গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বাগেরহাটের শরণখোলা থানার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের মৃত কাশেম মাঝির ছেলে বাচ্চু মাঝি (৪৮), চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানার দুধপাতিলা গ্রামের মৃত গোলাপ মণ্ডলের ছেলে হাসেম আলী (৪৮), দর্শনা থানার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত রইচ উদ্দিনের ছেলে সালামত (৫৫), চুয়াডাঙ্গা সদর থানার বোয়ালমারী গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে শাহাবুদ্দিন ওরফে শুকচাঁন (৩০), জীবননগর থানার সন্তোষপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম ওরফে ইব্রা (৫০) এবং একই থানার মৃগমারী গ্রামের নওশাদ মণ্ডলের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৪৭)।
শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় ৬ সদস্য গ্রেফতারের বিষয়টি জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ডুগডুগী, শিয়ালমারীসহ মোট ১১টি পশুর হাট। ঈদ-উল-আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ডুগডুগী, শিয়ালমারী, আলমডাঙ্গা, সরোজগঞ্জ, পশুর হাটগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে। পশুর হাটগুলো শুরু হওয়ার সাথে সাথেই প্রায় প্রতি বছরই অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। এছাড়াও পরিবহনগুলোতেও বাসের যাত্রীবেশী অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সাধারণ যাত্রীদের অজ্ঞান করে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়ার সংবাদও বিরল নয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় গত ১৬ই মে ফরিদপুরের ইউনুস শেখ শিয়ালমারী হাটে, ২৩শে মে জীবননগর-কালীগঞ্জ সড়কের জীবননগর পশু হাসপাতালের সামনে সানোয়ার হোসেন (৪৫), ৩০শে মে আলমডাঙ্গার শমসের আলী শিয়ালমারী হাটে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে। সর্বশেষ অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা গত ৩রা জুন ডুগডুগী পশুর হাটে নোয়াখালীর জসিম উদ্দিনকে টার্গেট করে চেতনানাশক পুষ করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় হাতেনাতে বাগেরহাটের বাচ্চু মাঝি নামের একজন গ্রেফতার হয়। এই ঘটনায় গত ৩রা জুন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানায় মামলা রুজু করা হয়।
মামলা রুজুর পর চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান, সাধারণ মানুষের ঈদ উদযাপনকে নির্বিঘ্ন ও উৎসব মুখর করতে এবং সাধারণ মানুষ যাতে অজ্ঞান/মলম পার্টির প্রতারক শ্রেণির অপরাধীদের দ্বারা সর্বস্বান্ত না হয়। এছাড়া অজ্ঞান পার্টির কারণে কোন ধরনের জীবনহানি যাতে না ঘটে ইত্যাদি বিভিন্ন কার্যক্রমকে সামনে রেখে একটি নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছেন। নিরাপত্তা পরিকল্পনায় প্রতিটি পশুর হাটে, প্রতিটি বড় বড় শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় পোশাকধারী পুলিশের ডিউটির পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশ নিয়োগ করে এসব অপরাধীদের ফাঁদ পেতে ধরার নির্দেশনা প্রদান করেন।
পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনা এবং পরামর্শক্রমে অজ্ঞান পার্টির এই চক্রকে গ্রেফতারের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর থানা, জীবননগর থানা, দর্শনা থানা এবং দামুড়হুদা থানাসহ চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের একাধিক টিম অভিযান পরিচালনা করতে থাকে এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় তাদেরকে হাতেনাতে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে কৌশলে ফাঁদ পাতা হয়। এই ফাঁদে আটকা পড়ে অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় ৬ সদস্য গ্রেফতার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটা একটা সংঘবদ্ধ চক্র। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে টার্গেট ভিকটিমকে চেতনানাশক প্রয়োগ করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। তদন্তকালে আমরা এই চক্রের বেশ কিছু নাম পেয়েছি তাদের চলমান কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছে। এই চক্রের সকল সদস্যকে আইনের আওতায় আনার জন্য সুষ্ঠ তদন্ত এবং গ্রেফতার অভিযান চলবে। জনগণের জান-মাল রক্ষায় চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ সর্বদা আপনাদের পাশে রয়েছে।’