-ইনডিউসড স্টেলার পালসেশন্স ইন হ্যাট-পি-টু’জ এক্সেন্ট্রিক সিস্টেম’। যা একেবারে হালে ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান-জার্নাল ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।
ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) আর্থ, অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস বিভাগের গবেষক জুলিয়েন দ্য উইট বলেছেন, ‘‘পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ আলোকবর্ষ দূরত্বে রয়েছে ওই সৌরমণ্ডলটি। তার নক্ষত্রটির নাম- ‘এইচএটি বা হ্যাট-পি-২’। সেই তারাটিকে ঘিরে পাক মারছে আমাদের বৃহস্পতির চেয়েও কম করে ৮ গুণ ভারী একটি গ্রহ (এক্সোপ্ল্যানেট)। এখন পর্যন্ত যতগুলো প্রচণ্ড ভারী ভিনগ্রহের হদিশ মিলেছে, এই ‘প্রবলেম চাইল্ড’ তাদের অন্যতম। আমাদের বৃহস্পতির মতোই ওই গ্রহটি আপাদমস্তক গ্যাসে ভরা (গ্যাস জায়ান্ট)। তার নাম- ‘এইচএটি বা হ্যাট-পি-২বি’। আর এই গ্রহটি ভীষণ রকমের পাগলাটে। নিজের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে তার তারাটিকে পাক মারতে গিয়ে কোনও সময় হুট করে চলে আসছে তার নক্ষত্র ‘এইচএটি বা হ্যাট-পি-২’-র কাছে। আবার তার পরেই সাঁ করে আপন খেয়ালে চলে যাচ্ছে নক্ষত্র থেকে অনেক দূরে। আমরা এটাকেই বলি, গ্রহদের ‘এক্সেন্ট্রিক অরবিট’। নাসার স্পিৎজার স্পেস ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ ঘণ্টা ধরে নজর রেখে মহাকাশে এই প্রথম কোনও ‘প্রবলেম চাইল্ডে’র হদিশ পেল। ওই নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতাও বাড়া-কমা করছে ৮৭ মিনিট অন্তর। তার গ্রহটি তাকে পাক মারে যে ছন্দে, যে গতিতে, ঠিক সেই তালে, সেই ছন্দে!’’
ম্যাসাটুসেটস থেকে ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) আর্থ, অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর গ্যাব্রিয়েলা মার্কোস ই-মেইলে ভারতের জনপ্রিয় পত্রিকা আনন্দবাজারকে লিখেছেন, ‘‘এত ভারী এই ভিনগ্রহটি, আমাদের মনে হচ্ছে, যে কোনও সময়ে সে ঠেলে সরিয়েও দিতে পারে তার ‘জন্মদাতা’ তারা বা নক্ষত্রটিকে। এর আগে আমরা কখনও দেখিনি কোনও ভিনগ্রহের ভয়ে থরথর করে কাঁপছে তার ‘জন্মদাতা’ নক্ষত্র। ‘এইচএটি বা হ্যাট-পি-২বি’ নামের গ্রহটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের এত দিনের যাবতীয় ধ্যানধারণাই বদলে দিল। এর কক্ষপথটিও অদ্ভুত ভুতুড়ে। হঠাৎ হঠাৎ যেন তারাটির প্রায় গায়ের ওপরে এসে পড়তে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে তার তাপমাত্রা হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। আবার হুট করে চলে যাচ্ছে অনেক দূরে। ফলে বরফের মতো তার (গ্রহ) গা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।