শিরোনাম :
Logo পলাশবাড়ীতে ভূয়া সমিতির নামে পৌনে এক কোটির টাকার গাছ বিক্রি করে অর্থ লুটপাট Logo কুবিতে এক সাংবাদিক সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ Logo পঞ্চগড়ে ভিডাব্লিউবি কার্ড বিতরণ নিয়ে লিখিত অভিযোগ মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন Logo সিরাজগঞ্জে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক পথচারী নিহত, চারজন আহত Logo ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলন কচুয়ায় ফসলি জমি নষ্ট করে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন, বাধা দিলে প্রাণনাশের হুমকি  Logo চাঁদপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশাল সমাবেশ Logo ইবিতে “ক্যারিয়ার গাইডলাইন ফর ফ্রেশার্স ২০২৫” অনুষ্ঠিত  Logo বেলকুচি আনন্দমেলায় টিকিট বাণিজ্য সময় বাড়ানোর আবেদন Logo বিনামূল্যে বাইসাইকেল পেয়ে উচ্ছ্বসিত চাঁদপুর সদরের ৫২ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা  Logo বীরগঞ্জে ৪টি ইউনিয়ন বাল্যবিবাহ ও ১টি ইউনিয়ন শিশু শ্রম মুক্ত ঘোষণা

ফের গাছ কেটে ভবনের আয়োজন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের গাছ কেটে গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার গাছ কেটে ভবন নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের পিছনে ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সামনের জঙ্গলটি। ইতিমধ্যে নির্ধারিত স্থানটিতে সুতা টাঙিয়ে লাল পতাকা ঝুলিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের পাশের জলাশয় ভরাট করে গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের উদ্যোগ নেয় গত প্রশাসন। তবে সেসময় শিক্ষার্থী এবং পরিবেশবিদদের বাধার মুখে বর্তমান প্রশাসন ওই স্থানটি থেকে সরে এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ১২ টি স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ৬টি ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন হল নির্মাণ করা শেষ। এসব স্থাপনা করতে গিয়ে এক হাজারের বেশি গাছ কাটা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা বাধা দিলেও প্রশাসন কর্নপাত না করে ভবন নির্মাণ চালিয়ে গেছিলো। তবে আওয়ামী সরকারের পতনের পর নতুন প্রশাসন এই প্রথমবারের মত গাছ কেটে ভবনের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত প্রশাসন যখন যত্রতত্র গাছ কেটে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করতেন তখন বর্তমান প্রশাসনে যারা আছেন তারা বিরোধিতা করতেন। কিন্তু এই প্রশাসন দায়িত্বে এসে এমন উদ্যোগ নিয়েছে যা অপ্রত্যাশিত।
তবে প্রশাসন বলছে, টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (টিএমসি) ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে। জায়গাটিতে ভবন করা হলে পরিবেশের তুলনামূলক কম ক্ষতি হবে৷

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বলেন, মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন না করে কোনো প্রকার গাছ কেটে ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবেনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য ৫৯ কোটি টাকা ব্যায়ে ছয়তলা বিশিষ্ট ১ লাখ ৩০ হাজার বর্গফুটের ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনটি নির্মাণ করতে অন্তত ৬০ টি গাছ কাটা পড়বে। যারমধ্যে সেগুন, তালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে।

জায়গাটিতে ভবন নির্মাণ করা হলে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হবে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বন্যপ্রাণী‌ আলোকচিত্রী অরিত্র সাত্তার। তিনি বলেন, এই অঞ্চলটি বর্তমানে শিয়াল, বেজি, বাগডাস, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর নার্সারি গ্রাউন্ড হিসাবে কাজ করছে এবং তার চেয়ে বড় বিষয় এই অঞ্চলটি জুড়ে একটি বন্যপ্রাণী রাস্তা তৈরি হয়েছে যা দিয়ে বন্যপ্রাণীরা খাদ্যস্থলের দিকে এগোতে পারে যেখানে তারা শিকার থেকে শুরু করে। বিভিন্ন রকম খাবার সংগ্রহে ঘুরে বেড়ায়। স্থানটি নষ্ট হলে তারা সংকটে পরতে পারে।

