নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীর আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার জায়গায় আবাসন প্রতিষ্ঠান কনকর্ডের তৈরি ১৮তলা ভবন আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এতিমখানাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। এ সংক্রান্ত মামলার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সমাজকল্যাণ সচিবের মাধ্যমে কনকর্ডকে ওই বহুতল ভবনটি এতিমখানাকে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক স্বাক্ষরের পর গত ২১ ডিসেম্বর ১০৭ পৃষ্ঠার রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার কথা জানান রিটকারি আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
রায়ে বলা হয়েছে, ওই ভবন সরকারি জায়গায় করা হয়েছে। এই ভূমিসহ ওখানে থাকা সম্পত্তি ও সব স্থাপনা এতিমখানা ও এতিমদের সুবিধার্থে এবং ব্যবহারের উদ্দেশে এতিমখানার অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হলো। রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বহুতল ভবনটি এতিমখানাকে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশের পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে কনকর্ডের কাছ থেকে বহুতল ওই ভবনের দখল বুঝে নিতেও সমাজকল্যাণ সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে ব্যর্থ হলে কনকর্ড ও তার ব্যক্তিদের উচ্ছেদের মাধ্যমে ওই ভবন ও সম্পত্তির অবস্থান নিতে সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে কনকর্ড, এতিমখানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যদি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এতিম বা এতিমখানার স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ, জালিয়াতি ও প্রতারণা করে থাকে, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ১৮তলা ভবন স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। সেই অনুলিপি আমরা হাতে পেয়েছি। তবে হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে কনকর্ড কর্তৃপক্ষ আপিল করতে পারবে বলেও জানান তিনি।
২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মামলার রায় দিয়েছিলেন। যেখানে আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার জায়গায় আবাসন প্রতিষ্ঠান কনকর্ডের তৈরি ১৮তলা বিল্ডিং এতিমখানাকে হস্তান্তরের আদেশ দেন।
একইসাথে হাইকোর্টের রায়ে চার দফা নির্দেশনাও দেয়া হয়। নির্দেশনাগুলো হলো- আজিমপুর এতিমখানার সম্পত্তি সংরক্ষণ করতে হবে, এতিমখানার সম্পত্তি হস্তান্তর সম্পর্কে ২০১৩ সালের ২২ জুলাইয়ের দলিল এবং ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিলের আমমোক্তার নামা দলিল বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এতিমখানার জায়গায় কনকর্ডের তৈরি ১৮তলা বিল্ডিং এতিমখানার পক্ষে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে এবং কনকর্ডকে ৩০ দিনের মধ্যে স্থাপনা ও সম্পত্তি এতিমখানাকে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
কনকর্ড নির্দেশ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে সরকারকে সম্পত্তি বুঝে নেয়া এবং এতিমখানার প্রয়োজনে ডেভলপ করার নির্দেশ দেয়া হয়।
রিটকারি আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ১৯০৯ সালে ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ এতিমখানা স্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে সরকারের কাছ থেকে আজিমপুর সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন সময় জমি লিজ নিয়ে পরিচালনা করে আসছে। ২০০৩ সালের ২২ জুলাই এতিমখানার সভাপতি শামসুন্নাহার ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জি এ খান আহসান উল্লাহ এতিমখানার দুই বিঘা জমি ডেভেলপার কোম্পানি কনকর্ডের কাছে হস্তান্তর করেন।
এতিমখানার সম্পত্তি অবৈধ হস্তান্তর সংক্রান্ত প্রতিবেদন সে সময় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে চারজন ছাত্রের পক্ষে রিট পিটিশন দায়ের করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরবর্তীতে ওই রিট পিটিশনে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) পক্ষভুক্ত হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, এতিমখানার সম্পত্তি সরকারের নিকট থেকে লিজ নেয়া এবং লিজ চুক্তিতে এতিমখানা সম্প্রসারণের জন্য বিনামূল্যে দেয়া হয়। শর্ত ছিল প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো কাজে জমি ব্যবহার করা যাবে না। তা সত্ত্বেও এতিমখানার সভাপতি ও সেক্রেটারি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হয়ে এতিমখানার সম্পত্তি কনকর্ড গ্রুপের নিকট হস্তান্তর করেন। রিটে এই হস্তান্তরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জমি এতিমখানাকে বুঝিয়ে দেয়ার দাবি করা হয়