৮ মার্চ: ফরিদপুরে সাইকেলে ঘোরানোর কথা বলে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, কিশোর আটক (যমুনা টেলিভিশন)
৮ মার্চ: শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, সালিসে দেড় লাখ টাকা জরিমানা, বাকি ৫৮ হাজার (আজকের পত্রিকা)
৯ মার্চ: এবার গাজীপুরে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, ভিডিও ধারণও করলো ধর্ষক (ঢাকা ট্রিবিউন)
৯ মার্চ: সীতাকুণ্ডে সৈকতে বন্ধুকে বেঁধে রেখে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মায়ের মামলা (আজকের পত্রিকা)
৯ মার্চ: নরসিংদীতে ৩ দিন আটকে রেখে গর্ভবতী নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ (যমুনা টেলিভিশন)
২০২৪ সালে ধর্ষণের শিকার ৪০১ নারী
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সারা দেশে ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৪০১ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৪ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন সাত জন। ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ১০৯ জন। এর মধ্যে একজনকে ধর্ষণচেষ্টার পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালে ২১ জন নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
আসকের পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা যায়, ২০২৪ সালে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন অন্তত ১৬৬ জন নারী। উত্ত্যক্তকরণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন দুই জন ও খুন হয়েছে তিন জন নারী। এ ছাড়া ২০২৪ সালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ৫২৩ জন নারী। এর মধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন ২৭৮ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১৭৪ জন।
এমএসএফ এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালে এক হাজার ১৫১ জন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৮১ জন নারী ও ৩৩১ জন শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮২ জন নারী, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে সাত জনকে, ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন ১০৮ জন ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৩৮ জন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নারী নির্যাতনের মাত্রা কমলে আমরা খুব খুশি হতাম। কিন্তু এটা কমার কোনো লক্ষণ দেখছি না। বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সমাজে নারী বিদ্বেষী মনোভাব বাড়ছে। নারীবিরোধী গোষ্ঠী আবার তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা ধর্মকে নারীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে, নারীর চলাচলে বাধা দিচ্ছে, নারীর পোশাকের প্রতি আঙুল তুলছে, ধর্মকে হিংসা‑বিদ্বেষের কারণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার যিনি নারী দিকে আঙুল তুলছেন তাকে ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এগুলো তো ভালো লক্ষণ না।
নিরাপত্তা রক্ষায় হিমশিম সরকার ‘কঠোর’ হতে চায়
ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষিত হওয়ার পর থেকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশের নানা প্রান্তে আন্দোলনে মুখর হয়েছে ছাত্র-জনতা।
মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনার তিন দিন পর শনিবার চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ মামলার শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজিব শেখের বড় ভাই রাতুল শেখ (২০) এবং তাদের মা জাবেদা বেগমকে (৪০) আসামি করা হয়েছে। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে শিশুটি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
উদ্ভুত পরিস্থিতে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মামলার তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে। ধর্ষণের মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার করার বাধ্যবাধ্যকতা রাখা হচ্ছে। রবিবার এ তথ্য জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
অংশীজনদের সঙ্গে কিছু পরামর্শ করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে রবিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা। মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত ও বিচারে যাতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না হয়, সে ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট যত সরকারি দপ্তর আছে, তারা সর্বোচ্চ সজাগ থাকবে।
যৌন নিপীড়ন মোকাবিলায় হটলাইনও চালু করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। রবিবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পক্ষে থেকে আমি জানাচ্ছি যে, রাস্তা-ঘাটে যে যৌন নিপীড়ন হয়, হয়রানি হয়- এই ব্যাপারে প্রতিকার নিশ্চিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দ্রুত একটা আলাদা হটলাইন প্রদান করা হবে। সম্ভবত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (নম্বর) জানিয়ে দেওয়া হবে; রাস্তা-ঘাটে যেকোনো ঘটনা ঘটলে হটলাইনে ২৪ ঘণ্টা টাইম থাকবে অভিযোগ দেওয়ার জন্য।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমি আগের সরকারের সময়ের সঙ্গে বর্তমান সময়ের তুলনা করতে চাই না। শুধু বলতে চাই, ১৫ বছরের জঞ্জাল ৫ মাসে সমাধান চাইলে হবে না। আমরা চেষ্টা করছি। পুরুষরূপী এই হায়েনাদের বিরুদ্ধে কিভাবে বিচার নিশ্চিত করা যায় সেই চেষ্টা চলছে।
নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেছেন, এই রিপোর্ট করা ঘটনাগুলো শুধু হিমশৈলের চূড়া মাত্র। ভয় ও সামাজিক চাপের কারণে অনেক বেশি ভুক্তভোগী নীরবে ভুগছে, অভিযোগ দায়ের করতে পারছে না। আমাদের বিচার ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নারী ও শিশুদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
শিক্ষার্থীদের লাঠি মিছিল ও প্রতিবাদ
ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে উত্তাল সারাদেশ। বিভিন্নস্থানে মিছিল-সমাবেশ করে ধর্ষক ও নিপীড়কদের কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাঠিমিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে গতকাল রবিবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। বাঁশের ছোট ছোট লাঠি হাতে রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, শাহবাগ মোড় ঘুরে মিছিলটি আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
এই কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্য ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এই কর্মসূচি থেকে ধর্ষণসহ অব্যাহত নারী নিপীড়ন প্রতিরোধে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অপসারণ এবং দ্রুত ট্রাইব্যুনালে সব ধর্ষণ-কাণ্ডের বিচারসহ ৯ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রবিবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে রবিবারের প্রথম প্রহরে সব হল থেকে বের হয়ে এসে প্রতিবাদ জানানোর পর সকাল থেকেই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ধর্ষকের বিচারের দাবিতে নিজ নিজ বিভাগের ব্যানারে বিক্ষোভ করছেন। এ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও। এছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ হয়েছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণের হয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন সমীর কুমার দে। এই প্রতিবেদনের সব ধরনের দায়ভার ডয়চে ভেলের।