এ বিষয়ে টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নাসিরউদ্দিন বলেন, টিএমসি কমিটি, বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে যে জায়গাটি ছিল সেটা পরিবেশবিদদের আপত্তি ছিল তাই নতুন করে এই স্থানটি টিএমসি ঠিক করে দিয়েছে। স্থানটিতে ভবন নির্মাণের স্বার্থে ৪০ টির মত গাছ কাটা পড়বে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতির দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সেটার জন্য যথাযথ কমিটি টিএমসি রয়েছে। তারা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরিমর্শ করে জায়গাটি নির্ধারণ করেছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পলাশবাড়ীতে ভূয়া সমিতির নামে পৌনে এক কোটির টাকার গাছ বিক্রি করে অর্থ লুটপাট

ফের গাছ কেটে ভবনের আয়োজন

আপডেট সময় : ০৫:০৩:৪৪ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের গাছ কেটে গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার গাছ কেটে ভবন নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের পিছনে ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সামনের জঙ্গলটি। ইতিমধ্যে নির্ধারিত স্থানটিতে সুতা টাঙিয়ে লাল পতাকা ঝুলিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের পাশের জলাশয় ভরাট করে গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের উদ্যোগ নেয় গত প্রশাসন। তবে সেসময় শিক্ষার্থী এবং পরিবেশবিদদের বাধার মুখে বর্তমান প্রশাসন ওই স্থানটি থেকে সরে এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ১২ টি স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ৬টি ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন হল নির্মাণ করা শেষ। এসব স্থাপনা করতে গিয়ে এক হাজারের বেশি গাছ কাটা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা বাধা দিলেও প্রশাসন কর্নপাত না করে ভবন নির্মাণ চালিয়ে গেছিলো। তবে আওয়ামী সরকারের পতনের পর নতুন প্রশাসন এই প্রথমবারের মত গাছ কেটে ভবনের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত প্রশাসন যখন যত্রতত্র গাছ কেটে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করতেন তখন বর্তমান প্রশাসনে যারা আছেন তারা বিরোধিতা করতেন। কিন্তু এই প্রশাসন দায়িত্বে এসে এমন উদ্যোগ নিয়েছে যা অপ্রত্যাশিত।
তবে প্রশাসন বলছে, টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (টিএমসি) ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে। জায়গাটিতে ভবন করা হলে পরিবেশের তুলনামূলক কম ক্ষতি হবে৷

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বলেন, মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন না করে কোনো প্রকার গাছ কেটে ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবেনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য ৫৯ কোটি টাকা ব্যায়ে ছয়তলা বিশিষ্ট ১ লাখ ৩০ হাজার বর্গফুটের ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনটি নির্মাণ করতে অন্তত ৬০ টি গাছ কাটা পড়বে। যারমধ্যে সেগুন, তালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে।

জায়গাটিতে ভবন নির্মাণ করা হলে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হবে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বন্যপ্রাণী‌ আলোকচিত্রী অরিত্র সাত্তার। তিনি বলেন, এই অঞ্চলটি বর্তমানে শিয়াল, বেজি, বাগডাস, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর নার্সারি গ্রাউন্ড হিসাবে কাজ করছে এবং তার চেয়ে বড় বিষয় এই অঞ্চলটি জুড়ে একটি বন্যপ্রাণী রাস্তা তৈরি হয়েছে যা দিয়ে বন্যপ্রাণীরা খাদ্যস্থলের দিকে এগোতে পারে যেখানে তারা শিকার থেকে শুরু করে। বিভিন্ন রকম খাবার সংগ্রহে ঘুরে বেড়ায়। স্থানটি নষ্ট হলে তারা সংকটে পরতে পারে।

এ বিষয়ে টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নাসিরউদ্দিন বলেন, টিএমসি কমিটি, বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে যে জায়গাটি ছিল সেটা পরিবেশবিদদের আপত্তি ছিল তাই নতুন করে এই স্থানটি টিএমসি ঠিক করে দিয়েছে। স্থানটিতে ভবন নির্মাণের স্বার্থে ৪০ টির মত গাছ কাটা পড়বে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতির দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সেটার জন্য যথাযথ কমিটি টিএমসি রয়েছে। তারা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরিমর্শ করে জায়গাটি নির্ধারণ করেছে।